ঘূর্ণিঝড় অশনি ভাঙতে পারে ৯৬ বছরের রেকর্ড! বিরল ঘটনা ১২৯ বছরের ঝড়ের ইতিহাসে
ঘূর্ণিঝড় অশনি ভাঙতে পারে ৯৬ বছরের রেকর্ড! বিরল ঘটনা ১২৯ বছরের ঝড়ের ইতিহাসে
এবার মার্চেই সাগরে বাসা বাঁধতে চলেছে ঘূর্ণিঝড়। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস তা শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসতে পারে বঙ্গোপসাগর উপকূলে। বাংলা ও ওড়িশা সংলগ্ন উপকূলের দিকে তা না আসার সম্ভাবনা একেবারে কম। মৌসম ভবন জানিয়েছে, এই ঝড় সরাসরি বাংলাদেশ ও মায়ানমার উপকূলে হানা দিতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অশনি নাম নিয়ে এই ঝড় যদি উপকূলে হানা দেয়, তবে ৯৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে যাবে। আবারও একটি ঘূর্ণিঝড় আছডে পড়বে সাগর-কূলে।
ঘূর্ণিঝড় অশনি বিরল ১২৯ বছরের ইতিহাসে
১২৯ বছরের ইতিহাস রয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের। সেই ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে মার্চ মাসে মোট আটটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে ছটি ঘূর্ণিঝড় বিলীন হয়ে গিয়েছে সাগরের বুকেই। সেই ঘূর্ণিঝড় কোনও উপকূলেই আছড়ে পড়েনি। শক্তি হারাতে হারাতে সাগরেই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দুটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে উপকূলে।
৯৬ বছর আগে তা আন্দামান উপকূল পার করে
যে দুটি ঘূর্ণিঝড় এখন পর্যন্ত সাগর উপকূলে আছড়ে পড়েছিল, তার মধ্যে শেষ ঝড়টি আছড়ে পড়েছিল ১৯২৬ সালে। অর্থাৎ ৯৬ বছর আগে তা আন্দামান উপকূল পার করে। তারপর ফের ঘূর্ণিঝড় অশনি হানা দিতে পারে উপকূল প্রান্তে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর যে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, তা আগামী রবিবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। পরের দিন ২১ মার্চ, তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এখন সেই ঝড় কোন অভিমুখে কোন রাজ্যের উপকূলে হানা দেয়, তা-ই দেখার।
মাত্র দুটি ঘূর্ণিঝড় উপকূলে, বাকি ছ’টির কী হল
মৌসম ভবন জানিয়েছে, ১৮৯১ সাল থেকে ২০২০২ সালের মধ্যে মার্চ মাসে মোট আটটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে। তার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছিল ৬টি ঘূর্ণিঝড় আর আরব সাগরে তৈরি হয়েছিল দুটি ঘূর্ণিঝড়। তার মধ্যে মাত্র দুটি ঘূর্ণিঝড় ভারতীয় উপকূলে আছড়ে পড়েছিল। বাকি ছ'টি ঘূর্ণিঝড়ের বিনাশ ঘটেছিল সাগরেই।
যদি তা হয়, সেটা হবে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ঘটনা
১৯০৭ সালের মার্চে একটি ঘূর্ণিঝড় শ্রীলঙ্কার উপকূলে হানা দিয়েছিল। আর ১৯২৬ সালের মার্চে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় তামিলনাড়ু উপকূল পার করে ঢুকেছিল স্থলভাগে। তারপর ফের ২০২২ সালের মার্চে ঘূর্ণিঝড় অশনি আন্দামান উপকূল পার করতে পারে বা আছড়ে পড়তে পারে ভারত বা বাংলাদেশের কোনও উপকূলে। তা যদি হয়, সেটা হবে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ঘটনা। এবং তা ঘটবে প্রায় ১০০ বছর পরে।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের মরশুম শুরু হতে না হতেই রেকর্ড
ভারতীয় মহাসাগরে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের মরশুম মার্চ থেকেই শুরু হয়ে যায় তা চলে জুন মাস পর্যন্ত। তারপর ফের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঝড়ের প্রবণতা থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্চ মাসে সাধারণ কোনও ঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ে না। এপ্রিল ও মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা বেশি থাকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর উপকূলে। জলবায়ুগতভাবে মার্চ মাসকে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম বলে মনে করা হয় না। এই সময়ে সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল পরিবেশ থাকে না।
বঙ্গোপসাগরে দাপিয়ে বেড়াবে ঘূর্ণিঝড় অশনি
কিন্তু ৯৬ বছর পর ২০২২-এ ফের ব্যতিক্রম ঘটতে চলেছে। ফের একবার মার্চ মাসে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, তা আগামী রবিবার অর্থাৎ ২০ মার্চ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। পরদিনই অর্থাৎ ২১ মার্চ সোমবার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ওই সিস্টেম। এরপর তা বঙ্গোপসাগরে দাপিয়ে বেড়াবে।
ভারতের যে উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা তীব্র
আবহবিদরা জানিয়েছেন, ওই ঘূর্ণিঝড় অশনি নাম নিয়ে রবিবার পর্যন্ত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপকূল বরাবর উত্তর দিকে যেতে পারে। তারপর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার সকালের দিকে বাংলাদেশ এবং উত্তর মায়ানমারের কাছে পৌঁছবে। তারপর তা উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন।
৯৬ বছর পর কোনও উপকূল ছুঁতে চলেছে ঘূর্ণিঝড়
এই পূর্বাভাস মিলে গেলে ঘূর্ণিঝড় অশনি ৯৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফের সাগর পেরিয়ে উপকূলে হানা দেবে। কেননা মার্চ মাসে সাধারণ কোনও ঘূর্ণিঝড় উপকূল পর্যন্ত ধেয়ে যেতে পারে না সাগরের প্রতিকূল আবহাওয়ায়। কিন্তু এবার ৯৬ বছর পর ফের কোনও উপকূল ছুঁতে চলেছে কোনও ঘূর্ণিঝড়। এই ঘটনা একেবারেই বিরল। ১৯২৬ সালের পর ঘূর্ণিঝড় অসম্ভবকে সম্ভব করবে প্রতিকূল অবস্থায় সাগরে শক্তি বাড়িয়ে। এখন এই ঘূর্ণিঝড় অশনি সাগরে ঘুরপাক খেয়ে কোনও উপকূলে হানা দেয় নাকি সাগরেই বিলীন হয়ে যায়, তা দেখার অপেক্ষায় আবহবিদরা।
বিশ্বজুড়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, অনেক দেশেই তোলা হচ্ছে বিধি নিষেধ