৭০ বছর পর শোনা যাবে চিতার গর্জন, কেন দেশ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল চিতা
আপনি কি জানেন শেষ তিনটি চিতার ভবিষ্যৎ কী হয়েছিল,
নামবিয়া থেকে ভারতে আটটি চিতা নিয়ে আসা হয়েছে। তারমধ্যে তিনটি পুরুষ চিতা রয়েছে ও পাঁচটি মহিলা চিতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে এই চিতাগুলোকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৫২ সাল থেকে ভারতে কোনও চিতা ছিল না। বলা যেতে পারে ভারতে চিতার অবলুপ্তি ঘটে। কিন্তু চলতি বছরে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে ভারতের জঙ্গলে চিতাক গর্জন শোনা যাবে।
ভারতে শেষ তিনটি চিতার ভবিষ্যৎ
১৯৫২ সালে ভারত আনুষ্ঠানিতভাবে ঘোষণা করে, দেশে চিতার অবলুপ্তি ঘটেছে। কিন্তু এত হিংস্র ও মাংসাশী প্রাণীর দেশ থেকে অবলুপ্তি কেন ঘটল? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অতিরিক্ত শিকার, বাসস্থানের অবলুপ্তির জেরেই চিতার দেশ থেকে অবলুপ্তি ঘটেছে। অনুমান করা হয় মধ্যপ্রদেশের কোরিয়ার মহারাজা রামানুজ প্রতাপ সিং দেও দেশের শেষ তিনটি চিতাকে ১৯৪৭ সালে শিকার করেন। তারপর থেকেই দেশে চিতার অবলুপ্তি ঘটে।
ভারতে চিতার হ্রাসের কারণ
বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির (বিএনএইচএস) প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট দিব্যভানুসিংহের লেখা বই "দ্য এন্ড অফ এ ট্রেইল - দ্য চিতা ইন ইন্ডিয়া" অনুসারে ১৫৫৬ সাল থেকে ১৬০৫ সাল পর্যন্ত মুঘল সম্রাট আকবর রাজত্ব করেছিলেন। সেই সময় ভারতে চিতার সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজারটি। কৃষ্ণসার এবং গজেল শিকারের জন্য চিতা ব্যবহার করা হতো। জানা গিয়েছে, চিতার সাহায্যে আকবর পুত্র জাহাঙ্গির প্রায় ৩০০টি হরিণ শিকার করেছিলেন। এই চিতাগুলোকে মূলত বন্দি করে রাখা হতো ও হরিণ শিকারের কাজে ব্যবহার করা হতো। বন্দি থাকার কারণে চিতাগুলোর প্রজনন হ্রাস পায়। ব্রিটিশ শাসকরাও ভারতে চিতার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। ব্রিটিশ শাসকরা মাঝে মাঝেই ঘোড়ার গাড়িতে করে চিতা শিকারে যেতেন।
দ্রুত কমতে থাকে চিতার সংখ্যা
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকেই ভারতে দ্রুত চিতার সংখ্যা কমতে থাকে। ভারতে চিতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ১৯১৮ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০টি চিতা আমদানি করা হয়। ব্রিটিশ ভারতের অবসান ও স্বাধীন ভারতের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে মধ্য ভারতে চিতা রক্ষার জন্য বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কালে এশিয়াটিক সিংহের পরিবর্তে দেশে চিতা নিয়ে আাসার জন্য ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। ইরানের চিতাগুলো মূলত ছোট হয়। এছাড়া ইরানের চিতার সংখ্যা দ্রুত কমতে শুরু করে। ইরানের চিতার সঙ্গে আফ্রিকার চিতার জিনগন পার্থক্য রয়েছে। সমস্ত দিক বিচার করে, ইরানর বদলে ভারত আফ্রিকা থেকে চিতা আনার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে দেশে আটটি চিতা
১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে আটটি চিতা মুক্ত করা হয়। এই আটটি চিতাকে নামবিয়া থেকে বিশেষ বিমানের সাহায্যে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় পার্কে চিতাদের বাসস্থানের জন্য সর্বোত্তম জায়গা হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই পার্কটিতে কৃষ্ণসার হরিণ ও চিঙ্কারা হরিণের সংখ্যা বেশ ভালো। এরফলে চিতার খাদ্যের অভাব এখানে হবে না বলে বন দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। ১৯৪৭ সালে মহারাজা রামানুজ প্রতাপ সিং দেও ভারতে চিতা প্রজাতির শেষ প্রাণীটিকে শিকার করে। ১৯৫২ সালে এশিয়াটিকের তরফে জানানো হয়, ভারত থেকে চিতার অবলুপ্তি হয়েছে।