ঘূর্ণিঝড় অশনির বিপদ সংকেত এবার মার্চেই ! ১৫০ কিমি বেগে ধেয়ে আসবে বাংলা অভিমুখে?
ঘূর্ণিঝড় অশনির ব্যতিক্রমী সংকেত এবার মার্চেই ! ১৫০ কিমি বেগে ধেয়ে আসবে বাংলা অভিমুখে?
এবার মার্চ থেকেই শুরু ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম। এখনই ভারত মহাসাগরের ক্রান্তীয় অঞ্চলে কড়া নাড়ছে ঘূর্ণিঝড়। আবহবিদরা জানিয়েছেন, এবার মার্চেই ইন্দিনেশিয়া থেকে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে ধেয়ে আসতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। গতবার এপ্রিল পর্যন্ত কোনও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা ছিল না। এবার প্রাক মরশুমেই মাঝ সমুদ্রে চোখ পাকাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় অশনি।
ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম শুরু হতে না হতেই পূর্বাভাস
গ্রীষ্ম পড়তে না পড়তেই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়া দফতর। এবার মার্চেই বাংলার উপকূলে হানা দিতে পারে ঘূর্ণিঝড়। বাংলা ও ওড়িশার উপকূলকেই টার্গেট করেছে ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রে তৈরি হওয়া সিস্টেম। ফলে এবার ঘূর্ণিঝড়ের মরশুমের শুরুতেই নিস্তার নেই বলেই মনে করছেন আবহবিদরা। শিয়রে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুর্যোগ।
বাংলা ও ওড়িশা সংলগ্ন মাঝ সমুদ্রে গভীর নিম্নচাপ
আবহবিদরা জানিয়েছেন সিতরাং প্রাক মরশুমেই হানা দিতে পারে। ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে তা আছড়ে পড়তে পারে বাংলা বা ওড়িশা উপকূলে। এমনই সম্ভাবনা রয়েছে বলে আভাস দিয়েছেন আবহবিদরা। তার ফলে যশ ও জাওয়াদের পর অশনির হানায় ত্রস্ত হতে পারে বাংলা। বাংলা ও ওড়িশা সন্নিকটস্থ মাঝ সমুদ্রে গভীর নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে দু'দিনের মধ্যেই।
ঘূর্ণিঝড়ের ধেয়ে আসার প্রবণতা বাংলা-ওড়িশার দিকে
ইতিমধ্যেই ইন্দোনেশিয়ার বান্দা উপকূলে গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। এই নিম্নচাপ গভীর হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে চলেছে। ক্রমশই ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। সাইক্লোনের আকার ধারণ করে ফেলেছে। এরপর বাংলা ও ওড়িশা সংলগ্ন সমুদ্রে নিম্নচাপ তৈরি হলে ওই ঘূর্ণিঝড়ের ধেয়ে আসার প্রবণতা বাংলার দিকেই বেশি থাকবে বলে আবহবিদরা মনে করছেন।
ঘূর্ণিঝড় অশনির অভিমুখ কোনদিকে, জানাবে আইএমডি
তবে ঘূর্ণিঝড় অশনির অভিমুখ কোনদিকে হবে তা এখনও নিশ্চিত করে জানায়নি মৌসম ভবন। আবহবিদরা অনুমান করছে বাংলা বা ওড়িশার দিকে ধেয়ে আসতে পারে। সাইক্লোনটি বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের পর শক্তি বাড়াবে বলেও অভিমত তাঁদের। বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপ সিস্টেমের সঙ্গে মিশে তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
২০০০ থেকে ২০২১- প্রাক-মরশুমে ঝড়ের খতিয়ান
২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে ভারতীয় উপকূলে প্রাক-বর্ষা মৌসুমে কোনও ঝড় রেকর্ড করা হয়নি মাত্র তিন বছর। বিগত ১১ বছরে ভারতীয় উপকূলের যে কোনও দিকে অন্তত ১টি ঝড় দেখা গেছে। পাঁচ বছর ধরে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে দুটি করে ঘূর্ণিঝড় দেখা গেছে। ২০০৭ এবং ২০১০-এ তিনটি ঝড় রেকর্ড করা হয়। গত দশ বছরে প্রাক-বর্ষা মৌসুমে সর্বাধিক তিনটি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। সেগুলি বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে সমানভাবে হয়েছে।
ভারতীয় উপকূলে রেকর্ড সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় ২০১৯-এ
