মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে গিয়ে কী করলেন চন্দ্রবাবু নাইডু! ইডি-র জালে টিডিপি সাংসদ
ইডি-র জালে এবার টিডিপি সাংসদ তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রাক্তন মন্ত্রী ওয়াইএস চৌধুরী। ৫,৭০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে চন্দ্রবাবু নাইড়ু-র এই সাংসদের বিরুদ্ধে।
ইডি-র জালে এবার টিডিপি সাংসদ তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রাক্তন মন্ত্রী ওয়াইএস চৌধুরী। এক- দু'কোটি নয় ৫,৭০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে চন্দ্রবাবু নাইড়ু-র দলের এই সাংসদের বিরুদ্ধে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তল্লাশি চালিয়ে এমন কিছু নথি আটক করেছে তাতে ৫,৭০০ কোটি টাকার প্রতারণার বিষয়টি সামনে এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ইডি-র অভিযোগ, ওয়াই এস চৌধুরী এবং তাঁর সহযোগীরা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়়িত।
চৌধুরীকে ২৭ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইডি-র অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার এই তল্লাশি-তে ইডি হায়দরাবাদে সাংসদ ওয়াই এস চৌধুরীর বাড়ি থেকে ছয়-টি হাইএন্ড লাক্সারি কার-ও আটক করেছে। যারমধ্যে রয়েছে ফেরারি, ল্যান্ডরোভার, মার্সেডিজ বেঞ্চ। এই গাড়িগুলি ওয়াই এস চৌধুরীর অভিযুক্ত শেল কোম্পানিজ-এর নামে কেনা হয়েছিল বলে দাবি করেছে ইডি।
শেল কোম্পানিজ হল ব্যবসায়িক মহলের একটি পরিভাষা। শেল কোম্পানি-র আওতায় তৈরি সংস্থাগুলি-কে নন-ট্রেডিং সংস্থা বলে বিবেচিত করা হয়। এই সংস্থাগুলিকে মূলত ভবিষ্য়তের জন্য অর্থনৈতিক সঞ্চয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ফলে এই সংস্থার নামে প্রচুর স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি জমা করে রাখা হয় ভবিষ্যতের জন্য। অর্থনীতির ভাষায় যাকে ইংরাজি-তে 'ডরম্যান্ট'-ও বলা হয়।
ইডি-র অভিযোগ, টিডিপি সাংসদ এমন ১২০টি জাল শেল কোম্পানিজ-এর সঙ্গে জড়িত, যারা ব্যাঙ্ক প্রতারণায় অভিযুক্ত। সুজানা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ-এর সঙ্গে তাঁর যাবতীয় সংযোগের কথা অস্বীকার করেছেন চৌধুরী। টিডিপি সাংসদ দাবি করেছেন, ২০১০ সালেই তিনি এই সংস্থার যাবতীয় এক্সিকিউটিভ পদ ছেড়ে দিয়েছেন। এমনকী ইডি যে ছয়টি গাড়ি আটক করেছে তারমধ্যে তিনটি ব্যক্তিগত নামে কেনা হয়েছে। তিনটি গাড়ি সংস্থার নামে। কিন্তু, যে সব সংস্থার নামে এই গাড়িগুলো কেনা হয়েছে সেগুলি কোনওভাবেই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত নয় বলেও দাবি করেছেন ওয়াই এস চৌধুরী। প্রতারণায় অভিযুক্ত সুজানা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ তাঁর মাত্র ১ শতাংশ প্রতীকী শেয়ার রয়েছে বলেও দাবি করেছেন ওয়াই এস চৌধুরী।
শুক্রবার ইডি হায়দরাবাদ ও দিল্লির ৮টি স্থানে তল্লাশি চালায়। এই তল্লাশি অভিযানেই একটি স্থান থেকে ব্য়াঙ্ক প্রতারণায় যুক্ত থাকার নথি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেছে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। বহুদিন থেকেই ওয়াই এস চৌধুরীর এই সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অনিয়মের অভিযোগ জানিয়ে আসছে ইডি, সিবিআই এবং ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইনটেলিজেন্স।
ইডি-র দাবি, যে নথিগুলি উদ্ধার হয়েছে তার সঙ্গে বেস্ট অ্য়ান্ড কমপোনেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টস লিমিটেড, চেন্নাই এবং সুজানা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ-এর বেশকিছু সংস্থা যার চেয়ারম্য়ান টিডিপি সাংসদ ওয়াই এস চৌধুরী, সেটা প্রমাণিত হয়েছে।
বেস্ট অ্য়ান্ড কমপোনেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টস লিমিটেড বা বিসিইপিএল-র নামে ব্য়াঙ্গালোরে ৩৬৪ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছিল সিবিআই। একটি ঋণে-র ক্ষেত্রে সংস্থা ডিফল্টার হয়ে যাওয়ায় সিবিআই এই অভিযোগ দায়ের করে। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, অন্ধ্রা ব্য়াঙ্ক ও কর্পোরেশন ব্যাঙ্ক থেকে অভিযুক্ত সংস্থা মোট ৩৬৪ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল। অক্টোবর মাসে এই অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই ব্য়াঙ্গালোরে তল্লাশি চালিয়ে ১২৬টি রবার স্ট্যাম্পও উদ্ধার করেছিল। যেগুলিতে এক একটি শেল কোম্পানিজের নাম খোদাই করা ছিল। তদন্তে বিসিইপিএল-এর ডিরেক্টররা সংস্থার চেয়ারম্যান ওয়াই এস চৌধুরীকে অভিযুক্ত করেছিলেন বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্র। তদন্তেই নাকি প্রকাশ পায় যে বিসিইপিএল-এর ছাতার তলায় ওয়াই এস চৌধুরী সুজানা গ্রুপ কোনম্পানিজের মধ্যে শতাধিক শেল কোম্পানিজ খুলে আর্থিক প্রতারণা করেছেন।
টিডিপি সাংসদ এবং আর্থিক প্রতারণায় অভিযুক্ত ওয়াই এস চৌধুরীর দাবি, কী ভাবে ৬,০০০ কোটি টাকার প্রতারণা এবং ১২০টি জাল সংস্থার হিসাব দেওয়া হচ্ছে তা বোধগম্য হচ্ছে না। যে বিল্ডিং-এ বিসিইপিএল-এর দফতর সেখানে অন্যান্য একাধিক পরামর্শদাতার অফিসও রয়েছে বলে দাবি করেছেন এই টিডিপি সাংসদ। বিসিইপিএল-এর ডিরেক্টররা নিজেদের বাঁচাতে এখন তাঁকে ফাঁসিয়ে দিতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেছেন এই টিডিপি সাংসদ।