করোনা ভাইরাস রোগীর গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষার উপকরণের অভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দিল্লি
রক্ত পরীক্ষার উপকরণের অভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দিল্লি
জাতীয় রাজধানী দিল্লি ও সংলগ্ন এনসিআরে করোনা ভাইরাস কেসের তীব্র বৃদ্ধি এর আগে কখনও দেখা যায়নি। দিল্লিতে অক্সিজেন ও বেডের ঘাটতি দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যেই। কোভিড আক্রান্তদের করোনা টেস্টের বোঝায় চাপ বাড়তে শুরু করেছে টেস্টিং ল্যাবগুলিতেও।
ল্যাবে বাড়ছে চাপ
আইএল৬ (ইন্টারলিউকিন), ডি-ডিমার এবং সিআরপির মতো প্রদাহজনক মার্কা করোনা টেস্টের গুরুতর টেস্টিং কিট না থাকার কারণে দিল্লিতে বিশাল সঙ্কট শুরু হয়েছে। দিল্লিতে একাই প্রায় ১.৪ লক্ষ রোগী হাল্কা থেকে মাঝারি রোগে আক্রান্ত এবং টেস্টিং ল্যাবগুলিতে অতিরিক্ত চাপ বেড়েছে। ডি-ডিমার, সিআরপি, আইএল ৬ (ইন্টারলিউকিন ৬)-এর মতো তদন্তের জন্য পরীক্ষার কিটগুলির মজুত শেষ হয়ে গিয়েছে, যা রাতের দুঃস্বপ্ন সত্যি হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। ডাঃ ডাঙ্গ ল্যাবের সিইও ডঃ অর্জুন ডাঙ্গ বলেন, 'এই কঠিন সময়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি আফশোসের কারণ হল লোকবল ও টেস্ট সম্পর্কিত একাধিক জিনিসের কারণে আমরা আমাদের সব রোগীদের ঠিকমতো পরিষেবা দিতে পারছি না, যাঁরা সর্বদা আমাদের রিপোর্টের ওপর বিশ্বাস করে এসেছেন। এখন রক্ত পরীক্ষা করার কিটের মজুতও অত্যন্ত কম, যা সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রদাহজনক চিহ্নিতকারী গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলি যা কোভিড পজিটিভ রোগীদের পরিচালনার জন্য সরাসরি নির্দেশ দেয় এবং চিকিৎসকদের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে এবং হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়ার ক্ষমতা দেয়।'
রক্ত পরীক্ষা কি সঙ্কটে রয়েছে?
এইমসে অন্তর্বর্তীকালীন ক্লিনিকাল গাইডলাইনে নিম্নলিখিত রক্ত পরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে:
ডি-ডিমার জমাট বাঁধার স্থিতি বোঝার জন্য
সিআরপি হল সাইটোকাইন স্ট্রোমের জন্য
আইএল৬ ইঙ্গিত দেয় চলমান প্রদাহ অবস্থানকে।
আয়রন স্টোরেজ রোগ চিহ্নিত করতে সিরাম ফেরিটিন
সিবিসি, কেএফটি, এলএফটি নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা
রক্ত পরীক্ষার কিট মজুত নেই দিল্লিতে
আইএল ৬ টেস্টের মাধ্যমে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সাইটোকাইন স্ট্রোম চিহ্নিত করা হয় এবং এর ওপর ভিত্তি করে রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয়। ডি-ডিমার রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়ে তথ্য দেয় এবং জমাট-বিরোধী ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। বর্তমানে দিল্লিতে আরটি-পিসিআর টেস্টের অভাব দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য রক্ত পরীক্ষার জন্য ল্যাবগুলিতে ফোনের পর ফোন আসতে থাকছে। কিন্তু অধিকাংশ অনুরোধই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বা একদিন পর বা এক সপ্তাহ পর সেই টেস্ট করা হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষা
দিল্লির রিজয়েস হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ রুদ্র আচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, 'প্রায় ২৭ হাজার মানুষ টেস্ট করিয়ে পজিটিভ রিপোর্ট পেয়েছে এবং এটা যদি অনুমান করে নেওয়া হয় যে এনসিআরে দৈনিক ২০ হাজার মানুষের টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তবে ১০ দিনে ২ লক্ষ মানুষ করোনা পজিটিভ হবে। এছাড়াও প্রায় ৩০-৪০ শতাংশে হাল্কা থেকে মাঝারি কেস রয়েছে। এই পরীক্ষাগুলি সম্পন্ন করার জন্য অসংখ্য লোকের প্রয়োজন কিন্তু অপেক্ষাটি অফুরন্ত হয়ে উঠছে।' এগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষা, যা সরাসরি চিকিৎসককে নির্দেশ দেয় যে কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে কি ধরনের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কিনা। এই টেস্ট করতে যদি একাধিক দিন সময় লাগে, তবে এই দেরি হওয়ার কারণে কেসগুলি জটিল হয়ে যেতে পারে।
দিল্লির পরিস্থিতি
দ্বিতীয় করোনা ওয়েভ দিল্লিতে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়েছে। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে যা কর্তৃপক্ষের কাছে দ্বিগুণ চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠবে। এমনিতেই জাতীয় রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে বেড ও অক্সিজেনের অভাবে রোগীদের ওপর তার প্রভাব পড়ছে ভয়ানকভাবে।