গ্রামীণ বিদ্যুতায়নে কেমন কাজ করছে মোদী সরকার, জেনে নিন খুঁটিনাটি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে আগামী ১ হাজার দিনের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎহীন ১৮ হাজার ৪৫২টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবেন। সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পালিত হয়েছে?
ক্ষমতা দখলের পর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে আগামী ১ হাজার দিনের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎহীন ১৮ হাজার ৪৫২টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবেন। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তরফে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ যোগানের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
এই প্রতিুশ্রুতিকে রক্ষা করতে শুধুমাত্র বিদ্যুতের যোগান বাড়ালেই হবে, এমনটা নয়। একইসঙ্গে সেই উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রামীণ এলাকায় পৌঁছেও দিতে হবে।
কিছুদিন আগেই লাল কেল্লায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সগর্বে 'দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা' শুরু করেন। গ্রামীণ ভারতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে এই কেন্দ্রীয় প্রকল্প পথ চলা শুরু হয়েছে। এর আগে কেন্দ্রের গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের জন্য 'রাজীব গান্ধী বৈদ্যুতিকরণ যোজনা' চালু ছিল।
GARV যোজনা
GARV পোর্টালে গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন নিয়ে কী ধরনের নীতি নেওয়া হয়েছে, সেই সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া বর্তমানে কাজ কতটা এগোল তা নিয়ে জানা যেতে পারে। দেশের যেকোনও নাগরিক হাতে স্মার্টফোন থাকলেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামের বিদ্যুতায়ন নিয়ে তথ্য জানতে পারবেন।
যেমন কবে বিদ্যুৎ পৌঁছবে, লোকাল লাইনম্যানদের সম্পর্কে তথ্য, বিদ্যুতের খুঁটির ছবি ইত্যাদি জানা ও দেখা যাবে। এখন প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছচ্ছে কিনা সেটাও জানা সম্ভব বলে দাবি করা হচ্ছে।
হাজার দিনের মধ্যে লক্ষ্যপূরণ
আগামী বছর ২০১৮ সালের মে মাসের মধ্যে বাকী থাকা দেশের ১৮ হাজার ৪৫২টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫৯৮টি গ্রামে (৭৪ শতাংশ) বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। তবে সমীক্ষা বলছে 'রাজীব গান্ধী বৈদ্যুতিকরণ যোজনা'-র যে গতি ছিল তার চেয়ে শ্লথ গতি মোদী সরকারের 'দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা'-র।
২০০৫ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ১ লক্ষ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছিল। গত দু'বছরে সেই গতি অনেক শ্লথ হয়ে গিয়েছে। আগের সরকারের আমল কেন গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন থমকে গিয়েছিল তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। একইসঙ্গে বেশ কিছু সমস্যাও ছিল যা আজও রয়ে গিয়েছে।
যেমন কিছু গ্রাম রয়েছে একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায়। যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছনো বেশ কঠিন কাজ। এছাড়া মোট ৭২০০টি বিদ্যুৎহীন গ্রাম রয়েছে যেগুলি মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায়। তার মধ্যে ৫৯৩০টি গ্রামে সরকার বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের হার আগের হারকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি।
তবে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিলেই সরকারের কাজ শেষ হয়ে যায় না। বিদ্যুতের পরিকাঠামো তৈরি করলাম ও সেটিকে গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করলাম, তার বাইরেও বড় কাজ রয়েছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন, সারা দেশে মোট ৬ লক্ষের বেশি গ্রামের মধ্যে মাত্র ১.৬৫ লক্ষ গ্রাম এমন রয়েছে যেখানে সমস্ত জায়গায় বিদ্যুতের সুবিধা রয়েছে।
লক্ষ্যে পৌঁছতে
সারা দেশে সব ঘরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দিতে বিদ্যুৎ মন্ত্রকের আরও উদ্যোগ নিতে হবে। যোগান যেমন বাড়ছে, সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাহিদাও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ফলে উৎপাদনের হার বাড়াতে হবে। কিছুটা পথ পেরনোর পরে কেন্দ্রের চেয়ে রাজ্য সরকারগুলির দায়িত্ব অনেক বেশি। ফলে গোটা প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের প্রয়োজন। একমাত্র তাহলেই সারা দেশ আলোয় ভরে উঠবে।