ওমিক্রনের মাঝেই নির্বাচন হোক, চায় উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক দলগুলি, আর্জি কমিশনের কাছে
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন ২০২২ আপডেট
দেশজুড়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের মাঝেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। আগামী বছরের গোড়ার দিকেই এই নির্বাচন হবে। কিন্তু যেভাবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, তাতে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশের সব প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচন পিছিয়ে না দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র, নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার ও অনুপ চন্দ্র পাণ্ডে সহ নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লখনউতে জাতীয় ও প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন রাজ্যের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে লখনউতে তিনদিনের সফরে এসেছেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জেপিএস রাঠোর, সমাজবাদী পার্টির (সপা) নরেশ উত্তম প্যাটেল, বহুজন সমাজ পার্টির (বসপা) প্রতিনিধি মেওয়ালাল গৌতম, কংগ্রেসের অনিল দুবো। এঁরা প্রত্যেকে কমিশনের কাছে আর্জি করেছেন যে কঠোর কোভিড–১৯ প্রোটোকলের মধ্যেই পূর্ব নির্ধারিত হওয়া বিধানসভা নির্বাচন হোক।
বৈঠকের পর সপার রাজ্য সভাপতি নরেশ উত্তম প্যাটেল বলেন, 'সপা নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছে যে রাজ্যে করোনা ভাইরাসের মামলার বৃদ্ধি রোধ করতে কোভিড যথাযথ আচরণের কঠোর প্রয়োগের সঙ্গে সময়সূচী অনুসারে বিধানসভা নির্বাচন করা হোক। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে এই সংশয় দূর করা উচিত।’ অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য ইউনিটের ভাইস–প্রেসিডেন্ট রাঠোর এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে বিধানসভা নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, 'বিজেপি পোল প্যানেলকে জানিয়েছে যে সম্ভাব্য তৃতীয় ওয়েভের কথা মাথায় রেখে পোলিং কেন্দ্রে অতিরিক্ত বন্দোবস্ত করা উচিত।’ বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়, 'আমরা তিনটে দাবি জানিয়েছি। প্রথমত, একজন ব্যক্তির একাধিক ভোট দেওয়া প্রতিরোধ করা, আমরা দাবি করেছি যে বোরখা পরে আসা মহিলাদের যথাযথভাবে যচাই করা হোক পোলিং স্টেশনে এবং এর জন্য প্রত্যেক বুথে মহিলা কনস্টেবল মোতায়েন করা হোক। আমাদের দ্বিতীয় দাবি, একটি পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি পোলিং বুথ হোক। আর তৃতীয় দাবি, করোনা মহামারি বিবেচনায় জনসমাগম এড়াতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে ভোট কেন্দ্র স্থানান্তর।’
করোনার বাড়বাড়ন্তে ২২ জানুয়ারি পুরভোট নিয়ে কমিশনকে ভেবে দেখার বার্তা বিজেপির! জবাব তৃণমূলের
অন্যদিকে, কংগ্রেস ভোটের আগে অতিরিক্ত মুখ্য সচিবকে (স্বরাষ্ট্র) পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে লেখা চিঠিতে কংগ্রেস বলেছে, 'এসিএস স্বরাষ্ট্র অবনীশ কুমার আওয়াস্তিকে নির্বাচন পরিচালনার কাজ থেকে বাইরে রাখা হোক। আদর্শ আচরণবিধির আগেই তাঁকে বদলি করা উচিত। এটি সর্বজনীন ডোমেনে রয়েছে যে একজন সরকারী কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও, তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের টুইটগুলিকে রিটুইট করেন। তিনি ক্রমাগত প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান ও সরকারি প্রকল্পের প্রশংসা করে রিটুইট করেন সেগুলি।’ আরএলডির জাতীয় সেক্রেটারি অনিল দুবে এ প্রসঙ্গে বলেন, '৮০ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা নাগরিক ও বিশেভাবে সক্ষম ভোটারদের তালিকা তৈরি করে নির্বাচন কমিশনের উচিত সব দলকে দেওয়া।’ অপরদিকে সপা দাবি করেছে যে রাজ্যে ৪০ লক্ষ ভোটার, যাঁরা ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে অথবা বিশেষভাবে সক্ষম। বসপা আদর্শ আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করার দাবি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের পাঁছ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই আবহে ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিতে চায় কমিশন। ওমিক্রন সংক্রমণের ক্ষেত্রে কোন রাজ্যে কী পরিস্থিতি, তা খতিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে যাওয়ার কথা কমিশনের আধিকারিকদের। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার যান তাঁরা। এর আগে এলাহাবাদ হাইকোর্টের তরফে উত্তরপ্রদেশ ভোট পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আর্জি জানানো হয়েছিল নির্বাচন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। করোনার জেরে এই আবেদনের পরই উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন নিয়ে দেখা দেয় একটা অনিশ্চয়তা।