বিধানসভা ভোটের মুখে বিহারে কমছে কোভিড সংক্রমণ, কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা
বিধানসভা ভোটের মুখে বিহারে কমছে কোভিড সংক্রমণ, কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা
একে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ তার ওপর আবার বিধানসভা নির্বাচন। সব মিলিয়ে টইটুম্বুর অবস্থা বিহারের। নির্বাচনের সময় জমায়েত নিয়ন্ত্রণ করতে ও নিয়ম–নীতি মেনে চলার জন্য নির্বাচন কমিশন কিছু উপদেষ্টা জারি করতে পারে। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলি যাতে কোভিড–১৯–এর আচরণবিধি মেনে চলে আর জন্য তাদের নির্দেশও দিতে পারে কমিশন। কিন্তু এ সবের মধ্যেই বিহারে দেখা গেল একটি উল্লেখযোগ্য চিত্র।
করোনা পজিটিভে লাদাখের পর বিহারের নাম
বিহারে দৈনিক দেড় লক্ষ নমুনার করোনা টেস্ট হয়। জানা গিয়েছে, ১৮-২৪ অক্টোবর টেস্টে পজিটিভ হার ছিল ০.৯ শতাংশ, যা লাদাখের পরই দ্বিতীয় স্থানে, জাতীয় গড় যেখানে ৪.৭১ শতাংশ। এছাড়াও দেশের মধ্যে বিহারে মৃত্যুর হারও অনেক কম ০.৫১ শতাংশ। যেখানে দেশে জাতীয় মৃত্যুর হার ১.৫১ শতাংশ। দেশের মধ্যে বিহারের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিম্নস্তরের হওয়া সত্ত্বেও এই ফলাফল দেখা যাচ্ছে। ২০১৮ সালের জাতীয় স্বাস্থ্য প্রোফাইল অনুযায়ী, বিহারে মোট ৪০,৬৪৯ অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক রয়েছেন, একজন চিকিৎসকের ওপর ২,৪৩৫ জন মানুষের চাপ পড়ে, যেখানে জাতীয় গড়ে দেখা গিয়েছে একজন চিকিৎসকের ওপর ১,১৬৯ জন রোগীর চাপ রয়েছে।
সক্রিয় কেসের সংখ্যা মাত্র ১০ হাজারের বেশি
সোমবার রাজ্যে ২,১২,১৯২টি কেস রিপোর্ট হয়েছে, যেখান থেকে মাত্র ১০,২২৩টি সক্রিয় কেস। সোমবার এ রাজ্যে দৈনিক ৭৪৯টি কেস ও সাতজনের মৃত্যু রিপোর্ট হয়েছে এবং একদিনে ১,৩৯,২১৮টি টেস্ট হয়েছে, যার অর্থ ০.৫ শতাংশ নমুনা পজিটিভ এসেছে। সোমবার দেশে এই সংখ্যাটা ছিল ৪.৮ শতাংশ। বিহারে মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানে ১,০৪৯। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাতকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ স্বাস্থ্য গবেষক, যিনি কিছু সময় আগে ক্ষুদ্র-স্তরের কোভিড ডেটা ট্র্যাক করছিলেন তিনি বলেন, ‘বিহারের ডেটা কাগজের ওপর দেখতে খুব ভালো লাগছে, অথচ এটা দেশের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য। কিছু তৈরি করার জন্য আমাদের আরও কিছু তথ্য লাগবে।' তিনি আরও বলেন, ‘উদাহরণ স্বরূপ, টেস্টের ধরণ, টেস্টগুলি যেখানে প্রকৃতপক্ষে সম্পন্ন হয় ইত্যাদি। এগুলি সহায়তা করবে। করোনা সংক্রমণ যদি এখন থেকে দু'সপ্তাহ পর বা তার বেশি ছড়িয়ে না পড়ে তবে এটা কোনও যাদু এবং এটা এভাবে ব্যাখা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।' আসলে বিহারে কোভিড রোগীর সংখ্যা দ্রুত কম হওয়ার কারণে বিশেষজ্ঞরা সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছেন।
বিহারবাসী করোনা নিয়ম মানেন না
পাটনা এইমসের ডিরেক্টর ডাঃ পি কে সিং বলেন, ‘এটা খুব কঠিন ব্যাখা করা। বিশ্বের সঙ্গে ভারতকে তুলনা করা যতটা কঠিন ঠিক তেমনি এখন ভারতের সঙ্গে বিহারকে তুলনা করা বেশ কঠিন।' তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি এখানকার মানুষরা মাস্ক পরেন না, সামাজিক দুরত্ব মেনে চলেন না, তাদের আচরণ এমনই যে সংক্রমণকে সমর্থন করে কিন্তু তাও এ রাজ্যে করোনার সংখ্যা কম।' তিনি জানিয়েছেন যে করোনা টেস্টও পর্যাপ্ত ছিল। পি কে সিং বলেন, ‘আপনি বলতে পারবেন না পর্যাপ্ত পরিমাণে টেস্ট হচ্ছে না কারণ পজিটিভ কেসের সংখ্যা খুবই নিম্নমুখী, একটা রাজ্যে শুধু তিন শতাংশ ছাড়া বাকি রাজগুলিতে পজিটিভ কেসের হার ০.৭-০.৯ শতাংশ রয়েছে।' কোনও কারণ নেই টেস্টিং বাড়ানোর। রোগ প্রতিরোধের কারণও এখানে ব্যাখা করা যাবেনা, কারণ রোগ প্রতিরোধ রয়েছে এমন মানুষও সংক্রমিত হয়েছে, বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন এটা নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে।
গণ পরিবহন ব্যবহার করেন না অধিকাংশ বিহারের বাসিন্দা
স্বাস্থ্যের মুখ্য সচিব প্রত্যয় অমৃতও জানেন না কেন রাজ্যে এত কম সংক্রমণ। বরং তিনি জানিয়েছেন যে তাঁর এ বিষয়ে কোনও ধারণা নেই, বরং চিকিৎসকদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হোক। কিন্তু কোভিড নীতিমালা মেনে চলার বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে এবং তিনি এতে সন্তুষ্ট কিনা, তাতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা কীভাবে খুশি হতে পারি? এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।' কিন্তু রাজ্যের বিজেপি সভাপতি তথা চিকিৎসক ডাঃ সঞ্জয় জয়সওয়াল এই কম সংখ্যার পেছনে এক তত্ত্ব রয়েছে বলে জানান। তিনি জানান যে আসলে বিহারে সেভাবে কোনও শিল্প-বাণিজ্য গড়ে ওঠেনি, যা রাজ্যের পক্ষে সুবিধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি এও জানান যে বিহারবাসী এখনও পর্যন্ত গণ পরিবহন বা ট্রেন ব্যবহার করছেন না। মানুষ বাজারে যাচ্ছে বা ক্ষেতে কাজ করছে এবং সোজা বাড়ি ঢুকছে। আঁরা নয় হেঁটে অথবা বাইকে যাতায়াত করছেন। খুব কং সংখ্যক মানুষই গণ পরিবহনে যাতায়াত করছেন। সম্ভবত এটাই কারণ হতে পারে বিহারে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা কম হওয়ার।
৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবায় নিষেধাজ্ঞা লাগু