২৬/১১ এর সেই অভিশপ্ত দিনের ঘটনা থেকে জঙ্গি কাসাবের পরিণতির তথ্য জানুন টাইমলাইনে
সেই রক্তাক্ত দিনের কথা ভারত ভোলেনি, ভুলবেও না। নারকীয় সেই জঙ্গি হানার ৯ বছর বাদে একবার ফিরে দেখা যাক সেদিনের ঘটনা
২০০৮ সালের ২৬/১১ এর মুম্বই হামলার ঘটনায় এক লহমায় শেষ হয়ে যায় বহু প্রাণ। এক একটি প্রাণের সঙ্গে শেষ হয় কিছু স্বপ্ন, একাত্মবোধ। স্বজনহারার আর্তনাদ ভেঙে পড়ে বাণিজ্যনগরী মুম্বই। তছনছ হয় বহু ইমারত। আতঙ্ক গ্রাস করতে থাকে বহু শিশু মনে। সেই রক্তাক্ত দিনের কথা ভারত ভোলেনি, ভুলবেও না। নারকীয় সেই জঙ্গি হানার ৯ বছর বাদে একবার ফিরে দেখা যাক সেদিনের ঘটনা, তারপরেই বা কী কী হয়েছে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
শুরুর ঘটনা
লস্কর -ই-তৈবার ১০ জন জঙ্গি করাচি থেকে জলপথে ছুকে পড়ে মুম্বইতে। নিরাপত্তার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে রাতের অন্ধকারে সশস্ত্রভাবে তারা ঢোকে। ভারতে ঢোকার সময়ে জলপথে কিছু ভারতীয় মৎসজীবীকে মেরে তাদের ট্রলারে করে ভারতে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা।
এরপর চলে রক্তের হোলি খেলা
ভারতে
ঢুকেই
মুম্বইয়ের
একের
পর
এক
জায়গায়
এলোপাথারি
গুলি
করে
হত্যালীলা
চালাবার
পাশাপাশি,ট্রাইডেন্ট
তাজে
বিস্ফোরণ
চালায়
জঙ্গিরা।
ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস
মুম্বই শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম রেল স্টেশন সিএসটিতে ঢুকেই এলোপাথারি গুলি চালাতে থাকে পাক জঙ্গি অজমল কসাভ সহ বাকিরা। মুহুর্তে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় সব। রক্তের বন্যায় ভাসতে থাকে স্টেশন চত্বর। সেখানে মারা যান ৫৮ জন, আহত হন ১০৮ জন।
কামা হাসপাতালে হামলা
সিএসটি স্টেশনে রেলওয়ে দফতরে জঙ্গিদের ঢোকার চেষ্টা ব্যার্থ করে দেয় রেলের নিরাপত্তাকর্মীরা। তখনই লস্করের ওই জঙ্গিরা হামলা চালাতে থাকে মুম্বইয়ের কামা হাসপাতালে।
হামলার বিবরণ
কামা হাসপাতালে সঙ্গে থাকা জঙ্গিকে নিয়ে কাসাভ ঢুকতে যায়। সেখানেও নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে তারা পিছু হটলেও, পরে হাসপাতাল তাক করে গ্রেনেড ছুঁড়তে থাকে জঙ্গিরা। এছাড়াও পুলি জিপ লক্ষ্যকের কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় কাসাভারা। সেখানেই শহীদ হন পুলিশ অফিসার হেমন্ত করকারে, বিজয় সালাসকার, অশোক কামতে।
লিওপোল্ড ক্যাফে
২৬/১১ এর অভিশপ্ত রাত সাড়ে নটা নাগাদ মুম্বইয়ের ব্যাস্ততম লিওপোল্ড ক্যাফেতে মেজাজে ছিলেন সেখানে উপস্থিত মানুষজন। আচমকা নিরীহ মানুষের ওপর সেখানে হামলা চালিয়া হত্যালীলায় মেতে ওঠে জঙ্গিরা।
তাজে হামলা
মুম্বই শহরের অন্যতম গর্ব তাজ প্যালেস হোটেল। সেখানের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা পেরিয়ে জঙ্গিরা হামলা চালাতে শুরু করে। এলোপাছারি গুলি, গ্রেনেড হামলা, বিস্ফোরণে সেখানের উপস্থিত বহুজনই ক্রমে ঢলে পড়েন মৃত্যুর মুখে।
ওবেরয় ট্রাইডেন্ট
ওবেরয় টরাইডেন্টে হোটেলেও সেই রাতে রক্তের হোলি খেলায় মাতে জঙ্গিরা। ৩০ জন সেখানেই মারা যান। কিন্তু এনএসজি-র তৎপরতায় সেখান থেকে অক্ষত ভাবে সেদিন বার করা গিয়েছিল ২৫০ জনকে।
নারিমাল হাউস
কোলাবার নারিমন পয়েন্টে ইহুদিদের বাসভূমিও জঙ্গিহামলার হাত থেকে বাদ যায়নি সেই রাতে। সেখানে ৯ জনকে বন্দি বানায় জঙ্গিরা। এক শিশুর সামনেই তার বাবা মাকে হত্য়া করে লস্কর জঙ্গিরা। পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টার প্রচেষ্টায় বাড়িটি থেকে বাকিদের উদ্ধার করতে এনএসজি।
হামলার ব্লুপ্রিন্ট পাকিস্তানে
গোট ঘটনার তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা প্রমাণ পান, এর নেপথ্যে রয়েছে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তৈবা। মূলচক্রী জাকিউর রহমান লকভির নাম বার বার উঠে আসে। এদিকে, মুম্বই হামলায় ৯ জন জঙ্গিকে খতম করলেও, প্রাণে বেঁচে যায় এক পাক জঙ্গি আজমল কাসাভ। তার স্বীকারোক্ত থেকে জানা যায় সে পাকিস্তানের বাসিন্দা। ফলে গোটা ঘটনার নেপথ্যে পাকিস্তানের হাত থাকার প্রমাণ আরও প্রকোট হয়। যদিও পাকিস্তান তা মানতে চায় নি।
আজমাল কাসাভ
২৬/১১ হামলার একমাত্র জীবিত জঙ্গি সেই সময়ে ছিল পাকিস্তানের ফরিদকোটের বাসিন্দা আজমল কাসাব। এই জঙ্গির বিরুদ্ধে তদন্তে দোষ প্রমাণ হওয়ায়, চলতে থাকে মামলা। কাসাভের বিরুদ্ধে মামলা চলে মুম্বই হাইকোর্টে। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর মামলা সুপ্রিমকোর্টে গেলে সেখানেও সেই নির্দেশ বহাল থাকে। এরপর ২১ নভেম্বর ২০১২ সালে পুনের জেলে বন্দি কাসাবের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বাস্তবায়িত করা হয়।