করোনার সর্বাত্মক প্রভাব দেশের সর্বত্র কখনওই এক হবে না, চাঞ্চল্য নয়া রিপোর্টে
ভারতের মত বৃহৎ দেশে সর্বত্র করোনা সংক্রমণের মাত্রা একরকম হওয়া সম্ভব না। প্রত্যেক রাজ্যের সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন, এমনটাই জানাল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথের(আইআইপিএইচ) রিপোর্টে। রাজ্যের নাগরিকরা কখন কিভাবে কোভিডের সংস্পর্শে আসছেন, তার উপরেই নির্ভর করছে করোনা সংক্রমণে মোট বৃদ্ধি, এমনটাই মত জনস্বাস্থ্য সংসদের।
প্রত্যেক রাজ্যে করোনার প্রকৃতি ভিন্ন
আইআইপিএইচের অধ্যাপক জি ভি এস মূর্তি জানিয়েছেন যে, এই মাসের শেষে বা আগস্টের শুরুতে দিল্লিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে চলেছে, অন্যদিকে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে এই অবস্থা আসতে আসতে প্রায় সেপ্টেম্বর। তাঁর মতে, অভিবাসী শ্রমিকদের আগমনের কারণে ঝাড়খণ্ডে করোনা প্রকোপ প্রত্যক্ষ করা যাবে বেশ কিছুদিন পর, আবার একই কারণে বিহারে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা লাগিয়ে বাড়ছে। মূর্তির মতে, "প্রত্যেক রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ার গতিপথ আলাদা। ফলে সারা দেশজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যায় প্রবল বৃদ্ধি কখনই দেখা যাবে না, যেটা দেখা সম্ভব সেটা হল সার্বিক বৃদ্ধি।"
আক্রান্তের হাত ধরে পরিবারে সংক্রমণ ছড়াতে কত দিন লাগে?
মূর্তি জানিয়েছেন, একজন কোভিড আক্রান্ত তাঁর পরিবারের সদস্যদের গড়ে ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সংক্রামিত করে এবং এরপরেই করোনা হাওয়ার ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে। তিনি জানান, এই কারণেই মানুষকে সতর্কভাবে বাস করতে হবে। বারংবার হাত ধোয়া এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার অভ্যাসকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে নিতে হবে। ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর নজরদারির কথা বলেন তিনি। এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, অভিবাসী শ্রমিকদের আগমনের ফলে ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় ও পূর্ব-উত্তরপ্রদেশে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরে প্রবল বৃদ্ধি পাবে সংক্রমণ। অন্যদিকে, হরিয়ানা, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে সংক্রমণ আকাশ ছোঁবে সেপ্টেম্বর মাসেই।
মোকাবিলার জন্য প্ৰস্তুত থাকা দরকার সরকারের
রিপোর্ট অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই রাজস্থান ও পাঞ্জাবে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ালেও তামিলনাড়ুতে সংক্রমণ প্রবল বৃদ্ধি পাবে অগাস্টের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ। মূর্তির মতে, কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য প্রশাসনগুলি যদি এখনই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য তৎপর না হয়, তবে সংক্রমণ বৃদ্ধির সময়ে সামাল দিতে হিমশিম খাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রক দপ্তর(এনএসিও)-এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "কেরালা ভেবেছিল যে তারা কোভিডকে আটকে দিতে পেরেছে। কিন্তু গত ১০ দিনে তাদের ভুল ভেঙে গেছে।" মুম্বাইয়েও স্বাস্থ্যব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারা বাইরে এসেছে একইভাবে।
সংক্রমণের এলাকাগুলি চিহ্নিত করে নজরদারির প্রয়োজন
এনএসিও-র অপর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এবং যেসকল স্থানে কোভিড ছড়িয়েছে প্রবলভাবে, সেইসকল স্থানে কড়া সরকারি নজরদারি দরকার এবং সঠিক পরীক্ষা, আক্রান্তের সংস্পর্শে কারা এসেছেন ও দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা উচিত। মূর্তির মতে, এখন সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত সঠিক উপায়ে মানুষকে সচেতন করা ও যথাসম্ভব অধিক প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করা। সেক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি কোভিড স্পেশালিটি হাসপাতালের পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া সামান্য সর্দি-হাঁচি বা জ্বর এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলেই করোনা টেস্ট করিয়ে নিতে বলেন মূর্তি।