ক্রমেই দেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, কোভিড–১৯ নিয়ে ১০টি গুরুতর তথ্য জেনে নিন
ক্রমেই দেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে
মঙ্গলবার কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে দেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ থেকে খারাপতরের দিকে এগোচ্ছে। এটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে বেশ কিছু রাজ্যের পরিস্থিতি উদ্বেগের। কেন্দ্র সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে জানিয়েছে যে গোটা দেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং কেউ সন্তুষ্ট নয়। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভিকে পাল বলেছেন, 'কোভিড–১৯ পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতরের দিকে এগোচ্ছে। শেষ কয়েক সপ্তাহে, বিশেষ করে বেশ কিছু দেশে এই পরিস্থিতি বিশাল চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন রাজ্য বা দেশের কোনও অংশই সন্তুষ্ট নয়।’
দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য সচিব বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ১০টি তথ্য তুলে ধরল
১) সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ জানিয়েছেন যে দেশের শীর্ষে থাকা ১০টি কোভিড–১৯ উচ্চ বোঝা রয়েছে এমন ১০টি জেলার মধ্যে ৮টি জেলা মহারাষ্ট্র ও দিল্লির। কোভিড–১৯ সক্রিয় কেসের সংখ্যা সর্বাধিক পুনে (৫৯,৪৭৫), মুম্বই (৪৬,২৪৮), নাগপুর (৪৫,৩২২), থানে (১৬,২৫৯), নান্দেদ (১৫,১৭১), দিল্লি (৮,০৩২) ও আহমেদাবাদ (৭,৯৫২)।
২) রাজেশ ভূষণ বলেছেন, 'আমরা ক্রমাগত তীব্র ও গুরুতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি এবং তা কিছু জেলার কারণেই অবশ্য কিন্তু গোটা দেশই ঝুঁকিতে রয়েছে এবং সেইজন্য জীবন ধারণ ও সংরক্ষণের জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত।’
৩) পজিটিভ কেসের হারের ক্ষেত্রে ভূষণ জানান, গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রে গড়ে পজিটিভ হার ছিল ২৩ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ৭.৮২ শতাংশ, তামিলনাড়ুতে ২.৫ শতাংশ, কর্নাটকে ২.৪৫ শতাংশ, গুজরাতে ২.২২ শতাংশ এবং দিল্লিতে ২.০৪ শতাংশ। গত সপ্তাহে জাতীয় পজিটিভ হার গড়ে ছিল ৫.৬৫ শতাংশ।
৪) ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে মহারাষ্ট্রে দৈনিক করোনা কেসগুলি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি এই রাজ্যে ৫,৪৯৩টি থেকে দৈনিক কেস থেকে ২৪ মার্চ তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪,৪৫৬–তে। দৈনিক গড় মৃত্যুও বেড়েছে মহারাষ্ট্রে, ১০ ফেব্রুয়ারা যেখানে ৩২ জনের মৃত্যু হয় সেখান ২৪ মার্চ মৃত্যু হয়েছে ১১৮ জনের। এর অর্থ হল মহারাষ্ট্রবাসী সাধারণ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধি অনুসরণ করছেন না বলে জানান ভূষণ।
৫) পাঞ্জাবের করোনা বাইরাস প্রসঙ্গে ভূষণ জানিয়েছেন যে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক নতুন কেস ৩৩২টি রেকর্ড করা হয়েছিল, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৭৪২–এ। ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৮ থেকে বেড়ে ৫২–তে এসে দাঁড়িয়েছে। ভূষণ বলেন, 'এটা প্রমাণ করছে যে এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে টেস্ট হয়নি এবং সরকার করোনা পজিটিভদের আইসোলেট করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
৬) কর্নাটকে বর্তমানে ২৩,৮০০চি সক্রিয় কেস রয়েছে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩৯৯টি কেস রিপোর্ট হয় যা মার্চে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ২,৫৯৪। ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৪ থেকে বেড়ে মার্চে গিয়ে ১১–তে দাঁড়িয়েছে। শনিবার রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠক করার সময় ভূষণ বলেন, 'টেস্ট, সনাক্ত ও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আইসোলেট করার পদ্ধতি বৃদ্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে কর্নাটকে।’
৭) ভূষণ এও বলেন, 'আমরা ৪৭টি জেলার সঙ্গে কথা বলেছি। আরটি–পিসিআর টেস্টের ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার। স্ক্রিনিংয়ের জন্য ও জন ঘনত্ব এলাকায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।’
৮) ভূষণ এও জানিয়েছেন যে রাজ্যগুলিকে তাদের স্বাস্থ্যসেবার উৎসগুলিকে জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যে হাসপাতালগুলি নন–কোভিড, সেগুলিকে কোভিড সুবিধাযুক্ত হাসপাতালে পরিণত করতে হবে। বেসরকারীর পাশাপাশি সরকারি সুবিধা জোরদার করতে কোনও দেরি হওয়া উচিত নয়।
৯) রাজ্যগুলিকে কোভিড–যথাযথ আচরণ জারি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভূষণ জানিয়েছেন যে জেলাগুলিতে যেহেতু কোভিড–১৯ বৃদ্ধি পেয়েছে সেইজন্য সেখানে বয়স–ভিত্তিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকাকরণ হওয়া দরকার। বেশিরভাগ রাজ্যেই, মানুষজন ঠিকঠাকভাবে আইসোলেট হচ্ছে না। তাঁদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগগুলিকে সনাক্ত করতে হবে তিনদিনের মধ্যে। শুধুমাত্র পরিবারই নয়, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও সনাক্ত করে আইসোলেট করতে হবে।
১০) মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মোট ৬,১১,১৩,৩৫৪টি ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়া হয়েছে। ৮১,৭৪,৯১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী তাঁদের প্রথম ডোজ ও ৫১,৮৮,৭৪৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে ফেলেছে। বেসরকারি সুবিধাতে সর্বাধিক টিকাকরণের ক্ষেত্রে শীর্ষে নাম রয়েছে তেলঙ্গানার। দিল্লি রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, যেখানে বেসরকারি সুবিধায় ৪৩.১১ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে।