বিস্কুট খেয়ে, পায়ে হেঁটে বিশাখাপত্তনম থেকে মেদিনীপুরে ফিরছেন চার শ্রমিক
বিস্কুট খেয়ে, পায়ে হেঁটে বিশাখাপত্তনম থেকে মেদিনীপুরে ফিরছেন চার শ্রমিক
করোনা ভাইরাসের জন্য দেশজুড়ে লকডাউন। এরই মাঝে বিভিন্ন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার হিড়িক লেগে গিয়েছে। কিছু কিছু রাজ্য শ্রমিকদের জন্য বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করলেও এখনও এমন কিছুজন রয়েছেন যাঁরা এই লকডাউনে পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরছেন। সেরকমই পশ্চিমবঙ্গের চারজন ডেকরেটার্স, যাঁরা এই তপ্ত গরমে, খাবার ও কোনও পরিবহন ছাড়াই বিশাখাপত্তনম থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পায়ে হেঁটে ফিরছেন।
২১দিনের লকডাউনকে সমর্থন
যদিও তাঁরা ২১ দিনের লকডাউনের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সম্প্রতি এই লকডাউনের জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। অন্যদিকে বিশাখাপত্তনম থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ১৬ হয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের দুরত্ব ৭৭০ কিমি। বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বরে পৌঁছেছেন সুদীপ দলেই, রঞ্জিত পাত্র, কমল কিষাণ মণ্ডল ও বাপু আদি। তাঁরা জানিয়েছেন যে তাঁরা যেমন ক্লান্ত নন তেমনি প্রধানমন্ত্রীর ওপর রেগেও নেই। কারণ গোটা দেশের ভালোর জন্যই এই লকডাউনের সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন।
পুরো রাস্তা হেঁটেই অতিক্রম চারজনের
এই চারজন এক বিক্রেতার কাছে ডেকরেটার্সের কাজ করেন। বিয়ে বা এনগেজমেন্ট, জন্মদিনের পার্টির ডেকরেশন করেন তাঁরা। কিন্তু লকডাউনের কারণে কোনও কাজ না থাকায় তাঁদের চলে যেতে বলা হয়েছে। সুদীপ দলাই বলেন, ‘এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে এই লকডাউনের নির্দেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মোদীর পাশে দাঁড়িয়েছি এবং তাঁর নির্দেশকে অনুসরণ করতে চাই কিন্তু এখন রাজ্য ছেড়ে নিজেদের বাড়িতে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই আমাদের কাছে।' সুদীপ ও তাঁর বন্ধুরা বিশাখাপত্তনমে খাওয়ার খরচ দিতেন ও তাঁদের অধীনস্ত কর্মীরা বাড়ি ভাড়া দিতেন। রঞ্জিত পাত্র বলেন, ‘আমাদের এক কর্মচারি জানিয়েছিল যে সে গাড়ির বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে কিন্তু তা হয়নি। আমরা লিফটও চেয়েছি কিন্তু তা কিছু কিলোমিটার পর্যন্ত। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ভুবনেশ্বরের গোটা রাস্তাটাই আমরা পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেছি।'
বিস্কুট খেয়েই কাটিয়েছেন গোটা সফরে
লকডাউনের কারণে হাইওয়ের ধারের অধিকাংশ হোটেলই বন্ধ করে রাখা ছিল। রাস্তার ধারের দোকান থেকে তাঁরা শুধু বিস্কুট কিনে খেয়েছেন। রোজ তাঁরা রাত ১টা পর্যন্ত হাঁটতেন ও ঘুমোনোর পর আবার ভোর ৪টে থেকে সফর শুরু করতেন। তাঁরা আরও লক্ষ্য করেছিলেন যে ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের অন্যান্য জায়গাগুলির তুলনায় ভুবনেশ্বরে ট্রাফিক বেশি ছিল। সুদীপ দলাই বলেন, ‘আমরা ভাগ্যশালী যে আমাদের এক ব্যক্তি খাবার ও জল দিয়ে সাহায্য করেন। আমরা এখনও খাবারের প্যাকেট খুলিনি তা রাতের জন্য বাঁচিয়ে রেখে দিয়েছি।'
পরিবার নির্ভরশীল
তাঁদের জীবিকার ওপরই নির্ভর পরিবার। তাই লকডাউন শেষ হয়ে গেলে পশ্চিমবঙ্গেই কোনও কাজ করে নিজের ও পরিবারের পেট চালানোর ব্যবস্থা করবেন। সুদীপের পরিবারে রয়েছেন সাতজন ও রঞ্জিতের বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন।
প্রতীকী ছবি