২০১৯ সালে ভারতীয় সমুদ্রে রেকর্ড সংখ্যক ৯টি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে ভারতীয় উপকূলে। গত ৫০ বছরের ইতিহাসে এটাই সর্বাধিক সংখ্যক ঘূর্ণিঝড়। ২০১৯-এ যে ৯টি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল তার নাম ছিল পাবুক, ফনি, বায়ু, হিক্কা, কায়ার, মহা, বুলবুল, পবন এবং টিএস ০৭এ বা জেটিডব্লিউসি। গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে প্রাক-বর্ষায় দুটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে। আম্ফান এবং নিসর্গ প্রাক বর্ষায় হয়েছিল। বর্ষা পরবর্তী সময়ে আরও তিনটি ঘূর্ণিঝড় হয়। মোট পাঁচটি ঘূর্ণিঝড় দেখা গিয়েছিল গত মরশুমে। ২০২১ সালে মোট পাঁচটি ঝড় বয়ে গিয়েছে। এবার প্রথম ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আছড়ে পড়েছিল তাউটে বা তাউকটে। তার পথ ধরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ঘূর্ণিঝড় গুলাব, ঘূর্ণিঝড় শাহিন আর সবশেষে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ বয়ে গিয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশীয় অঞ্চলের উপকূল দিয়ে।
মার্চে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা কতটা ভারতীয় ভূখণ্ডে
এবার মার্চে ঘূর্ণিঝড় অশনি ধেয়ে আসার সম্ভাবনা প্রবল। তবে মার্চের থেকে এপ্রিলে ঘূর্ণিঝড়ের ধেয়ে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে গত ১০০ বছরে মাত্র তিনটি ঘূর্ণিঝড় ঝড় তৈরি হয়েছে মার্চে। এই ঝড়গুলির মাসের শেষের দিকে গঠন হয়। রেকর্ড অনুসারে, মার্চ মাসে এমন কোনও ঝড় নেই যা আমাদের উপকূলবর্তী অঞ্চলে কোনও ক্ষতি করেছে।
এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা প্রবল
এপ্রিল মাসে আরব সাগরের চেয়ে বঙ্গোপসাগরের উপর ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ায় সম্ভাবনা বেশি। এই ঝড়গুলি সাধারণত মায়ানমার বা বাংলাদেশের দিকে চলে যায় এবং খুব কমই ভারতীয় উপকূলে আঘাত হানে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ফনি ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়েছিল। এটিকে আবহবিদরা ব্যতিক্রম বলেই ধরে নেয়। ১৯৯৯ সাল থেকে ওড়িশায় আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ছিল ফনি।
অশনি মার্চ মাসেই ধেয়ে এলে, তা হবে খানিক ব্যতিক্রম
এবার ঘূর্ণিঝড় অশনি মার্চ মাসেই ধেয়ে এলে, তা হবে খানিক ব্যতিক্রম। কারণ মার্চ মাসে বংলা বা ভারতীয় সমুদ্রের আবহাওয়ায় তেমন শক্তিশালী হতে পারে না ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু প্রকৃতি কখন কী রূপ নেবে, তা তো বলা যায় না। যেমন ফনি আছড়ে পড়েছিল ব্যতিক্রমী হিসেবেই। এবার অশনিও ধেয়ে আসতে পারে। সেই সম্ভাবনা থেকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন আবহবিদরা।
ঘূর্ণিঝড় অশনির নামকরণ, তারপর অপেক্ষায় যারা
এই অশনির নামকরণ করেছে শ্রীলঙ্কা। ২০২০ সালে তৈরি নামের তালিকার প্রথম সারির আর চারটি ঝড় রয়েছে। আবহবিদরা আগেই জানিয়েছিলেন, শীতের মরশুম শেষে গ্রীষ্মকাল এলেই অন্তত দু-তিনটি সাইক্লোন বাসা বাঁধবে বঙ্গোপসাগরের বুকে। সেইমতো প্রাক-গ্রীষ্ম মরশুমে সমুদ্রে বাসা বেঁধেছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। তাই সেই তালিকা অনুযায়ী এবার ঝড়ের নাম হতে চলেছে অশনি। তারপরের ঝড়টির নাম হবে সিতরাং এবং প্রথম সারিতে তারপর রয়েছে ম্যানডৌস ও মোচা। অশনির নাম দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাকি তিন নাম যথাক্রমে থাইল্যান্ড, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেনের। তারপর ফের শুরু হবে দ্বিতীয় সারির নামের ব্যবহার। প্রথমেই বাংলাদেশ তারপর একে একে ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেনের নাম দেওয়া ঝড়ের পালা।
বাংলায় তাপমাত্রার পারদ চড়ছে চৈত্রেই, দুর্যোগের আগে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের কোথায় কী পরিস্থিতি