বেড–অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছে দিল্লির হাসপাতাল, কোভিড রোগীরা চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিচ্ছে পাঞ্জাবে
কোভিড রোগীরা চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিচ্ছে পাঞ্জাবে
দিল্লির একাধিক হাসপাতালে যখন জীবনদায়ী অক্সিজেন ও আইসিইউ বেডের অভাব দেখা দিয়েছে তখন কোভিড–১৯ রোগীরা চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী রাজ্য পাঞ্জাবের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যদিও দিল্লির তুলনায় পাঞ্জাবে কোভিড–১৯ রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম কিন্তু তাও দ্বিতীয় ওয়েভের কারণে পজিটিভ রোগীর হার বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বেড়েছে। একাধিক হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সোমবারই পাঞ্জাবে একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬,৩১৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের। অন্যদিকে দিল্লিতে দৈনিক নতুন করোনা কেসের সংখ্যা ২০,২০১ ও মৃত্যু হয়েছে ৩৮০ জনের।
কোভিড রোগীর চাপ বাড়ছে পাঞ্জাবেও
পাঞ্জাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে রাজ্যটি এখনও ভালো রয়েছে কিছু সুসজ্জিত হাসপাতালের কারণে। যদিও রাজ্যে পজিটিভ কেসের হার বেড়ে যাওয়ার ফলে চিন্তা বাড়ছে সরকারের। মোহালির এক চিকিৎসকের গলাতেও শোনা গেল একই উদ্বেগ। আদর্শপাল কউর বলেন, 'আরা আইসিইউ ও বেডের জন্য অগণিত ফোন পাচ্ছি। আমরা দিল্লি থেকে আসা রোগীদেরও ভর্তি করছি। তবে সবাইকে পারছি না। অনেককেই আমরা তাদের শহরে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও করোনা কেস বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে কি হবে তাঅনুমান করা যাচ্ছে না। যদি মানুষ কোভিড যথাযথ রীতি মেনে না চলেন তবে আমরা বিশাল সমস্যার সম্মুখীন হব।'
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে দিল্লিতে
দিল্লিতে অক্সিজেন ও আইসিইউ বেড না পেয়ে হর্ষ শর্মা ও তাঁর বো ভাবনা শর্মা তাঁদের বাবাকে মোহালির হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দিল্লি থেকে মোহালি নিয়ে আসা হয় অ্যাম্বুলেন্সে করে। হর্ষ এবং ভাবনা তাঁদের অসুস্থ বাবাকে দিল্লির রাজীব গান্ধী, বিএল কাপুর ও এইমসে ভর্তি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু কোনও বেড পায়নি। দিল্লিতে বেড না পাওয়ার ভয়ানক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিএসসির প্রথম বর্ষের ছাত্র হর্ষ বলেন, 'আমরা দিল্লিতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমরা যখন বেড পেলাম না, তখন আমাদের এক আত্মীয় বাবাকে পাঞ্জাবে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। আমরা এখানে বাবাকে ছোট একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তিনি অক্সিজেন নিয়ে আইসিইউ বেডে রয়েছেন। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ রয়েছেন।' তাঁর বোন ভাবনা বলেন, 'দিল্লির গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমার বার করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছিল কিন্তু তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। আমরা ফের পরীক্ষা করাই। রিপোর্ট জানিয়েছে আমার ভাই ও বাবা উভয়ই পজিটিভ। কিন্তু আমি আমার বাবার জন্য বেড পায়নি দিল্লিতে।'
দিল্লিতে চিকিৎসা না পেয়ে পাঞ্জাবে
জম্মু-কাশ্মীরের এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা জানান যে তিনি তাঁর কোভিড পজিটিভ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে দিল্লি থেকে চণ্ডীগড়ে নিয়ে এসেছেন। পুলিশ আধিকারিক বলেন, 'দিল্লিতে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হন এবং তাঁদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। দিল্লিতে কোনও ব্যবস্থা না করতে পেরে সময় নষ্ট না করে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের চণ্ডীগড় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।' এরকম অনেকেই রয়েছেন যাঁরা দিল্লিতে চিকিৎসা না পেয়ে পাঞ্জাবে চলে এসেছেন তাঁদের প্রিয়জনকে নিয়ে।
করোনা গ্রাসে রাজস্থান, অক্সিজেন-ওষুধের সঙ্কট মেটাতে দিল্লির দ্বারস্থ অশোক গেহলট
পাঞ্জাবে একদিনে মৃত্যু ৯৮ জনের
সোমবার ৯৮ টি মৃত্যু নিয়ে পাঞ্জাবে মোট মৃতের সংখ্যা ৮,৫৩০। দু'দিন আগেই ২৪ এপ্রিল পাঞ্জাবে একদিনে মৃত্যু হয়েছিল ৯২ জনের। তবে গত বছর মহামারি শুরু হওয়ার পর ২ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবে একদিনে ১০৬ জনের মৃত্যু রেকর্ড গড়েছিল। জেলা ভিত্তিক মৃত্যুর সংখ্যাকে ভাঙলে দেখা যাবে ১৪ জন মারা গিয়েছে পাতিয়ালাতে, ১১ জন করে মৃত্যু হয়েছে অমৃতসর ও সাস নগরে (মোহালি), ১০ জন লুধিয়ানায়, সাত জন করে সাঙ্গরুর, গুরুদাসপুর ও হোশিয়ারপুরে, ছয় জন জলন্ধরে, চার ভাতিন্ডায়, তিনজন করে মুক্তাসার ও পাঠানকোটে, ২ জন করে তর্ন তরান, মানসা, মোগা, রোপার এবং এসবিএস নগর এবং একজন মারা গিয়েছে ফরিদকোটে। পাঞ্জাবে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৪৫,৩৬৬ এবং মোট সক্রিয় কেসের সংখ্যা ৪৯,৮৯৪।