ক্রমেই বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ, নতুন করে উদ্বেগ চাড়া দিচ্ছে পিনারাই বিজয়নের কেরলে
ভারতে নোভেল করোনা ভাইরাসের উৎসকেন্দ্র কেরলে প্রায় সাড়ে চার মাস পর প্রথমবার দশ হাজার আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেল। বুধবার এ রাজ্যে একদিনে দশ হাজারের বেশি নতুন আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। একটা সময় ছিল যখন কেরলকে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের কাছে মডেল হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই রাজ্যেই বেশ কিছু সপ্তাহ যাবৎ মহারাষ্ট্র ও কর্নাটককে বাদ দিয়ে প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

বৃদ্ধি পেয়েছে সক্রিয় কেস
সেপ্টেম্বরের পর থেকে কেরলে ১.৯৩ লক্ষের বেশি কেস যুক্ত হয়েছে, এটি বর্তমানে ২.৬৮ লক্ষ করোনা বোঝার ৭০ শতাংশের বেশি। কারণ বেশিরভাগই সম্প্রতি আক্রান্ত হয়েছে। মহারাষ্ট্র ও কর্নাটককে বাদ দিয়ে কেরলের সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি। এটি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ বলে মনে হয়।

সক্রিয় আক্রান্ত বৃদ্ধির কারণ
রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী কে কে শৈলজা এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘দৈনিক ২০ হাজার আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। এটিকে দৈনিক ১৫ হাজারের নীচে করার প্রচেষ্টা করছি আমরা। আমরা আশা করছি নভেম্বরে এই সংখ্যায় আমরা পৌঁছাতে সফল হব।' দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পেছনে শৈলজা বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জুন এবং সেপ্টেম্বরের মাঝে, প্রায় লয় লক্ষ মানুষ রাজ্যে ফিরে এসেছেন। কেরল এমনিতেই খুব ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা। এরপর আমাদের ওনাম উৎসব ছিল এবং উৎসবের সময় মানুষ যথাযথভাবে নিয়ম পালন করেননি। অতএব অগাস্টে গিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এরপর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দেখিয়েছিল বিরোধীরা এবং সেখানে বিশাল বড় জমায়েত হয়েছিল। এই ঘটনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সরকারকে এও অমুভব করিয়েছে যে তারা অপ্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।' স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল মানুষকে দায়িত্ববান হতে শেখানো। আমরা চাই কেরলবাসী সামাজিক দুরত্ব বিধি যথাযথভাবে মেনে চলুক এবং আমরা আমাদের নিষেধাজ্ঞাগুলিকে শিথিল করতে পারি না। আমি আশা করি লোকেরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আচরণ করবে।'

কেরল এখন করোনা শিখরের পর্যায়ে
সরকারের সামাজিক বিচার বিভাগের অন্তর্গত কেরল সামাজিক সুরক্ষা মিশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডঃ মহম্মদ আশহিল এ প্রসঙ্গে জানান যে এই বৃদ্ধি অবাক কার মতো নয়। কেরল অনেক দেরীতে এই শিখরে পৌঁছেছে, কিন্তু এই জায়গা থেকে পালিয়ে মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন,‘মে, জু ও জুলাই মাসে ধারণা করা হয়েছিল যে কেরল হয়ত মহামারিটি জয় করে ফেলেছে। কিন্তু আদপে কেরল তা পারেনি। কেরল কোনও দ্বীপ নয় যেখানে কেউ আক্রান্ত হলে তাঁকে আইসোলেট করে রাখা যাবে এবং এরপর তুমি মহামারি জয় করবে।' তিনি বলেন, ‘মানুষের চলাচল তো চলবেই। প্রতিবেশী কর্নাটক ও তামিলনাড়ুতে উচ্চ সংখ্যায় করোনা আক্রান্ত রয়েছে। প্রবাসীরা ফিরে আসছেন, সুতরাং ভাইরাস তো রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়বেই।' তিনি আরও বলেন, ‘কেরল সরকার যা করতে পেরেছিল তা হল অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক দেরিতে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। জাতীয় লকডাউনের লক্ষ্যও একই ছিল। কেরল জাতীয় লকডাউনের সঙ্গে অন্যান্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেমন কার্যকর কোয়ারান্টাইনকে সঙ্গী করে রাজ্যে সংক্রমণের হার অনেক দেরি করিয়েছিল। কিন্তু স্থায়ীভাবে তা বিলম্ব হতে পারেনি। মহামারি এখনও একই জায়গায় রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।' ডঃ আশহীল বলেন, ‘দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ অথবা দশ হাজা হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, জরুরি হল আমাদের জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো পাঁচ বা দশ হাজার রোগীর প্রতিদিন চিকিৎসা করতে সক্ষম। এই মাসে কেরল দারুণভাবে কাজ করবে বলে আমি আশা রাখছি এবং বৃদ্ধি পাওয়া আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাবে।' আর এক বিশেষজ্ঞ ডাঃ বি ইকবাল জানিয়েছেন যে কেরলের এই বৃদ্ধি নিয়ে এতটা বিস্ময় হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি রাজ্যটি করোনা শিখর পেরোচ্ছে। সমস্ত রাজ্য এবং দেশকে বিভিন্ন সময়ে এই জাতীয় পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।'

কেরলে কমেছে করোনা টেস্ট
তবে এটাও সত্যি যে গত এক-দু'মাসে কেরলে টেস্টের পরিমাণ অনেক কম দেখা দিয়েছে। জুন পর্যন্ত কেরলে দৈনিক করোনা টেস্টের সংখ্যা ছিল ৫ থেকে ৬ হাজারের মতো, যেখানে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ, যাদের কেসের বোঝা অনেক বেশি, সেখানে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ হাজারের বেশি করোনা টেস্ট করা হয়। তবে গত তিন সপ্তাহে কেরলে টেস্ট বৃদ্ধি পেয়েছে, দৈনিক ৪০ হাজারের বেশি টেস্ট হচ্ছে, যা কিছুদিনের মধ্যেই ৬০ হাজারে পৌঁছাবে।