অশনির পিছু পিছু ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় করিম, ‘হারিকেন ২’-এর সতর্কবার্তা আবহাওয়া দফতরের
ঘূর্ণিঝড় অশনি থেকে কোনওমতে রেহাই মিললেও পিছনে ধেয়ে আসছে আরও এক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। সাইক্লোন করিম ভারত মহাসাগরে শক্তি বাড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই ভারতের মৌসম ভবন তাকে হারিকেন ২ ক্যাটাগরির ঝড় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই সাইক্লোনের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১১২ কিলোমিটার।


পিছু পিছু আরও একটি ঝড় ধেয়ে আসছে
ঘূর্ণিঝড় অশনির সঙ্গেই একটি যমজ ঝড় তৈরি হয়েছিল ভারত মহাসাগরে। ভারত মহাসাগরের বুকে ক্রমেই শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। যখন এক অশনি নিয়ে থরহরিকম্প চলছে ভারতের তিন রাজ্যের উপকূলে, তখন তার পিছু পিছু আরও একটি ঝড় ধেয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই ঝড় কোথায় ল্যান্ডফল করবে এবং কোনদিকে তার অভিমুখ হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সাইক্লোন অশনির পিছনে যমজ ঝড়ের আগমন
সাইক্লোন অশনিরও ল্যান্ডফলের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে বুধবার তা পূর্বাভাস মনো উত্তর-পূর্বে বাঁক না নিয়ে সোটা অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলেকর দিকে যেতে শুরু করেছে। তা হলে শক্তি হারিয়েও অন্ধ্র উপকূলে তা আছড়ে পড়তে পারে, এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর বা আইএমডি বা মৌসম ভবন।

ঘূর্ণিঝড় করিম হারিকেন ২ ক্যাটাগরির ঝড়
তবে অশনির পিছনেই তার যমজ ঝড় করিম বেড়ে ওঠায় নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে তা শক্তি বাড়িয়ে তুলছে। এই ঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে করিম। এই ঘূর্ণিঝড় করিমকে হারিকেন ২ ক্যাটাগরির ঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনি নিয়ে সম্ভাবনার কথা জানালেও, করিম নিয়ে এখনও কিছু জানায়নি মৌসম ভবন।

ঘূর্ণিঝড় করিমের প্রভাবেও কোনও কোনও রাজ্যে
ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে যেমন অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, তেমনই ঘূর্ণিঝড় করিমের প্রভাবেও কোনও কোনও রাজ্যের আবহাওয়ায় পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। সই সম্ভাবনা রয়েছে। এখন অপেক্ষা, ঘূর্ণিঝড় করিম কোন অভিমুখে ধেয়ে যায় এবং তার ল্যান্ডফল কোন উপকূলে হয়। নাকি মহাসাগরেই শেষ হয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় করিমের অস্তিত্ব।

উত্তর ভারত মহাসাগরীয় ক্রান্তীয় ঝড়ের নাম
উত্তর ভারত মহাসাগরীয় ক্রান্তীয় ঝড়গুলির নামকরণ যেমন ১৩টি দেশ করে। ২০২০ সালে ১৩টি দেশ মিলিত হয়ে ১৩টি করে না দিয়ে মোট ১৬৯টি নামের তালিকা প্রস্তুত করে। তারপর সই তালিকা থেকে একটি করে নাম ব্যবহার করা হয়। এখন সেই তালিকার দশম ঝড় ঘূর্ণিঝড় অশনি ভারতের পূর্ব উপকূলে হাজির হয়েছে।

