করোনায় বাড়ছে মৃত্যু, দেশজুড়ে শ্মশান ও কবরস্থানে স্তূপাকার কোভিড রোগীর মৃতদেহ
দেশজুড়ে শ্মশান ও কবরস্থানে স্তূপাকার কোভিড রোগীর মৃতদেহ
তবে কি সত্যি গত বছরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ফিরতে চলেছে? দেশের করোনা পরিস্থিতি দেখে অন্তত সেরকমটাই মনে হচ্ছে। শুধু গুজরাত নয়, গোটা দেশের শ্মশান ঘাট ও কবরস্থানে উপচে পড়ছে কোভিড মৃতদেহ। এখানে কর্মরত কর্মীরা অতিরিক্ত সময় কাজ করেও থামতে পারছেন না। এটাই প্রমাণ করছে যে দেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ক্রমশঃ বাড়ছে।
শ্মশানঘাটে অনবরত পুড়ছে কোভিড দেহ
সোমবার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা তীব্রভাবে লাফ মেরে তা ভারতকে ব্রাজিলের আগে নিয়ে যেতে সফল হয়েছে। এখন ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। গত ১০ দিনে এই দেশে সংক্রমণ এতটাই বেড়েছে যে ভারতে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৭ কোটি। মঙ্গলবার ভারতে নতুনভাবে ১৬১,৭৩৬টি নতুন কেস ও ৮৭৯টি মৃত্যু রিপোর্ট হয়েছে। এই পরিসংখ্যান জানুয়ারির থেকে চারগুণ বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমদের রিপোর্ট অনুযায়ী শ্মশানঘাটে অনবরত চলমান জ্বলন্ত চুল্লি, মৃতদেহের স্তুপ ও ক্রমাগত পোড়া দেহের দুর্গন্ধ স্থানীয়দের জন্য এন্য এক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
দেশে বাড়ছে করোনায় মৃত্যু
দেশের ৬টি শ্মশানঘাটের কর্মীরা এটা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে তাঁরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন কোভিড-১৯-এর মৃতের সংখ্যা ক্রমশঃ বাড়ছে। গুজরাতের শিল্প শহর সুরাতের এক শ্মশানঘাট পরিচালনা করে ট্রাস্ট্রের সভাপতি কমলেশ সেলর বলেন, 'এর আগে একদিনে ১৫ থেকে ২০ টি দেহ আসত আর এখন ৮০ থেকে ১০০টি মৃতদেহের চাপ থাকে রোজ।' প্রসঙ্গত, ভারতে করোনার প্রথম ওয়েভের সময়ই শ্মশানঘাটের ক্ষমতা দ্বিগুণ করে দেওয়া ও তা ২৪ ঘণ্টা পরিচালনা করা সত্ত্বেও, প্রিয়জনের দেহ পোড়ানোর জন্য পরিবারকে কমপক্ষে ২ থেকে তিনঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সভাপতি। সেলর বলেন, 'শ্মশানঘাটে দীর্ঘক্ষণ মানুষকে লাইনে দাঁড় করানোর সামর্থ আমাদের নেই, কারণ তা ফের সংক্রমণের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেবে।' তিনি আশঙ্কা করছেন যে পরিস্থিতি এতটাই খারাপের দিকে এগোচ্ছে যে দেশজুড়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জন সমাগম
দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর প্লাবন এটাই প্রমাণ দিচ্ছে যে সাম্প্রতিক এই মহামারির ওয়েভ রোধ করতে নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসন কতটা অপ্রস্তুত ছিল। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনী জনসভায় প্রচুর মানুষের সমাগম হতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশজুড়ে চলা বিভিন্ন উৎসব ও ধর্মীয় তীর্থস্থানেও মানুষের ঢল নেমেছে। এটা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দেশ ও দেশের শ্মশানঘাটগুলির পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে।
অনেক মৃত্যু রিপোর্ট হয়নি
দেশে করোনায় মৃত্যু সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে ভারতে এখনও অনেক মৃত্যুর রিপোর্ট হয়নি। করোনার দ্বিতীয় হামলার আগেই মৃত্যুর রেজিস্ট্রেশন ছিল অদ্ভুত। বিশেষ করে গ্রামের বাড়িগুলিতে করোনায় মৃত্যুর সরকারি খাতায় নথিভুক্ত হয়নি। বরং মৃত্যুর কারণ হিসাবে লেখা হয়েছে বয়সজনিত কারণ ও হৃদরোগ। বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, ভারতে শুধুমাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মৃত্যুর ক্ষেত্রে যথাযথ মেডিক্যাল শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন ফুটেজে দেখানো হয়েছে যে হাসপাতালের দীর্ঘ লাইন, গুরুতরভাবে ওষুধের ঘাটতি এবং আরও একটি লকডাউনের আতঙ্কে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার হিড়িক মনে করিয়ে দিচ্ছে গত বছরের করোনা ভাইরাসের জেরে লকডাউন হওয়ার স্মৃতি, যা মানুষের জীবনকে বিপর্যয় করে তুলেছিল। দিল্লি ও মুম্বইয়ে বেসরকারি শেষকৃত্য পরিষেবাকারী অন্তিম যাত্রার সিইও নম্রতা সিং বলেন, 'জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে অনেক কম সংখ্যক করোনা মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু গত তিন সপ্তাহে কোভিড মৃতের সংখ্যা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে।'
মৃত্যু বাড়ছে দিল্লিতেও
দেশের রাজধানী দিল্লিতে সবচেয়ে বড় কবরস্থান ও শ্মশানঘাটগুলিতে দিনে গড়ে ৮-৯টি কোভিড দেহ আসছে, যা এক-দু'মাস আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণ ১১ হাজারের ওপর যাওয়ায় তারা এখন বেশি করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দিল্লির বৃহৎ শ্মশান নিগামবোধ ঘাট, যা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত, এখানকার প্রশাসন কাঠের চুল্লির সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং জনবল বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, জানিয়েছেন উত্তর দিল্লি মিউনিসিপ্যালিটির মেয়র জয় প্রকাশ।
মৃতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন করছে গুজরাত
সোমবার গুজরাত হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে দ'দিনের দিনের মধ্যে একটি রিপোর্ট চেয়েছে। সেলর জানিয়েছেন যে রাজ্যের প্রকৃত মৃতের সংখ্যা সরকার নির্দিষ্ট করে জানাক। সরকারের উচিত কোভিড ও কোভইড সন্দেহে মৃত্যু, উভয়ই সঠিকভাবে জানানো কিন্তু সরকার তা করছে না। রাজ্যের সত্যিকারের দৃশ্য রাজ্যবাসীকে আরও বেশি সচেতন ও আগাম সতর্কতা নিতে বাধ্য করবে।