দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে রাজনীতির কোন ছবি ধরা দিল মোদী, কেজরিওয়াল আর রাহুলের কাছে
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে রাজনীতির কোন ছবি ধরা দিল মোদী, কেজরিওয়াল আর রাহুলের কাছে
দিল্লি বিধানসভা ভোটে উল্টে গিয়েছে বিজেিপর সমীকরণ। ঝাড়ু ঝড়ে সাফ হয়ে গিয়ে পদ্ম শিবির। এই নিয়ে একাধিক রাজনীতিক একাধিক মত দিয়েছেন। কিন্তু এই তিন মূল নায়ক নরেন্দ্র মোদী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং রাহুল গান্ধীর প্রেক্ষিতে এই দিল্লির ভোটের ফল তিনটি অন্য ধারার রাজনৈতিক ছবি তুলে ধরেছে।
মোদী না বিজেপি
দিল্লি বিধানসভা ভোটের প্রথম দিন থেকেই প্রচারের ময়দানে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এখানে দলের উর্ধ্বে উঠে মোদীকে সামনে আনা হয়নি। যেভাবে লোকসভা ভোটে মোদীকে সামনে রেখে প্রচার চালানো হয়েছিল। সেটা কিন্তু দিল্লি বিধানসভা ভোটে করা হয়নি। এখানে মোদীর থেকে বেশি মোদী কর্মকাণ্ডকে বড় করে দেখানো হয়েছিল। যার জন্য বারবারই বিজেপি নেতাদের প্রচারে উঠে এসেছিল শাহিনবাগে সিএএ বিরোধী আন্দোলন। এনআরসি, এনপিআরের মতো বিষয়। কিন্তু দিল্লির কোথাও শুধুমাত্র মোদীেক সামনে রেখে প্রচার চালায়নি বিজেিপ। উল্টে সামগ্রিক ভাবে বিজেপি সাফল্যকেই জাহির করা হয়েছিল প্রচারে। সেকারণেই বারবারই উঠে এসেছিল ধর্মের প্রসঙ্গ। কারণ বিজেপি জানাই ছিল দিল্লিবাসীর কাছে মোদীর থেকে কেজরিওয়ালের জনপ্রিয়তা বেশি। তাই বারবার মোদী নয় সামগ্রিক ভাবে বিজেপিকে তুলে ধরা হয়েছিল প্রচারে।
জাতীয় রাজনীতিতে পথ খুলল কেজরিওয়ালের
দিল্লি বিধানসভা ভোটের এই বিপুল সাফল্যের আগে পর্যন্ত জাতীয় রাজনীতিতে আপের তেমন গুরুত্ব ছিল না বললেই চলে। আপের জনপ্রিয়তা কেবল মাত্র দিল্লির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে। দলের মধ্যে বেড়ে চলা দলাদলি নিয়ে আপকে কোনঠাসা করতে ছাড়েনি প্রাদেশিক রাজনৈতিক দলগুলিও। বিশেষ করে ২০১৭-র পাঞ্জাব বিধানসভা ভোটে আপের ভরাডুবি, দলের মধ্যেই অন্তর্ঘাত দলের রাজনৈতিক স্থায়ীত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিল। জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক দলগুলি মনে করত এবারই আয়ু শেষ আপের। এভাবে যে আপ ঘুরে দাঁড়াতে পারে তা আন্দাজ করতে পারেনি বিজেপিও। বিজেপির মতো প্রবল প্রভাবশালী আক্রমণাত্মক দলকে দিল্লির মাটিতে ধরাশায়ী করে কেজরিওয়াল এখন অবিজেপি দলগুলির মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে উঠে আসতে পেরেছেন। গতকাল আপের সদর দফতের সামনে ২০২৪- মোদী ভার্সেস কেজরিওয়াল লেখা পোস্টারেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছেন কেজরিওয়াল। তাই দিল্লিবাসী তাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমকক্ষের আসনে বসিয়েছে।
কংগ্রেসে গান্ধী পরিবারের সাফল্য প্রশ্নের মুখে
দিল্লি বিধানসভা ভোটে খাতা খুলতে পারেনি কংগ্রেস। রাজধানীর বুকে এর থেকে লজ্জার হার হয়নি কংগ্রেসের। লোকসভা ভোটের পর আবার বড় ধাক্কা কংগ্রেসে। ১৫ বছর যে রাজ্য শাসন করেছে কংগ্রেস সেখানে একটি আসনও না পাওয়ার লজ্জা যে কংগ্রেস নেতাদের মনোবল আরও ভেঙে দেবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। দিল্লিতে ভোেটর প্রচারে এক প্রকার নিষ্ক্রিয়ই দেখা গিয়েছে গান্ধী পরিবারকে। একেবারে শেষ পর্যায়ে প্রচারে নেমেছিলেন রাহুল। এযাবত যেকটি রাজ্যে কংগ্রেস ভাল ফল করেছে তার একটির কৃতিত্বও গান্ধী পরিবারকে দেওয়া যায় না। মধ্য প্রদেশে কংগ্রেসের সাফল্যের পেছনে ছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, রাজস্থানে সচীন পাইলট, হরিয়ানায় ভূপিন্দর সিং হুডা, মহারাষ্ট্রে শরদ পাওয়ার আর ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেন। এদের বলে বলিয়ান হয়েই কংগ্রেসের গুটি কয়েক সাফল্য এসেছে রাজ্যস্তরে। তাই আবারও রাহুলের নেতৃত্ব তথা গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে ফেলল দিল্লি বিধানসভা ভোটের ফলাফল