কোভিড দ্বিতীয় ওয়েভের জন্য শুধু নাগরিকরাই দায়ি নয়, বিজ্ঞান বলছে অন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ
কোভিড দ্বিতীয় ওয়েভের জন্য শুধু নাগরিকরাই দায়ি নয়
ইতিহাস যদি পড়ে থাকেন এবং মহামারি বিদ্যাকে যদি একটু হলেও বোঝোন তবে জানবেন যে মহামারি এত সহজে গায়েব হয়ে যায় না। ১৯১৮–২০ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির সময়, যার কারণে নিঃশ্বাস–প্রশ্বাসের রোগ দেখা গিয়েছিল, সেটির মোট চারটে ওয়েভ ছিল। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। প্রথম ভাইরাসের উত্তরাধিকারি দ্বিতীয় ওয়েভ যা আরও মারাত্মক।
দ্বিতীয় ওয়েভ ভয়ঙ্কর হতে চলেছে
করোনা ভাইরাস মহামারির সময়, যা এক বছরের কম সময় বিশ্বে বিরাজ করেছে, অধিকাংশ দেশেই ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ওয়েভ মাথা চাড়া দিলেও, বেশিভাগ দেশে এখন দ্বিতীয় ওয়েভ নেতৃত্ব দিচ্ছে, যার ফলে বৃহৎ আকারে করোনা কেসের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অনেক দেশেই নতুন করে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। ভারতে প্রাথমিক ও কড়া লকডাউন দেশজুড়ে কোভইড-১৯-এর প্রথম ওয়েভকে দেরি করিয়েছিল। তবে দ্বিতীয় ওয়েভের হাত থেকে ভারত রক্ষা পাবে এরকমটা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। শুধু প্রশ্ন হল এই দ্বিতীয় ওয়েভ কবে এবং তা কতটা বড় হতে চলেছে?
কোভিডের দ্বিতীয় ওয়েভ
ভারত ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ওয়েভের মধ্যে প্রবেশ করে ফেলেছে। দেশে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষের গণ্ডি পেরিয়েছে। এটা সঠিক সময় এটা জিজ্ঞাসা করার যে দায়িত্বজ্ঞানহীন নাগরিক, যাঁরা কোভিড-যথাযথ আচরণ অনুসরণ করেননি, তাঁদেরকে একা এই সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ি করা যেতে পারে অথবা এই ভাইরাসের আচরণ কেমন তা বুঝে আমাদের স্বাস্থ্য পদ্ধতিকে আরও শক্তিশালী এবং মহামারিকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য নীতিগুলির উন্নতি করতে বিজ্ঞান আমাদের পথ দেখাবে। এ প্রসঙ্গেই মহামারি বিদ্যার বিষয়গুলিকে অবশ্যই বুঝতে হবে, যা কোভিড-১৯-এর মতো সংক্রমক রোগ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই অনুযায়ী ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের কৌশলগুলি বিকাশ করে তার অন্তর্দৃষ্টি দেয়।
প্রত্যেক ব্যক্তি ভাইরাসের বহনকারী হতে পারে
প্রতিটি ব্যক্তি সার্স-কোভ-২-এর হোস্ট। প্রতিটি ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা, বর্হিপ্রকাশের ঝুঁকি এবং পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ইস্যু প্রমাণ করে যে ওই ব্যক্তি করোনার জন্য আদৌও দায়ি কিনা। পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস, পেশা, খাদ্যভ্যাস ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা, বয়স, লিঙ্গ, অন্যান্য কারণগুলি সহ ব্যক্তির আচরণই প্রমাণ করে যে সে এই মারণ রোগে আক্রান্ত হবে কিনা। মহামারি বিদ্যার ট্রায়াড পরিবেশটির বাহ্যিক কারণগুলিকে বোঝায়। এর মধ্যে লোকেদের বসবাস, ভিড়, স্যানিটাইজেশন এবং স্বাস্থ্যসেবা উপলব্ধ হওয়ার অবস্থা অন্তর্ভুক্ত। জনস্বাস্থ্য নীতিগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবার মধ্যেই উপলব্ধ। যার মধ্যে টেস্টিং, ট্রেসিং, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন সহ অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত। যা ভাইরাস ও মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করবে। সরকারের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত হস্তক্ষেপ এবং নীতিগুলি পরিবেশের কারণকে পরিমার্জন করতে পারে, যা ফলস্বরূপ রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
ব্যক্তি বা এজেন্টের আচরণে বদল
মহামারি প্রতিক্রিয়া কৌশলগুলির এখন মহামারির তিনটি উপাদানের সঙ্গে মোকাবিলা করা উচিত। এজেন্ট বা ব্যক্তির আচরণে একটু বদল আনতে হবে। কিন্তু প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা কার্যকরভাবে এবং যথাযথ নীতিগত হস্তক্ষেপ ভাইরাসের সংক্রমণকে হ্রাস করতে পারে, মিউটেশনের সম্ভাবনাকে কমাতে পারে কারণ এই ভাইরাস এখন ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। এরপর যখন নাগরিকদের করোনা বিধি মানার পালা আসে, তখন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের কৌশলকে প্রয়োগ করে কেন এই কোভিড বিধি মানার প্রয়োজন রয়েছে তা বিস্তাবিতভাবে বোঝাতে হবে। অধিকাংশ নাগরিকই বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। কোভিড-১৯ বিধি গ্রহণ করতে হলে আগে তার গুরুত্ব যথাযথভাবে বুঝতে হবে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি
যদিও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নির্বাচনের জনসভা-মিছিল ও কুম্ভ মেলার কারণে শত শত মানুষ তাতে যোগ দিচ্ছে। যার ফলে খুব সহজেই ভাইরাস ও মানব শরীরের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। এখানে অভিন্ন নীতি প্রয়োজন, বিশেষত যখন লোকদের বাজার এড়াতে বলা হয়, যা তুলনামূলকভাবে সেখানে কম ভিড় দেখা যায়। তবে এক্ষেত্রে জনগণ ও নীতি নির্ধারককারীদের একসঙ্গে বিজ্ঞানের সহায়তা নিয়ে নীতি তৈরি করতে হবে, যা বাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে।
দ্বিতীয় ঢেউ কোনও মতে পেরোলেও অপেক্ষা করছে আরও ভয়ঙ্কর করোনার তৃতীয় ঢেউ, আশঙ্কার কথা শোনালেন গবেষকরা