ঘূর্ণিঝড় 'জাওয়াদ' রেহাই দিল ভারতের পূর্ব উপকূলকে। ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে রক্ষা বাংলার
ভারতের পূর্ব উপকূলের দিকে শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছিল ঘূর্ণিঝড় 'জাওয়াদ'। কিন্তু আবহাওয়া দফতর শেষমেশ স্বস্তির খবর দিয়েছে ভারতের পূর্ব উপকূল এবং বাংলার জন্য।
ভারতের পূর্ব উপকূলের দিকে শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছিল ঘূর্ণিঝড় 'জাওয়াদ'। কিন্তু আবহাওয়া দফতর শেষমেশ স্বস্তির খবর দিয়েছে ভারতের পূর্ব উপকূল এবং বাংলার জন্য। ভারতের পূর্ব উপকূল বা ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়বে না ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে পৌঁছনোর আগে ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে যাবে।
কিন্তু কেন হঠাৎ করে মাঝ সমুদ্রে দুর্বল হয়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ? ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি বাড়িয়ে সিভিয়ার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার পরও কেন শক্তি হারিয়ে ফেলল? আবহবিদরা মনে করছেন উত্তরে হাওয়া বা শীতলবায়ুর কারণেই মাঝ সমুদ্রে শক্তি হারাল ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। তবে নিম্নচাপ হিসেবে তা উপকূলকে উত্তাল করে দেবে। তার জন্য সমস্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সমুদ্রের ধারে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বংসী রূপ না থাকলেও গভীর নিম্নতাপের জেরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ওড়িশা ও বাংলার। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলায় প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে গাছ ভেঙে ইতিমধ্যে এক কিশোরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ রণে ভঙ্গ দেওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন ওড়িশার মানুষ। ওড়িশা গত এক বছরে ঘূর্ণিঝড় 'গুলাব' এবং 'ইয়াস'-এ বিপর্যস্ত হয়েছিল। এখন বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ঘূর্ণায়মান ঝড়টি অবস্থান করার বার্তায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ওড়িশা। রাজধানী ভুবনেশ্বর এবং উপকূলীয় জেলাগুলিতে দুপুরের পর থেকে কোনও বৃষ্টি হয়নি।তবে প্রশাসন উপকূল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ জারি রেখেছে। তিন শতাধিক অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলা-সহ প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ওড়িশা উপকূল অভিমুখে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় মাঝ সমুদ্রে দুর্বল হয়ে যাওয়ার পরে সিস্টেমটি গভীর নিম্নচাপ হয়ে পুরী উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, গভীর নিম্নচাপটি আরও দুর্বল হবে। তারপর আছড়ে পড়বে। ফলে ঝড়ের প্রকোপ না থাকলেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
শুক্রবার রাত থেকে ওড়িশার সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ওড়িশা প্রশাসন অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা মাছ ধরার নৌকাগুলিকে আশ্রয় দিয়েছে, যেগুলি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের গন্তব্যে ফিরতে পারেনি এবং মৎস্যজীবীদের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনও হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কর্তৃপক্ষ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের ডিরেক্টর সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "রবিবার বাংলার উপকূলে পৌঁছনোর সময় জাওয়াদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এটি একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে, যার ফলে দক্ষিণবঙ্গজুড়ে ভারী বৃষ্টি হবে। উপকূলীয় এলাকা উত্তাল হবে সমুদ্র। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, হুগলি জেলা ও হাওড়ায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা।