২০১৭ -এর অন্যতম বড় খবর রাম রহিমকাণ্ড! একনজরে দেখেনিন ধর্ষক বাবার 'কীর্তি'গুলি
একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই বছরের অন্যতম কুখ্যাত নাম বাবা রামরহিমের কীর্তিকাণ্ড।
হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সচা সৌদার আশ্রমে সাধ্বীদের ধর্ষণের ঘটনায় রামরহিমের ২০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা হয়। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত রামরহিমকে এই সাজা শোনানোর পাশাপাশি ১৫ লক্ষ টাকার জরিমানা দিতে নির্দেশ দেয়। এমনই তথ্য জানায় হরিয়ানার মোনহর লাল খট্টর সরকার। এর আগে, এই ধর্ষক ধর্মগুরুকে দোষী সাব্যস্ত করার পর থেকেই প্রবল হিংসা ছড়াতে থাকে হরিয়ানা সহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। হরিয়াণাতেই মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭ জন। আহত হন ৫৫২ জন। একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই বছরের অন্য়তম কুখ্যাত নাম বাবা রামরহিমের কীর্তিকাণ্ড।
২৫ অগাস্টের কাণ্ড
এবছরের ২৫ অগাস্ট ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্য়স্ত হয় ডেরা প্রধান বাবা রামরহিম। তারপর থেকেই হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে হরিয়াণা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা। তারপর ধর্ষণের জন্য ২০ বছরের সশ্রমকারাদণ্ডে হাজতবাস হয় এই অপরাধীর। আর এই ঘটনাকে ঘিরে যতই চাঞ্চল্য় ছড়াতে থাকে ততই উঠে আসে রামরহিমের বিচিত্র কীর্তিকাণ্ডের তথ্য।
ডেরায় 'পিতাজি কী মাফি' মানে ধর্ষণ
২০০২ সালে ডেরার সাধিকাদের ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত হন গুরমিত রাম রহিম। এই মামলা চলাকালীন তদন্তে জানা যায় , মহিলাদের ক্ষমা করার নামে চলত ধর্ষণ। 'ধর্ষণ'কে এখানে 'ক্ষমা' বলা হত। প্রতীকী হিসাবে বলা হত, 'পিতাজী কী মাফি'। বাবার গোপন গুহায় ২০০ জন সেবাদাসীর মধ্যে ৩০ জনকে চুল ছেড়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বাবার ইচ্ছেমত আশ্রমের গোপনকক্ষে চলত ধর্ষণ।
আশ্রমে অস্ত্রচালনা
ভারতীয় সেনার গোপন সূত্রের খবর ২০১০ সাল থেকেই ডেরার আস্তানায় চলত অস্ত্রশিক্ষা। অনেক প্রাক্তন সেনা কর্মীকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়ানোর কাজে ব্য়বহার করা হত বলে খবর। সিরসা আশ্রমের ভিতর থেকে উদ্ধার হয়েছে ৪৭ রাউন্ড কার্তুজ।
'পাপা কী পরী' হানিপ্রীত
রামরহিমের সঙ্গে সঙ্গেই উঠে আসে এই ঘটনা ঘিরে আরেক চরিত্রের নাম। সে হল হানিপ্রীত সিং। বিবাহিত হানিপ্রীতকে ২০০৯ সালে দত্তক নেন গুরমিত রাম রহিম। তারপর থেকেই রামরহিমের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে সে। এই ঘনিষ্ঠতা এতটাই ছিল যে , জেলের সাজা পেয়ে প্রথম রাতে হানিপ্রীতকে জেলের মধ্য়ে নিজের সঙ্গেই রাখতে চেয়েছিল রামরহিম সিং।
গা ঢাকা দিতে চায় হানিপ্রীত
রাম রহিমের কারাবাসের পর বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে ঘুরতে থাকে হানিপ্রীত। তার বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানো সহ একাধিক অভিযোগ ছিল পুলিশের কাছে। শেষমেশ তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। ফলে হানিপ্রীতের ডেরা প্রধান হওয়ার স্বপ্ন ঘুচে যায়।
ডেরা-য় অভিযান ও তল্লাশি
রামরহিমের বিরুদ্ধে চলা মামলার প্রেক্ষিতে সিরসার আশ্রমে যায় পুলিশের একটি দল। সেখানের হাসপাতালে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সেখানে চলত আবৈধ গর্ভপাত। চলত অবৈধ স্কিন ব্যাঙ্কের ব্যবসা।
সাংবাদিক হত্যা
এক সাংবাদিক হত্যা মামলাতেও অভিযোগ রয়েছে রামরহিমের বিরুদ্ধে। গুরমিত রাম রহিমের কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস করেছিলেন রামচন্দ্র ছত্রপতি। নিজের হাতে তৈরি এক পত্রিকায় রাম রহিমের অসাধু কাজকর্মের ফিরিস্তি লিখেছিলেন। আর সেজন্য ২০০২ সালে খুন হতে হয় সাংবাদিক রামচন্দ্রকে।
ডেরায় পোঁতা রয়েছে ৬০০ টি কঙ্কাল
পুলিশি তল্লাশি চলাকালীন জানা যায়, ডেরার ভিতর রামরহিমের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ গর্জে উঠলে তাঁকে খুন পুঁতে দেওয়া হত। আর যেখানে পোঁতা হত, সেখানে রোপণ করা হত একটি চারাগাছ।
নির্বীজকরণকাণ্ড
শুধু ধর্ষণ বা চোরা পাচারের কালোজগতের সঙ্গেই রামরহিমের আঁতাত ছিল না। বহু নারীর জীবন নষ্ট করার সঙ্গে সঙ্গে , আশ্রমের বহু পুরুষেরও নির্বীজকরণ করে ছিলেন তিনি। যাতে কোনও পুরুষ আস্রমের কোনও মহিলার কাছে ঘেঁষতে না পারেন। প্রায় ৪০০ পুরুষের নির্বীজকরণ করা হয় জেরার আশ্রমে। ফলে সমকামীতায় ভরে উঠছিল ডেরা।
করওবাচৌতে 'চাঁদ' সাজত ধর্ষক বাবা
করওবাচৌতের দিন ডেরা সাচায় ব্রত রাখা মহিলাদের নিয়ে বসত রাম রহিম। এই ব্রতে সন্ধ্যাবেলায় চাঁদের দিকে তাঁকিয়ে প্রার্থনা করে তারপরে স্বামীর মুখ দেখতে হয়। সেখানে ডেরায় চাঁদের বদলে সকলকে রাম রহিমের মুখ দেখতে হতো। তারপর ব্রত ভাঙতেন মহিলারা।
ধর্ষক রাম রহিমকে 'পদ্ম' সম্মানের সুপারিশ
তাকে ঘিরে ধর্ষণকাণ্ড সামনে আসার আগে, রামরহিমকে 'পদ্ম' সম্মান দেওয়ার জন্য প্রচুর সুপারিশ আসে। এই সুপারিশের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার।
নেতাজির চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল রাম রহিমের
এক বাংলা ছবিটিতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল রাম রহিমের । ছবির কাজ এই বছরেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। নেতাজীকে নিয়ে রাম রহিমের এই ছবিটিতে 'নায়ক',প্রযোজক, পরিচালক, হিসাবেও পাওয়া যেত বাবা রাম রহিমকে।
'ধর্মগুরু' থেকে সিনেমার 'নায়ক' ,রাম রহিম
বিতর্কে থাকা এই ধর্মগুরু শুধু যে ধর্মীয় ক্ষেত্রেই পরিচিত তা নয়। ইতিমধ্যেই তিনি বানিয়ে ফেলেছেন ৫ টি সিনেমা। যার নায়ক তিনি নিজে। তার মধ্যে 'মেসেঞ্জার অফ গড' সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় । ছবি মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ছবির বক্স অফিস কলেকশন ছিল ১০০ কোটি। যা সে সময়ে মুক্তি পাওয়া রনবীর কাপুরের 'রয়' ছবিকেও ছাপিয়ে যায়