দক্ষিণ ভারত মহাসাগরীয় ক্রান্তীয় ঝড়ের নাম
আর দক্ষিণ ভারত মহাসাগরীয় ক্ষেত্রে অর্থাৎ দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বা উপ-ক্রান্তীয় ঝড়েরও নামকরণ করা হয়, কমপক্ষে ঘণ্টায় ৩৯ মাইল বা ৬৩ কিমি গতিবেগ হলেই গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়কে তীব্র বলে গণ্য করা হয় এবং নামকরণ করা হয়। মাতিও-ফ্রান্স মাত্তো মাদাগাস্কার বা মরিশাস মেটিরিওলজিকাল সার্ভিসের মাধ্যমে ঝড়ের নামকরণ করা হয়। কত অক্ষাংশে এবং কত দ্রাঘিমাংশে অবস্থান তার উপর ভিত্তি করে তিনটি পূর্ব নির্ধারিত তালিকা থেকে নাম নেওয়া হয়, যা ত্রিবার্ষিক ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে ধরা হয়।। সেইমতো এবার ঝড়ের নাম করিম।

টুইন সাইক্লোন বা যমজ ঘূর্ণিঝড়ের ফল
আবহাওযা দফতরের পূর্বাভাস ছিল ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জোড়া ঘূর্ণিঝড় বাসা বেঁধেছে। এই দুটি ঘূর্ণিঝড়কে আবহবিদরা টুইন সাইক্লোন বা যমজ ঘূর্ণিঝড় আখ্যা দিয়েছেন। দুটি ঘূর্ণিঝড় ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দুইটি ভিন্ন গোলার্ধে অবস্থান করছিল। আবহিবদরা জানিয়েছিলেন, ঘূর্ণিঝড় অশনি কতখানি মারাত্মক হতে পারে বা আম্ফানের মতো শক্তিশালী হয়ে ওঠে কি না, তা নির্ভর করবে ওই দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়ের উপর।

ভারত মহাসাগরে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাব দুই ঘূর্ণিঝড়
পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যমজ ঘূর্ণিঝড়ের কথা। ওয়েস্টার্ন উইন্ড বার্স্ট বা পশ্চিমা বায়ুর বিস্ফোরণ এই দুই ঝড় তৈরির জন্য দায়ী। এখন ভারত মহাসাগরে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাব এতটাই যে দুই গোলার্ধে একইসঙ্গে দুটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই এই দুটি ঘূর্ণিঝড়কে যমজ বলা হচ্ছে। দুই ঘূর্ণিঝড়কে দাঁড়িপাল্লার সঙ্গে তুলনা করে আবহবিদরা জানান, যে বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে, সে তত ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবে।

দুই গোলার্ধে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের দুই ভিন্ন প্রকৃত
আবহবিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, দু'টি গোলার্ধে দু'টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ায় এর প্রকৃতি দুইরকমের। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়টির বায়ুপ্রবাহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরবে। আর ভারত মহাসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের বায়ুপ্রবাহ ঘুরবে ঘড়ির কাঁটার দিকে। বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, দুটি ঘূর্ণিঝড় দাঁড়িপাল্লার মতো ওজন করেই শক্তি বাড়ানোর যুদ্ধ চালাবে সমুদ্রে।

ঘূর্ণিঝড় ফণী ও লর্না যেমন, ঘূর্ণিঝড় অশনি ও করিমও তেমন
সাগরে যমজ ঘূর্ণিঝড়ের উদ্ভব এই প্রথম হল, তা কিন্তু নয়। এর আগে একাধিকবার যমজ ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। মাত্র তিন-বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯-এ ঘূর্ণিঝড় ফণী যখন আছড়ে পড়েছিল, তখন ভারত মহাসাগরে ঠিক এমনই এক যমজ ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল লর্না। এবারও ঘূর্ণিঝড় অশনির সঙ্গে তৈরি হল ঘূর্ণিঝড় করিম। দুই গোলার্ধে দুই ঝড়ের খেল চলছে এই মুহর্তে সাগরের বুকে।
Weather update: অন্ধ্র উপকূলের দিকে এগোচ্ছে অশনি, রাজ্যের কোন কোন জেলায় বৃষ্টির সতর্কতা জেনে নিন