লকডাউনে দামি সবজি–ফলের চাহিদা নেই, ব্রকোলি ও স্ট্রবেরি খাচ্ছে গবাদি পশু
লকডাউনে দামি সবজি–ফলের চাহিদা নেই, ব্রকোলি ও স্ট্রবেরি খাচ্ছে গবাদি পশু
করোনা ভাইরাসের জন্য লকডাউন গোটা দেশে। ২১ দিনের লকডাউনের জন্য বন্ধ হোটেল–রেস্তোরাঁ। আর তার ফলে চাহিদা কমেছে বিভিন্ন ধরনের দামি সবজি ও ফলের। আর যেটুকু চাহিদা রয়েছে, গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় সেটুকুও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তা বলে এই সবজি–ফল নষ্ট হবে, একদমই নয়। বরং তা খাওয়ানো হচ্ছে গবাদি পশুদের। ব্রকোলি ও স্ট্রবেরি এখন খাচ্ছে গবাদি পশুরা।
গরমকালে মূলত এইসব সবজি ও ফলের চাহিদা তুঙ্গে থাকে, কিন্তু লকডাউনের কারণে ভারতে খামারজাত সরবরাহের চেন ব্যহত হয়েছে, তাই কৃষকরা বাজারে কোনও পণ্য পাঠাতে পারছেন না। করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশের লক্ষাধিক কৃষকের পণ্যের চাহিদা এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে। ভারতে ইতিমধ্যে এই সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত ১৯০০ জন ও বুধবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।
গবাদি পশুদের খাওয়ানো হচ্ছে স্ট্রবেরি ও ব্রকোলি
মুম্বই থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে সাতারার চাষি অনিল সালুঙ্কে তাঁর ২ একর জমিতে ফলানো স্ট্রবেরি ও ব্রকোলি খাইয়ে দিচ্ছেন গবাদি পশুদের। এই সময় এই দ্রব্যের চাহিদা থাকে আকাশছোঁয়া। মূলত আইসক্রিমের কোম্পানি ও বিদেশি পর্যটকরা স্ট্রবেরি কেনেন। কিন্তু বর্তমানে সব বন্ধ। অনিল ভেবেছিলেন এই গরমে অন্তত ৮ লক্ষ টাকা রোজগার করবেন। কিন্তু বর্তমানে বিনিয়োগ করা আড়াই লক্ষ টাকাও উঠবে কিনা তা নিয়েই চিন্তায় তিনি। তিনি বলেন, ‘পর্যটক ও আইসক্রিম সংস্থাগুলি স্ট্রবেরির প্রধান ক্রেতা, কিন্তু এখন কোনও পর্যটকই নেই।' অনিল সালুঙ্কে এখন প্রায় আড়াইশো হাজার টাকার উৎপাদনের খরচও উদ্ধার করতে পারেননি, কারণ বড় শহরগুলিতে পণ্য পরিবহন করা শক্ত হয়ে পড়েছে।
বন্ধ আঙুর রপ্তানি
বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা মুনিশাম্পা তাঁর বাগিচায় ফলানো ১৫ টন আঙুর জঙ্গলে ফেলে দিয়ে এসেছেন। এই আঙুর ফলাতে ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল তাঁর। কিন্তু এই বাজারে পরিবহণ বন্ধ থাকায় কিছু পাঠানো যাচ্ছে না। এমনকি গ্রামের লোকেদের বিনামূল্যে আঙুর নিয়ে যেতে বললেও কেউ নিতে আসেননি। তাই বাধ্য হয়েই ফেলে দিয়েছেন তিনি। ভারতের আঙুর ইউরোপেও রপ্তানি করা হয়, কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে করোনার ভয়াল থাবার কারণে আঙুর কেনার ওপরও কোপ পড়েছে, জানিয়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় আঙুর রপ্তানিকার সাহয়াদ্রি খামারের দানেশ আগলে।
পচে যাচ্ছে দামি ফুল, ফেলে দিতে হচ্ছে লেটুস–বাসিল
একই অবস্থা ফুলের উৎপাদনেও। বিয়ের মরসুমে দামি ফুলের বিশাল চাহিদা থাকে। কিন্তু বর্তমানে সব বন্ধ। শচীন শেলার নামের এক ফুল উৎপাদনকারী জানিয়েছেন, আগে যে ফুল ২০ টাকার নীচে বিক্রি হত না, সেই ফুলই এখন ১ টাকাতেও কেউ কিনছে না। বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানও বন্ধ। তাই যে মরসুমে রোজগার হওয়ার কথা, সেই মরসুমেই ২ একর জমির ফুল ফেলে দিতে হয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন রাহুল পাওয়ারও। তাঁর ২ একরের ফুলের ফার্ম রয়েছে, কিন্তু এখন সব অনুষ্ঠান যেহেতু বন্ধ তাই তিনি সব ফুলগুলি ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিভিন্ন রেস্তোরাঁতে বাসিল, লেটুস পাতা প্রভৃতি সরবরাহ করেন অজয় যাদব। কিন্তু বর্তমানে সেগুলোও তাঁকে ফেলে দিতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, গ্রামের লোকেদের বললেও কেউ নিয়ে যাননি। এইসব পাতার নামই তাঁরা শোনেননি। রান্না করা তো দূর। তাই বাধ্য হয়েই ফেলে দিতে হয়েছে।