'ওরা আমাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে হামলা করেছিল, তাই বাধ্য হয়ে আমরা গুলি করি!'
হায়দরাবাদ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে সেই জায়গাটি। ২৭ নভেম্বর বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ব্রিজের নীচেই চিকিত্সক তরুণীর দেহ ধর্ষণের পর খুন করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
হায়দরাবাদ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে সেই জায়গাটি। ২৭ নভেম্বর বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ব্রিজের নীচেই চিকিত্সক তরুণীর দেহ ধর্ষণের পর খুন করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজ ভোরে সেই স্থানেই এনকাউন্টারে মারা যায় চার অভিযুক্ত।
দেশ জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এরপর দেশ জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে। সাধারণ মানুষ খুশি হলেও অনেকেই বলছে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত হয়নি। তবে ঘটনার প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর এই ঘটনার বিষয়ে মুখ খোলেন সাইবারাবাদ পুলিশের সিপি ভিসি সজ্জানার।
ভোর রাতে ঘটনার পুনর্নির্মাণ
আজ ভোর রাতে সাইবারাবাদ পুলিশ চার অভিযুক্তকে ঘটনার পুনঃনির্মাণ ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনাস্থলে। সাইবারাবাদ পুলিশ প্রধান ভিসি সজ্জানের দাবি, সেখানেই তারা পুলিশের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নিয়ে গুলির চেষ্টা করছিল। তাদেরকে বারবার তাদের থামার জন্য বলা হলেও তারা থামেনি। এরপর পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। গুলি বিনিময়ে মৃত্যু হয় চার জনেরই। মৃতদের নাম মহম্মদ, জলু শিবা, জলু নবীন ও চিন্তাকুন্তা চেন্নাকেশবালু। এদের মধ্যে মহম্মদের বয়স ২৬। বাকিদের বয়স ২০।
কাছাকাছি দুরত্বেই পড়ে ছিল মৃতদেহগুলি
মহম্মদ আরিফের পরনে ছিল একটি হলুদ একটি হলুদ টি-শার্ট ও জিন্স। তার সারা দেশে আর কোথাও ক্ষতের চিহ্ন নেই। শুধু পিঠে গুলির ক্ষত। তার কিছু দূরেই পরে ছিল জলু শিবা। সে একটি সাদা শার্ট পরে ছিল। তার বুকে গুলি লেগেছে। জলু নবীনের পরনে ছিল কমলা একটি টি-শার্ট। তার দেহও কিছুটা দূরেই পরেছিল। নবীনের দেহের ১০ মিটার দূরে পরে ছিল মহম্মদের দেহ। সে পরে ছিল একটি নীল রঙের টি-শার্ট। এদের দেহ আজ দুপুর ৩টে নাদাগ ঘটনাস্থল থেকে সরানো হয়।
ভি সি সজ্জানার বক্তব্য
এর আগে ভোর সাড়ে ৩টের সময় হায়দরাবাদ গণধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত ৪ জনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ঘটনাস্থলে৷ সাইবারাবাদ পুলিশের কমিশনার ভি সি সজ্জানার বলেন, 'ওদেরকে আমরা জেরা করছিলাম৷ কী ভাবে ঘটনাটি ঘটায় ওরা৷ হঠাত্ ওরা আমাদের উপর হামলা চালায়৷ তারপর পালাতে শুরু করে৷ আমরা ওদের আত্মসমর্পণ করতে বলি৷ ওরা শোনেনি৷ কোনও উপায় না দেখে আমরা গুলি চালাই৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৪ জনের৷'
'আইন নিজের কর্তব্য করেছে'
সাইবারাবাদ পুলিশ প্রধান ভিসি সজ্জানার বলেন, 'আইন নিজের কর্তব্য করেছে।' অভিযুক্তরা কী ভাবে পুলিশের উপর হামলা চালায়। সেই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, 'অভিযুক্তরা আমাদের পাথর ও ধারালো বস্তু ছুঁড়ে মারছিল এবং আমাদের আগ্নেয়াস্তর কেড়ে নিতে চাইছিল। তাই পাল্টা গুলি চালাতে হয় আমাদের।'
২০০৮ সালের ছায়া
শামশাবাদের যে জায়গায় ২৬ বছরের তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে, সেখানেই ঘটনার পুননির্মাণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় অভিযুক্তদের। পরে ঘটে যায় এনকাউন্টার। আর ২০০৮ সালেও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাসিড হামলার অভিযুক্তদের ধরা পড়ার পর একইভাবে ঘটনার পুননির্মাণের জন্য ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। আর তারপরই ঘটে যায় সেদিনের এনকাউন্টার।
'জনরোষ থেকে অভিযুক্তদের বাঁচাতেই ভোররাতকে বেছে নেওয়া হয়েছিল'
তেলাঙ্গানা ধর্ষণকাণ্ডের পুননির্মাণের জন্য কেন ভোররাতেই পুলিশ সামসাবাদের ঘটনাস্থহলে ৪ অভিযুক্তকে নিয়ে গেল? কেন সকালের দিকে তাদের সেখানে নেওয়া হল না? এমন প্রশ্ন বহু মহল থেকেই উঠতে শুরু করে দিয়েছে। জার জবাবে পুলিশের দাবি, রাজ্য জুড়ে ক্রমাগত অভিযুক্তদের সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি উঠছিল। আর সেই দাবি ঘিরে পুলিশ অভিযুক্তদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিল। সকালের দিকে ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্তদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল তেলাঙ্গানা প্রশাসনের। কারণ আপাতত অভিযুক্তরা বিচারাধীন ও তাদের দায়িত্ব প্রশাসনের হাতে ছিল। তাই ভোররাতে জনসমাগম বেশি হবে না ভেবেই সেই সময়কে বেছে নেওয়া হয় বন্দিদের নিরাপত্তার খাতিরে।
হায়দরাবাদ গণধর্ষণে অভিযুক্তদের এনকাউন্টার ঘিরে উঠতে শুরু করেছে একাধিক প্রশ্ন