ব্রেক্সিটের ভাগ্য নির্ধারণের লক্ষ্যে ব্রিটেনে আজ নির্বাচন, ফলপ্রকাশ শুক্রবার
ব্রিটেনে বহুল আলোচিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আজ। আজকের নির্বাচনের ফলাফলই নির্ধারিত করবে দেশটির ভবিষ্যৎ। কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকাই এর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে না, দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতির ভালো-মন্দও জানা যাবে আজকের নির্বাচনের ফলাফলে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়লে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ বা টোরি দল সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। তবে আশা ছাড়ছে না লেবার পার্টিও। কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের আশঙ্কাও আছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় শুরু হয়ে রাত ১০ টায় ভোট শেষ হবে। ২৬ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত যারা নিবন্ধন করেছেন তারাই ভোট দিতে পারবেন আজ। আর যারা পোস্টাল ভোট দিতে চেয়েছেন তাদেরকেও ২৬ নভেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে নিবন্ধন করতে হয়েছে। যারা করেছেন তাদের ভোট আজ রাত ১০টার মধ্যে গ্রহণ করা হবে। আর যারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন তাদেরকে সকাল ৭টা থেকে ১০ টার মধ্যে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে। একজনের ভোট আরেকজন দেওয়ার জন্য ৪ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে জানাতে হয়েছে। তবে জরুরি প্রক্সি ভোট দিতে আজও আবেদন করা যাবে। রাত ১০টায় বুথ ফেরত জরিপের ফল জানা যাবে। আর কাল শুক্রবার ভোটের ফলাফল ঘোশণা করা হবে।
টোরিদের বড় জয়ের অর্থ হবে ব্রেক্সিট। ২০১৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে আগাম নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠনে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু থেরেসা সরকারের শরিক ডিইউপি টোরি দলকে ব্রেক্সিটে পুরোপুরি সমর্থন দেয়নি। ফলে ব্রেক্সিট কার্যকর করতে তিনি ব্যর্থ হন। সেই পথেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার লক্ষ্যে বরিস জনসনও আগাম নির্বাচনের ডাক দেন। সেই মতো ৬৫০টি আসনে ভোট হবে আজ। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনে ৩২৬ আসনে জয় পেতে হবে। টোরি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবে। আর না পেলে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ শঙ্কার মধ্যে পড়বে।
কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে আবার ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্মুখীন হবে ব্রিটেন। সেই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে হয় পদত্যাগ করতে হবে না হয় জোট সরকার গঠনের চেষ্টা চালাতে হবে। তবে সেই ক্ষেত্রে সরকার গঠন ক্ষেত্রে কঠিন পরিস্থিতির মস্সুখীন হত হবে বরিসকে। কারণ ইতোমধ্যে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টির নেতারা ঘোষণা করেছেন যে, তাঁরা টোরি কিংবা নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সঙ্গে জোট করবেন না।
বরিস জনসন সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে হয়ত লেবার পার্টি সরকার গঠনের চেষ্টা চালাবে। সেক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। লিব ডেম নেতা জো সুইনসন বলেছেন, তারা লেবার পার্টির সঙ্গে জোট করতে রাজি, তবে নেতা জেরেমি করবিনকে সরে দাঁড়াতে হবে। যদি তিনি পদত্যাগ না করেন তা হলে তাঁকে ছোটো দল প্লেইড সিমরু, দ্য গ্রিনস এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির সঙ্গে জোট করতে হতে পারে। তবে এজন্য স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার জন্য দ্বিতীয় গণভোটের আয়োজনের শর্ত মেনে নিতে হবে করবিনকে। এদিকে লেবার পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ব্রেক্সিটের পথে হাঁটবে না ব্রিটেন। যদিও করবিন জানিয়েছেন, তিনি সরকারে এলে এই ইস্যুতে দ্বিতীয় গণভোট করবেন।
এদিকে বুধবার হওয়া সমীক্ষায় এগিয়ে টোরি। ইউগভ নামের এক সমীক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, টোরি এই নির্বাচনে ৩৩৯ আসনে জিততে পারে। অন্যদিকে লেবার পার্টির ঝুলিতে যেতে পারে ২৩১টি এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা পেতে পারে ১৫টি আসন। সেক্ষেত্রে বরিস জনসনের দল লেবার পার্টির ২২টি আসন দখলে নিতে পারে। ভোটের ৪৩ শতাংশ টোরি ও ৩৪ শতাংশ পেতে পারে লেবার পার্টি। তবে মনে করা হচ্ছে যে, টোরি দল ৩১১ আসনের কমও পেতে পারে। সেক্ষেত্রে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট নিশ্চিত হয়ে যাবে। উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডস নির্বাচিত নয়। কিছু প্রধান দল এখানে প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়। কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে।