করোনা ভাইরাস পদ্ধতিগত রোগ, যা গোটা শরীরের সঙ্গে জড়িত, দাবি ডাঃ রনদীপ গুলেরিয়ার
করোনা ভাইরাস পদ্ধতিগত রোগ, যা গোটা শরীরের সঙ্গে জড়িত, দাবি ডাঃ রনদীপ গুলেরিয়ার
'বর্তমানে আমাদের বিশ্বাসের চেয়েও বেশি দেহের রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া আমাদের সুরক্ষিত রাখতে পারে, তবে তা কতদিন প্রশ্ন সেখানেই’, এমনটাই জানিয়েছেন এইমসের ডিরেক্টর তথা দেশের করোনা ভাইরাস রোগ প্রতিক্রিয়ার নেতৃত্বদানকারি বিশেষজ্ঞ ডাঃ রনদীপ গুলেরিয়া।
করোনা ভাইরাস পদ্ধতিগত রোগ
এক সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন, তবে মারাত্মক খবরটি হল কোভিড-১৯ এখন পদ্ধতিগত রোগ, যা কেবল ফুসফুসের ওপরই প্রভাব ফেলছে না, মস্তিষ্ক ও কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের কোভিড-১৯ টাস্ক ফোর্সের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ দলের প্রধান ডাঃ গুলেরিয়া জানিয়েছেন, গুরুতর কোভিড আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার কয়েক মাস পরও মেডিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ফুসফুসের অবস্থা ‘বাজে আকারে' রয়েছে এবং তাদের বাড়িতেও অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ছে।
স্ট্রোক ও স্নায়ু সংক্রানত রোগ হচ্ছে
দেশের শীর্ষ পালমোনোলজিস্ট গুলেরিয়া জানান, এই করোনা ভাইরাসের প্রভাবে রোগী নতু করে স্ট্রোক ও স্নায়ু সংক্রান্ত সমস্যার শিকার হচ্ছে, যা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের চেয়েও বিপদজ্জনক। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম এটা শুধুই নিউমোনিয়া এবং তারপর আমরা উপলব্ধি করলাম এটা হাইপারকোয়াগুলাবেল অবস্থার সৃষ্টি করছে যা জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এবং ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে হঠাৎ রক্ত জমাট বাঁধার কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। আর এখন তো আমরা এর প্রভাব মস্তিষ্কেও লক্ষ্য করছি। যার ফলে মানুষের স্ট্রোক ও স্নায়ুর সমস্যা তৈরি হয়। শুরুর দিকে ভেবেছিলাম হয়ত এটা এত বড় সমস্যা নয়, কিন্তু যত আক্রান্তদের দেখছি এটা তত বড়ই ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে।'
করোনা ভাইরাস গোটা শরীরে প্রভাব ফেলে
ডাঃ গুলেরিয়া বলেন, ‘ফুসফুস দিয়ে এই সংক্রমণ শুরু হয়। তাই এটা এখনও ফুসফুসের রোগ।' তিনি আরও বলেন, ‘তবে এটা উল্লেখযোগ্যভাবে রক্তনালীর সমস্যাও বটে। একে কিছুটা রক্তনালীর সমস্যাও বলা যেতে পারে। এটাকে পদ্ধতিগত রোগও বলা চলে কারণ এটি গোটা দেহের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।' তিনি জানান, সুস্থ হয়ে ওঠা জটিল রোগীদের মধ্যেও কিছু উপসর্গ থেকে যায়। ডাঃ গুলেরিয়া বলেন, ‘আমরা অনেক রোগীদের দেখেছি যাদের নিউমোনিয়া হয়েছে, কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠার পরও সেইসব রোগীদের ফুসফুস একেবারে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গিয়েছে। সেই জন্য বাড়িতেও তাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। এমনকি সুস্থ হওয়ার তিনমাস পরও সিটি স্ক্যানে দেখা গিয়েছে যে ফুসফুসের পরিস্থিতি খারাপ। কিছু কিছু রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার এক সপ্তাহ পরও দুর্বলতা ও কাজে ফেরার শক্তি পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর স্নায়ুর সমস্যা দেখা দেয়।'
কোষ–মধ্যস্থতাকারী প্রতিরোধ ক্ষমতা
যদিও বিশ্বজুড়ে গবেষকরা গবেষণা করছেন যে ভাইরাসের প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেহের দ্বারা বিকশিত অ্যান্টিবডিগুলি স্থায়ী প্রতিরোধ ক্ষমতা সরবরাহ করে কিনা, এ প্রসঙ্গে ডাঃ গুলেরিয়া জানান যে ভারতে যে ডেটা পাওয়া গিয়েছে তা কোষ-মধ্যস্থতাকারী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, অ্যান্টিবডি জড়িত না এমন একটি প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা শরীরকে রক্ষা করতে পারে। তিনি বলেন, ‘যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেখান থেকে আমরা দেহের প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ার বিষয়েও শিখছি। আমরা বুঝতে পেরেছি যে কোষ-মধ্যস্থতা প্রতিরোধ ক্ষমতাও সক্রিয় এবং রক্তে টি-কোষের মাধ্যমে সুরক্ষা প্রদান করে। আমরা এই মুহুর্তে যা ভাবছি তার চেয়ে বেশি কিছুটা আমরা সুরক্ষিত থাকতে পারি। বড় প্রশ্ন হল সুরক্ষা কত দিন স্থায়ী হয়। এটি অনুমান করা কঠিন।
টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেই কি আপনি করোনা মুক্ত ? জানুন কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা