সতর্ক হোন, আসতে পারে প্রলয়! জেনে নিন কী করবেন, কী না করবেন
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) ঝড়ের আগে, চলাকালীন ও পরে কী করণীয় কী না করণীয় সে ব্যাপারে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তর, পূর্ব ও মধ্য ভারতের এক বিস্তৃর্ণ অংশে মাঝে মাঝেই প্রবল ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাত-আঁধি আঘাত হানছে। ইতিমধ্যেই এর প্রকোপে শতাধিক মানুষের প্রাণ গিয়েছে, আহত হয়েছেন অনেকে, বিপুল ক্ষতি হয়েছে। আঁধির দাপট দেখে কারোর কারোর মনে হয়েছে যেন প্রলয় এসেছিল! আগামী কয়েকদিনে আবারও এরকম ধ্বংসাত্মক ঝড় হওয়ার সম্ভাবনার কথা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে নয়াদিল্লির আবহাওয়া দপ্তর। এ অবস্থায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) ঝড়ের সময় কী করণীয় কী না করণীয় সেব্যাপারে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। ঝড়ের আগে, ঝড় চলাকালীন ও ঝড়ের পরে এই তিন সময়ের জন্যই আলাদা আলাদা প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছে তারা। দেখে নেওয়া যাক এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে তারা কী নির্দেশ দিয়েছে।
ঝড়ের আগে থেকেই ব্যবস্থা নিন। তাতে বিপদের সম্ভাবনা কমে। এসময় কী করবেন, কী করবেন না:
১. সুক্ষিত থাকতে এবং সারভাইভ যাতে করতে পারেন তার জন্য একটি জরুরী অবস্থায় লাগে সেসব জিনিসের কিট প্রস্তুত রাখুন।
২. ঘরের জানালা এবং দরজা বন্ধ রাখুন।
৩. আগে ভাগেই বাড়ী মেরামত করে রাখুন, ধারালো কিছু যাতে খোলা পড়ে না থাকে, সেদিকে নজর রাখুন।
৪. আসবাবপত্র, কিংবা ময়লার বালতির মতো যে বস্তুগুলি বাড়ির বাইরে রাখা থাকে সেগুলি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে রাখুন, নাহলে সেগুলো দূরে উড়ে গিয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৫. পচে যাওয়া গছের ডাল বা গাছের ভেঙে যাওয়া ডালপালা যা এখনও হয়তো গাছেই আটকে আছে, সেগুলি সরিয়ে ফেলুন। নাহলে সেগুলো নিচে পড়ে কারোর আঘাতের কারণ হতে পারে বা অন্য ক্ষতিও হতে পারে।
৬. সর্বশেষ আবহাওয়া আপডেট এবং সতর্কবার্তা পেতে নজর রাখুন রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র বা ওয়েবসাইটের খবরে।
৭. শিশুরা এবং পোষ্যরা বাড়ির ভেতরে আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
ঝড়ের সময়ই বিপদ ঘটার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা। তাই সতর্কতাও এসময়ই বেশি। ঝড় চলাকালীন কী করবেন এবং কী করবেন না:
১. স্থানীয় আবহাওয়ার আপডেট এবং সতর্কবার্তাগুলিতে নজর রাখুন।
২. বাড়ির ভিতরে থাকুন। বারান্দা বা পর্চে দাঁড়াবেন না। যথাসম্ভব যাতায়াত এড়িয়ে চলুন।
৩. অপ্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের প্লাগ খুলে দিন (এতে প্রধান বিদ্যুত সরবরাহের লাইন থেকে সেগুলি বিচ্ছিন্ন থাকবে, নাহলে বজ্রপাতের সময় লাইনে অতিরিক্ত বিদ্যুত এসে বিদ্যুতপৃষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে) তার ওয়ালা টেলিফোন ব্যবহার করবেন না। মোবাইল বা তারহীন ফোন নিরাপদ।
৪. জলের এবং বিদ্যুতের পাইপগুলি এসময় ছোঁবেন না। রানিং ওয়াটার ব্যবহার করবেন না। এসময় স্নান বা শাওয়ার এড়িয়ে চলুন। এই পাইপগুলি দিয়েও বিদ্যুতপৃষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. টিনের ছাদ বা ধাতব পাত লাগানো কাঠামোগুলির থেকে দূরে থাকুন।
৬. দরজা, জানালা, ফায়ারপ্লেস, বাথ টাব বা কোন বিদ্যুত পরিবাহীর থেকে দূরে থাকুন।
৭. গাছের কাছাকাছি বা নিচে আশ্রয় নেবেন না।
৮. যদি আপনি কোন গাড়ি / বাস বা আচ্ছাদিত গাড়ির ভিতরে থাকেন, তবে সেখান থেকে নামবেন না।
৯. ধাতব বস্তু ব্যবহার করবেন না, বিদ্যুত / টেলিফোন লাইন থেকে দূরে থাকুন।
১০. সুইমিং পুল, হ্রদ, ছোট নৌকায় থাকলে অবিলম্বে অন্যত্র আশ্রয় নিন।
ঝড় কাটলেও বিপদ এখনও কাটেনি। ঝড়ের পর কী করবেন এবং কী করবেন না:
১. ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।
২. আবহাওয়া এবং ট্র্যাফিক আপডেটের তথ্য বা নির্দেশ পেতে স্থানীয় রেডিও বা টিভি স্টেশনগুলিতে নজর রাখুন।
৩. শিশু, মহিলা, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করুন।
৪. পড়ে থাকা গাছ বা বিদ্যুতের তার থেকে দূরে থাকুন এবং অবিলম্বে নিকটবর্তী তহসিল / জেলা সদর দপ্তরে রিপোর্ট করুন।
বুধবার সকালেও সাড়ে ন'টার দিকে দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটি শক্তিশালী আঁধি আছড়ে পড়েছে। ঝোড়ো হাওয়া এবং প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর তাপমাত্রার পারদ অনেকটা পড়ে যায়। এ ছাড়া জিন্দ, রোহতক, পানিপথ, আলওয়ার, বাগপথ, মীরাট ও আলিগড়েও বজ্রবিদ্যুত সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।