দেশের চার রাজ্যে অক্সিজেন সঙ্কট তুঙ্গে, ৬ দিনে ১২ রাজ্যে চাহিদা বেড়েছে ১৮ শতাংশ
দেশের চার রাজ্যে অক্সিজেন সঙ্কট তুঙ্গে
দেশে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে এগিয়ে চলেছে। তার মধ্যে দেশের চারটি রাজ্য দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত ও হরিয়ানার হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেনের সঙ্কট ব্যাপকভাবে দেখা দেওয়ায় বৃহস্পতিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উচ্চ–পর্যায়ের বৈঠকে আধিকারিকদের নির্দেশ দেন যে অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বৃহস্পতিবারই রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে, চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যবহৃত অক্সিজেনের আন্তঃরাজ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কোথাও কোনও রকম বাধার সৃষ্টি যেন না হয়। যদি এই নির্দেশ না মানা হয় তবে তার জন্য দায়ি থাকবে রাজ্যগুলি।
১২টি রাজ্যে ১৮ শতাংশ চাহিদা বেড়েছে
দেশে দৈনিক সংক্রমণ ৩,১৪,৮৩৫-তে পৌঁছেছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ২,১০৪ জনের, যা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে কোনও দেশে এ ধরনের আক্রান্তের সংখ্যা দেখা যায়নি। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত ও হরিয়ানায় অক্সিজেনের সরবরাহ সঠিকভাবে হচ্ছে না, যার ফলে হাসপাতালগুলিতে সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। জানা গিয়েছে যে দিল্লিতে প্রতিদিন ২২০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে, কর্নাটক ও রাজস্থানে একদিনের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত থাকলেও অন্যান্য রাজ্যে অক্সিজেনের মজুত প্রায় শেষের দিকে এবং এই ঘাটতি যদি পূরণ না করা হয় তবে তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। এমনকী, দেশে ৮৩ শতাংশ সক্রিয় করোনা কেস বেড়ে যাওযার ফলে গত ৬ দিনে ১২টি রাজ্যে মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ শতাংশ।
বেশ কিছু রাজ্যে অক্সিজেনের চাহিদা
গত ১৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ রাজ্যগুলিকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, হরিয়ানা, কর্নাটক, রাজস্থান, পাঞ্জাব, কেরল, ছত্তিশগড়, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দৈনিক ৪,৮৮০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব নিপুণ বিনায়ক ২১ এপ্রিল ১২টি রাজ্যের দৈনিক ৫,৭৬০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের সমন্বিত চাহিদা মিটিয়েছেন।
দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশে অক্সিজেন চাহিদা ব্যাপক
এই দু'টি চিঠিতে দু'টি রাজ্যের কথা বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে যে গত ৬ দিনে দিল্লি (১৩৩%) ও উত্তরপ্রদেশ (১০০%) মেডিক্যাল অক্সিজেন চাহিদার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগে যেখানে ২০টি রাজ্যে দিনে ৬,৭৮৫ মেট্রিক টন অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছিল, বুধবার সেখানে দিনে সেখানে ৬,৮২২ মেট্রিক টন অক্সিজেন সরবরাহ হয়েছে। জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিনে বিভিন্ন বেসরকারি স্টিল প্ল্যান্ট ও অক্সিজেন উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির সহায়তায় দিনে ৩,৩০০ মেট্রিক টন অক্সিজেন সরবরাহ বেড়েছে।
আধিকারিকদের কাছ থেকে সব তথ্য নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন, বিভিন্ন রাজ্যে কম সময়ের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন আছে। এরজন্য রেলের সাহায্য খুব প্রয়োজন।এর ফলে ট্যাঙ্কারে করে খুব কম সময়ে বিভিন্ন রাজ্যে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।প্রধানমন্ত্রী জানান, এই পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলির উচিত বেশি পরিমাণে অক্সিজেন মজুত করা।
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক
শুক্রবারই অক্সিজেনের ঘাটতি ও কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিনই নির্বাচনী প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে আসার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু বৈঠকের কারণে তিনি আসতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। ভার্চুয়ালিই সভা সারবেন তিনি।
হাইকোর্টের নির্দেশ
এছাড়াও বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রকে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে বিশেষ করিডর ও আধা সেনার নিরাপত্তা দিয়ে অক্সিজেন ট্যাঙ্কারগুলিকে বিভিন্ন রাজ্যে পৌঁছে দেওয়া হোক। অন্যদিকে কেন্দ্র জানিয়েছে যে অক্সিজেন স্থানান্তরের ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, 'অক্সিজেন প্রস্তুতকারক ও সরবরাহ, যা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের হাসপাতালে সরবরাহ হচ্ছে তার ওপর কোনও বিধি নিষেধ আরোপ করা নেই।' এখানে উল্লেখ্য, শিল্পক্ষেত্রে অক্সিজেন সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র।
অক্সিজেনের আকাল মহারাষ্ট্র জুড়ে, সঙ্কট কাটাতে বিশাখাপত্তনম থেকে ছুটল প্রথম 'অক্সিজেন এক্সপ্রেস’