ঘূর্ণিঝড় তাউকটে দেখাল আরব সাগর চরিত্র বদলেছে, নেপথ্য কারণ খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা
ঘূর্ণিঝড় তাউকটে দেখাল আরব সাগর চরিত্র বদলেছে, নেপথ্য কারণ খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা
সুপার সাইক্লোন তাউকটে কেরল-তামিলনাড়ু থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র-গুজরাট পর্যন্ত ভারতের পশ্চিম উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছে। এ বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় আরব সাগরের বুকে বাসা বেঁধেছিল। তারপর উত্তরোত্তর এমনই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, যা দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন আইএমডির আবহ-বিজ্ঞানীরাও।
ঘূর্ণিঝড় যশ ধেয়ে আসার আগে তাউকটের দাপটের খণ্ডচিত্র একনজরে, মৃত্যুমিছিল অব্যাহত
আরব সাগর আগের থেকে অনেক বেশি উষ্ণ
আরব সাগরে সাধারণত এত শক্তিশালী হয়ে ওঠে না ঘূর্ণিঝড়। সেদিক দিয়ে ঘূর্ণিঝড় তাউকটে ব্যতিক্রমী। কিন্তু বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আরব সাগর আগের থেকে অনেক বেশি উষ্ণ হয়ে উঠেছে, যার ফলে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে, তা শক্তি বাড়াতেও সমর্থ হচ্ছে অস্বাভাবিক। যেমনটা হল তাউকটের ক্ষেত্রে।
আরব সাগর বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে
১৮৯১ সাল থেকে ভারতে ঘূর্ণিঝড়ের রেকর্ড রয়েছে। উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক বছরে পাঁচটি করে গড়ে ঘূর্ণিঝড় হয়। তার মধ্যে সাধারণত একটিই আরব সাগরে উত্থিত হয়। কিন্তু গত তিন-চার বছরে আরব সাগরেও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। এর কারণ নিয়েই এখন চর্চা শুরু হয়েছে।
২০১৮ সাল থেকে চরিত্র পরিবর্তন আরব সাগরের
২০১৮ সালে বঙ্গোপসাগর যখন বছরে গড়ে চারটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল, আরব সাগরে তখন তিনটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। আবার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে আরব সাগরে তৈরি হয়েছিল পাঁচটি ঘূর্ণিঝড়, যা বঙ্গোপসাগরকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর বা আইএমডি বলেছিল, ২০১৯ সালে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপর ৮টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল।
আরব সাগর ঘূর্ণিঝড় তৈরিতে রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে
মোট ৮টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে আরব সাগরে হয়েছিল ৫টি ঘূর্ণিঝড়। যেখানে বছরে একটি ঘূর্ণিঝড় হচ্ছিল, সেখানে বঙ্গোপসাগরকে টপকে আরব সাগরে পাঁচটি ঘূর্ণিঝড় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। শেষবার ১৯০২ সালে আরব সাগরের উপর সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘূর্ণিঝড়ের রেকর্ড রয়েছে। এই বছর আরব সাগর সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল।
আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের বৃদ্ধির জন্য দায়ী কী
২০২০ সালে বঙ্গোপসাগর তিনটি ঘূর্ণিঝড় ও আরব সাগর দুটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। মে মাসের শেষের দিকে এবং জুনের শুরুতে দুটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল প্রায় একসঙ্গে। আরব সাগরে নিসর্গ এবং বঙ্গোপসাগরে আম্ফান। বিজ্ঞানীরা আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনকে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে ঘূর্ণিঝড়
সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে ঘূর্ণিঝড়গুলি নিম্নচাপ অঞ্চল থেকে বিকাশ লাভ করে। তাপমাত্রার পার্থক্য যত বেশি হয়, নিম্নচাপ তত বেশি হয় এবং ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করে দেয়। তা শক্তিশালী করে তোলে। ক্লাইমেট চেঞ্জের ফলে আরব সাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে। আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় সমুদ্রে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা নিম্নচাপকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করতে পারে।
কোথায় ফারাক বঙ্গোপসাগেরর সঙ্গে আরব সাগরের
ঘূর্ণিঝড় অধ্যয়নরত বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, আরব সাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৪০ বছর ধরে বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি হচ্ছে ১.২ থেকে ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে। তাপ ঘূর্ণিঝড়ের খাদ্য হিসাবে কাজ করে। বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা সাধারণত ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে। বিপরীতে আরব সাগরের তাপমাত্রা বঙ্গোপসাগরের তুলনায় ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল।