ঊর্ধ্বমুখী কোভিড সংক্রমণে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কী ধরনের লকডাউন–কার্ফু জারি দেখে নিন
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কী ধরনের লকডাউন–কার্ফু জারি দেখে নিন
দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভের মহামারি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধি ক্রমেই উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই ভাইরাস দমনে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি টেস্ট বৃদ্ধির পাশাপাশি আংশিক লকডাউন ও সপ্তাহান্তে বা নৈশ কার্ফু জারি করেছে। শুক্রবার ভারতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২,১৭,৩৫৩, যা দেশের মোট সংক্রমণের সংখ্যাকে নিয়ে গিয়েছে ১,৪২,৯১,৯১৭–তে। দেশে সক্রিয় করোনা কেসের সংখ্যা ১৫ লক্ষের অধিক। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন রাজ্যের কি কি ধরনের লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
চণ্ডীগড়
চণ্ডীগড় প্রশাসন সপ্তাহান্তের লকডাউন ঘোষণা করেছে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিতে, যা শুক্রবার রাত ১০টা থেকে সোমবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত জারি থাকবে। তবে লকডাউনের আওতা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে জরুরি পরিষেবা ও ক্রিয়াকলাপ এবং হোম ডেলিভারিকে এবং বাসিন্দাদের বাড়ির ভেতর থাকার আর্জি জানানো হয়েছে। যদি কেউ চণ্ডীগড়ে আসতে চান তবে তার আগে তাঁকে কোভা পাঞ্জাব অ্যাপে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
উত্তরপ্রদেশ
উত্তরপ্রদেশ সরকার রবিবার রাজ্যজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'রবিবার গ্রাম ও শহরের সমস্ত কিছু বন্ধ রাখা হবে। এই সময় শুধুমাত্র স্যানিটাইজেশনের কাজ ও জরুরি পরিষেবাগুলি পরিচালিত হবে। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সচেতনতামূলক কাজও চলবে।' রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এও ঘোষণা করা হয়েছে যে মাস্ক ছাড়া ধরা পড়লে তাঁদের ১০০০ টাকা জরিমানা করা হবে এবং একই ব্যক্তি পুনরায় সেই কাজ করলে সেক্ষেত্রে দশ হাজার টাকা জরিমানা। মহারাষ্ট্র ও কেরল থেকে এ রাজ্যে আসা যাত্রীদের ৭২ ঘণ্টা আগে করা আরটি-পিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট বহন করা বাধ্যতামূলক।
মহারাষ্ট্র
মহারাষ্ট্রে ১৫ দিনের জনতা কার্ফু জারি করা হয়েছে যা বুধবার সকাল ৭টা থেকে শুরু করে ১ মে পর্যন্ত চলবে। নাগরিকদের কার্যকলাপের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কোনও জন লমাগম বা ভিড় যাতে না হতে পারে তার জ্য রাজ্য জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। গোটা রাজ্যেই লকডাউনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, ওষুধের সরবরাহ সহ সব জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে এই সময়। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের জন্য স্থানীয় পরিবহনও পরিষেবা দেবে।
দিল্লি
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বৃহস্পতিবার কড়া নিষেধাজ্ঞা সহ সপ্তাহান্তে কার্ফুর ঘোষণা করেন। এছাড়াও শপিং মল, জিম, স্পা ও অডিটোরিয়ামও বন্ধ রাখা নির্দেশ দেন। জাতীয় রাজধানীতে করোনার চেইন ভাঙতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাঁরা টিকাকরণের জন্য যাবেন তাঁদের কার্ফু পাসের প্রয়োজন। সংবাদমাধ্যমদের এই কার্ফু থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে এই সময় কোনও বিয়ের অনুষ্ছান হলে তাতে ৫০ জন অতিথি ও শেষকৃত্যে ২০ জন থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। খাবার, মুদিখানার জিনিস, ফল, সবজি এবং দুগ্ধজাত জিনিস কেনার হলে বাসিন্দাদের কার্ফু পাসের প্রয়োজন।
মধ্যপ্রদেশ
মধ্যপ্রদেশ সরকার একটি আদেশ জারি করে জানিয়েছে যে কোভিড-১৯ সংক্রমণকে দমন করার জন্য কিছু নিষেধাজ্ঞা 'করোনা কার্ফু'র আওতায় করা হয়েছে, তবে এটিকে লকডাউন হিসাবে অভিহিত যেন না করা হয়। এই আদেশে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ইন্ডাস্ট্রি, মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠান, নির্মাণ কাজ, ওষুধের দোকান, মুদিখানা এইগুলি করোনা কার্ফুর সময় চালু থাকবে। মহারাষ্ট্র ও ইন্দোর থেকে আসা যাত্রীদের রাজ্যে প্রবেশের ৪৮ ঘণ্টা আগে আরটি-পিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট বহন করতে হবে।
কর্নাটক
কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা কোভিড-১৯ পর্যালোচনা করে শনিবার ঘোষণা করেছেন যে বেঙ্গালুরু সহ সাত জেলায় চলা নৈশ কার্ফু এখন জারি থাকবে। তবে এটাকে তিনি লকডাউন বলতে নারাজ। এইসব জেলায় রাত দশটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কার্ফু চলবে। কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলি হল, বেঙ্গালুরু, মাইসোর, ম্যাঙ্গালুরু, কালাবুরাগি, বিদার, তুমকুরু, উদুপি এবং মণিপাল।
পাঞ্জাব
পাঞ্জাব সরকার গোটা রাজ্য জুড়ে রাত ৯ টা থেকে সকাল ৫ টা পর্যন্ত নৈশ কার্ফু জারি করেছে। যা চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং ঘোষণআ করে জানিয়েছেন যে সব ধরনের জন সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ও রাজ্যের সব স্কুল বন্ধ রাখা হবে।
রাজস্থান
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট রাজ্যে বাড়তে থাকা কোভিড-১৯-এর জেরে ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৯ এপ্রিল ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সপ্তাহান্তের লকডাউন জারি করার কথা ঘোষণা করেছে। বিয়ে ও শেষকৃত্যে সীমিত সংখ্যায় লোক এবং জন সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে এই কার্ফু থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্ক, এলপিজি পরিষেবা, ফল-সবজি ও দুধ বিক্রেতাদের।
উত্তরাখণ্ড
কুম্ভ মেলার কারণে উত্তরাখণ্ডে করোনা ভাইরাস কেসগুলি তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রাজ্যে প্রতিদিন রাত সাড়ে দশটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নৈশ কার্ফু জারি রয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি। ৫০ শতাংশ আসন নিয়ে বাস, অটো ইত্যাদি চলবে। জিমেও ৫০ শতাংশ ক্ষমতা নিয়ে পরিচালনা করতে হবে। কোচিং সেন্টার, স্যুইমিং পুল ও স্পা পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ধর্মীয় সহ অন্যান্য সমাবেশে ২০০ জনের বেশি লোক নয়।
হরিয়ানা
রাত ১০ টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত হরিয়ানায় নৈশ কার্ফু জারি রয়েছে। যদিও এ রাজ্যে লকডাউন বা সপ্তাহান্তে কার্ফু কার্যকর করা হয়নি। ৩০ এর্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে রাজ্যের সব স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার, লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি।
গুজরাত
গুজরাত সরকার রাত ৮ টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২০ টি শহরে নৈশ কার্ফু জারি করেছে। আহমেদাবাদ, সুরত, ভদোদরা, রাজকোট, জামনগর, ভাবনানগর, জুনাগড়, গান্ধীনগর, আনন্দ, নাদিয়াদ, মেহসানা, মোড়বি, দাহোদ, পাটান, গোধরা, ভূজ, গান্ধিধাম, ভ্রুচ, সুরেন্দ্রনগর ও আমরেলিতে হাইকোর্টের নির্দেশে কার্ফু জারি রয়েছে। এ রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক।
ওড়িশা
রাজ্য সরকার রাত দশটা থেকে সকাল ৫ টা পর্যন্ত রাজ্যের ১০ জেলায় নৈশ কার্ফু আরোপ করেছে। এই জেলাগুলি হল, সুন্দরগড়, বারগড়, ঝাড়সুগুদা, সম্বলপুর, বালানগীর, নুয়াপাডা, কালাহান্দি, মালকানগিরি, কোরাপুট এবং নবরঙ্গপুর।
কেরল
কেরল সরকার রাজ্যে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যার মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লোকসংখ্যা সীমিত ও সময়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রাজ্যের দোকান রাত ৯টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হবে এবং হোম ডেলিভারি করা যাবে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলি ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত থাকবে। বাইরের অনুষ্ঠানে ২০০ জন এবং বৈঠক-আলোচনা বা ঘর বা অডিটোরিয়ামের ভেতর হচ্ছে এমন জায়গায় ১০০ জনের বেশি লোক নয়।
জম্মু–কাশ্মীর
জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন আটটি জেলায় নৈশ কার্ফু জারি করেছে। এই জেলাগুলি হল, জম্মু, উধমপুর, কাঠুয়া, শ্রীনগর, বারামুল্লা, বদগাম, অনন্তনাগ এবং কুপওয়ারা।
ছত্তিশগড়
ছত্তিশগড়ের সুকমা ও দুর্গে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। দুর্গের সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে, একমাত্র ই-পাস দেখালে তবেই প্রবেশ মিলছে। তবে জরুরি পরিষেবা ও সেই সংক্রান্ত দোকান খোলা রয়েছে। ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিস সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। দুপুর ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নৈশ কার্ফু জারি থাকবে। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার অনুমতি রয়েছে।