হাতের বাইরে দিল্লির পরিস্থিতি! হিংসা রুখতে কেন্দ্রের কাছে আরও বাহিনী চাইলেন কেজরিওয়াল
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে ঘিরে শুরু হওয়া উত্তর-পূর্ব দিল্লির হিংসা ক্রমেই হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দিল্লি পুলিশের। এই পরিস্থিতিতে হিংসার জেরে দিল্লিতে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে ধীরে ধীরে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দিল্লির হিংসায় এক হেড কনস্টেবল এবং ১২ জন সাধারণ নাগরিক মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ছিল ১৩। বুধবার সকালে তা দাঁড়িয়েছে ১৭-তে। এদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল। এখনও ৭০ জনের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দিল্লিতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করার আর্জি কেজরিওয়ালের
এহেন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের কাছে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করার আর্জি পেশ করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ইতিমধ্যেই গোষ্ঠী সংঘর্ষের মধ্যে দিল্লির সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য স্পেশাল সেল, ক্রাইম ব্রাঞ্চ এবং অর্থনৈতিক অপরাধ শাখার (ইডাব্লু) তরফ থেকে প্রায় ৩৫ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এতেও গতরাতে হিংসা ঠেকানো যায়নি। বুধবার সকালেই আরও ৪ জনের মৃত্যুর খবর আসে। এই অবস্থায় আরও বাহিনীর দাবি জানালেন কেজরিওয়াল।
এখনও শান্ত হয়নি দিল্লি
শনিবার রাতে শুরু হওয়া অশান্তির আগুন এখনও শান্ত হয়নি দিল্লিতে। বরং, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসার আগুন আরও জ্বলে উঠছে দিল্লিতে। এদিতে নতুন করে হিংসার আগুনে মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে দিল্লিতে। গত তিন দিনের হিংসায় এখনও পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে অশান্ত এলাকায় খবর সংগ্রহে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের রোষের সামনে পড়েছেন সাংবাদিকরাও। জানা যায় মঙ্গলবার এক সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। জখম অবস্থায় পরে সেই সাংবাদিককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দিল্লিতে লোহার রড, লাঠি, ইট ব্যবহার করে পুলিশকে আক্রমণ দুষ্কৃতীদের
মূলত, দিল্লির মৌজপুর, বাবরপুর, কবিরনগর, পশ্চিম জ্যোতি নগর, গোকুলপুরীর গলিতে এই হিংসার ছবি নজরে পড়েছে। লোহার রড, লাঠি, ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে ভাঙা ইটকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে বিক্ষোভকারীরা। এদিকে দুষ্কৃতী দেখলেই গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। ক্ষিপ্ত জনতাকে ভয় দেখাতেই এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে মনে করছে। আদতে এটি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মনে।
কয়েক দফা বৈঠক অমিত শাহ ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের
দিল্লিতে হিংসার ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার কয়েক দফায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। দিল্লি সরকারকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বহিরাগতরা এসে হিংসা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ কেজরিওয়ালের। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাফরাবাদ, মৌজপুর, চাঁদবা, খুরেজি খাস, ভজনপুরায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ২৪ মার্চ পর্যন্ত জারি থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।
দিল্লির বিশেষ পুলিশ কমিশনার নিয়োগ করা হল শ্রীবাস্তবকে
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দিল্লিতে বিশেষ পুলিশ কমিশনার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। সেন্ট্রাল রিজার্ভ ফোর্সের অফিসার এসএন শ্রীবাস্তবকে এই পদে নিয়োগ করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালের আইপিএস ব্যাচের অফিসার এস এন শ্রীবাস্তবকে দিল্লিতে বিশেষ কমিশনার পদে নিয়োগ করে দিল্লি পরিস্থিতি বাগে আনতে চাইছে কেন্দ্র। এর আগে শ্রীবাস্তব সিআরপিএফ-এর বিশেষ ডিরেক্টর পদ সামলাচ্ছিলেন। মনে করা হচ্ছে দিল্লি পুলিশের বর্তমান কমিশনার অমূল্য পট্টনায়েকের মেয়াদ শেষ হলে শ্রীবাস্তবকেই পাকাপাকি ভাবে দিল্লি পুলিশের দায়িত্ব সপে দেওয়া হতে পারে।