মুম্বইয়ে ভেঙে পড়া বিমানটি ছিল ওড়ার অযোগ্য, বৃষ্টির মধ্যে টেস্ট ফ্লাইট কেন - উঠছে প্রশ্ন
মুম্বইয়ে ভেঙে পড়া বিমানটির ওড়ার সংশাপত্র ছিল না।
মুম্বইয়ের ঘাটকোপারে ভেঙে পড়া চাটার্ড বিমানটি ছিল ২৬ বছরের পুরনো ৭ আসন বিশিষ্ট কিং এয়ার সি ৯০। তার ওড়ার সংশাপত্রও ছিল না। উত্তরপ্রদেশ সরকার ২০০৯-এ একটি ক্র্যাশ-এ বিমানটির বড়সড় ক্ষতি হওয়ার পর বিমানটি নিলামে বিক্রি করেছিল । বৃহস্পতিবার পরীক্ষামূলক উড়ানের সময়ই ভেঙে পড়ে সেটি।
বিমানটিতে ৪ জন কর্মী ছিলেন। দুই পাইলট, ক্যাপ্টেন প্রদীপ রাজপুত ও ক্যাপ্টেন মারিয়া জুবেরি ছাড়াও ছিলেন এয়ারক্রাফ্ট মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার সুরভি গুপ্তা ও জুনিয়র টেকনিশিয়ান মণীশ পান্ডে। মাটি থেকে ৭০০ ফুট উপর দিয়ে ওড়ার সময়ই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। ভেঙে পড়ে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির উপর। বিমানের ৪ জনের সঙ্গেই দুর্ঘনায় মৃত্যু হয় গোবিন্দ দুবে নামে এক নির্মাণ কর্মীরও। তবে অন্তত ৩৫ জন নির্মাণকর্মী অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। লাঞ্চ ব্রেক উপলক্ষ্যে তাঁরা সেসময় নিচের ফ্লোরে ছিলেন।
এখনও অবধি বিমানটি ভেঙে পড়ার পিছনে যান্ত্রিক ত্রুটিকেই দায়ী করছেন তদন্তকারীরা। তবে আশ্চর্যের হল, বিমানটি থেকে কোনও বিপদে পড়ার বার্তা বা সঙ্কেত দেওয়া হয়নি। জানা গিয়েছে রীতিমতো পূজো-টুজো করেই বেলা ১২টা বেজে ২০ মিনিট নাগাদ জুহু বিমানবন্দর থেকে দুই ই্জিন বিশিষ্ট এই বিমানটি ৫০ মিনিটের পরীক্ষামূলক উড়ানের জন্য রওনা দিয়েছিল।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন বিমানটির মালিকানা প্রথমে ছিল উত্তরপ্রদেশ সরকারের হাতে। কিন্তু ২০০৯-এ এলাহাবাদে একটি ক্র্যাশ ল্যান্ডিং-এ বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যয় করে বিমানটি সারাতে রাজি হয়নি সরকার। বদলে বিমানটি নিলামে কেনে পুনের একটি সংস্থা। তারাও আবার পরে বিমানটি বিক্রি করে দেয় মুম্বইয়ের ইউ ওয়াই এভিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডকে।
মুম্বইয়ের এই সংস্থাই বিমানটির বর্তমান মালিক ছিল। কিন্তু সংস্থার ম্যানেজার অনিল চৌহান জানিয়েছেন বিমানটির ওড়ার অযোগ্য ছিল। তাই তারা ইন্ডামের নামে একটি বিমান সারাই সংস্থার কাছে বিমানটি সারাবার জন্য পাঠিয়েছিলেন। ইন্ডামেরেরই একটি হ্যাঙ্গারে গত একবছর ধরে পড়ে ছিল বিমানটি। বৃহস্পতিবার, প্রায় ৬ বছর পর যাত্রা করে বিমানটি।
তবে বিমানটি কেন ভেঙে পড়ল তার তদন্ত করছে ডিজিসিএ। তবে বিমানটির এই পরীক্ষামূলক উড়ান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্বয়ং ইন্ডামের সংস্থার অন্দরেই। এক কমান্ডার জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলক উড়ান হয় পরষ্কার আবহাওয়ায়। খারাপ আবহাওয়ায় তা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ব-হস্পতিবার সকাল থেকেই মুম্বইয়ে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। তবে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্যেও অনেকেই একটি বিষয় ভেবে স্বস্তি পাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন মুম্বইয়ের ওই ঘিঞ্জি এলাকায় কোনও বহুতলে যদি বিমানটি ধাক্কা মারত তাহলে অনেক বড় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা ছিল।