করোনা ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন, দাম, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সহ সমস্ত খুঁটিনাটি জানুন একনজরে
সারা দেশে করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ব্যাপক সংখ্যক সংক্রমণ হচ্ছে সারাদেশে। এই অবস্থায় একদিকে যেমন মানুষের চিকিৎসা চলছে, অন্যদিকে সারাদেশে টিকাকরণ কর্মসূচি চলছে। সকলেই চিন্তিত কীভাবে এই ভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা নিয়ে। এই অবস্থায় টিকাকরণ থেকে শুরু করে ভ্যাকসিনের দাম নিয়ে মানুষের মনে অনেক জিজ্ঞাস্য রয়েছে। কীভাবে টিকাকরণের জন্য নাম নথিভুক্ত করবেন, এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা এই সমস্ত বিষয় এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
ভারতের তৃতীয় দফার টিকাকরণে কাদের সংযুক্ত করা হয়েছে?
ইতিমধ্যে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রত্যেক ভারতবাসীকে আগামী পয়লা মে-র পর থেকে টিকা দেওয়া হবে।
পয়লা মে থেকে বদল কী কী হচ্ছে?
মে মাসের প্রথম দিন থেকে রাজ্য সরকার এবং প্রাইভেট হাসপাতালগুলি বিভিন্ন ভ্যাকসিন নির্মাতাদের থেকে দাম দিয়ে টিকা কিনতে পারবেন।
করোনা ভ্যাকসিন কি সকলের জন্য বিনামূল্যে দেওয়া হবে?
সরকারি জায়গায় ৪৫ বছরের বেশি বয়সীরা বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবেন। বেসরকারি জায়গায় টাকা দিতে হবে। তবে কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
কোভিশিল্ডের খরচ কত?
এই টিকার দাম রাজ্য সরকারের জন্য ৪০০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্য ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কোভিশিল্ড নাকি কোভ্যাক্সিন কোনটা বেশি ভালো?
দুটো ভ্যাকসিনের কোনও তুলনা করা হয়নি। এছাড়া কেউ নিজের পছন্দ অনুযায়ী টিকা বেছে নিতেও পারবেন না। দুটো ভ্যাকসিনই ভাইরাস রুখতে সমর্থ। বয়স্কদের মৃত্যু আটকাতে ও কোমর্বিডিটি রয়েছে এমন লোকের মৃত্যু আটকাতে এটি সমর্থ।
কবে আমি ভ্যাকসিনের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারব?
আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে CoWin এর মাধ্যমে নাম রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
আমি কি নিজে থেকে নাম নথিভুক্ত করতে পারব?
ভ্যাকসিনের জন্য নাম নথিভুক্ত করা যাবে। https://www.cowin.gov.in/home থেকে নাম নথিভুক্ত করুন।
কোথা থেকে আমি ভ্যাকসিন পাব?
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে টিকা থাকবে। এগুলির পোশাকি নাম কোভিড ভ্যাকসিনেশন সেন্টার।
দ্বিতীয় ডোজের জন্য কি নতুন করে নাম নথিভুক্ত করতে হবে?
না। একবার টিকা নিলে সেই একই কেন্দ্র থেকে ২৯ দিন পর টিকা নেওয়া যাবে। তার জন্য আলাদা করে নাম নথিভুক্ত করতে হবে না।
স্বাস্থ্য দফতরের রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কি কেউ কোভিড ভ্যাকসিন পেতে পারেন?
না, উপভোক্তার রেজিস্ট্রেশন টিকাকরণের জন্য জরুরি। একবার রেজিস্ট্রেশনের পর টিকা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য উপভোক্তারকে জানানো হয়। ওয়াক-ইন ভ্যাকসিন সেন্টার থাকলেও টিকা নেওয়ার আগে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
টিকা নিতে গেলে কী কী নথি চাই?
নিম্নলিখিত যে কোনও নথি পেলেই হবে
আধার কার্ড
ড্রাইভিং লাইসেন্স
হেলথ ইনস্যুরেন্স স্মার্টকার্ড
মনরেগা জব কার্ড
প্যান কার্ড
ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের পাসবুক
পাসপোর্ট
পেনশনের কাগজ
সরকারি বা বেসরকারি অফিসের সার্ভিস আইডেন্টিটি কার্ড
ভোটার কার্ড
কোমর্বিডিটি থাকলে তার শংসাপত্র নিয়ে যেতে হবে
রেজিস্ট্রেশনের সময় কি ফোটো আইডি প্রয়োজন?
রেজিস্ট্রেশনের সময় দিতে হবে ও ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় যাচাই করা হবে।
টিকার দিনক্ষণ কীভাবে জানা যাবে?
অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের পরে উপভোক্তা মেসেজ পাবেন রেজিস্ট্রার্ড মোবাইল নম্বরে। সেখানে টিকাকরণের সময়, স্থান, দিনক্ষণ লেখা থাকবে।
টিকাকরণ শেষ হলে কি কোনও ইনফরমেশন শেয়ার করা হবে?
টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে একটি মেসেজ আসবে। সব ডোজ নেওয়া হয়ে গেলে কিউআর কোড দেওয়া শংসাপত্র মোবাইলে পাঠানো হবে।
দুটি টিকারই মাঝের সময় কত?
প্রথম টিকা নেওয়ার পরে কোভিশিল্ডের সময় চার-ছয় সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে চার-আট সপ্তাহ করে দেওয়া হয়েছে। কোভ্যাক্সিন চার-ছয় সপ্তাহ পর নেওয়া যাবে।
ওষুধের দোকানে কি ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে?
না। কোনও দোকানে তা পাওয়া যাবে না।
শুধু বেসরকারি জায়গায় টিকা নিতে গেলেই কি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে?
সরকার-বেসরকারি সমস্ত জায়গাতেই টিকা নেওয়ার আগে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে।
বর্তমান টিকাকরণ কর্মসূচির কী হবে?
বর্তমানে যেভাবে টিকাকরণ চলছিল, সেভাবেই চলবে। ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে সরকার থেকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে।
সকলকে কি টিকা নিতেই হবে?
টিকা নেওয়া বা না নেওয়া পুরোটাই স্বেচ্ছায়। তবে টিকা নিলে অনেক ঝুঁকি কমে যাবে ও করোনা ছড়ানোর চান্স কমবে।
এত কম সময়ে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, তাই এটি কতটা সুরক্ষিত?
সুরক্ষার মাপকাঠিতে বিচার না করে টিকা জনসাধারণের জন্য বাজারে ছাড়া হয়নি বা অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
টিকা নেওয়ার পর কি উপসর্গ থাকছে?
জ্বর, কাঁপুনি, শরীরে ব্যথা, ক্লান্তি, শরীরে লাল ছোপ, ইঞ্জেকশন দেওয়া জায়গায় ব্যথা থাকছে। ফলে দুই-তিনদিনের মধ্যে শরীর ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
গর্ভবতী মহিলা বা মাতৃদুগ্ধ পান করানো মহিলারা কি ভ্যাকসিন নিতে পারেন?
গর্ভবতী মহিলা বা মাতৃদুগ্ধ পান করানো মহিলাদের ক্ষেত্রে টিকা না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
হৃদরোগীরা কি ভ্যাকসিন নিতে পারেন?
হ্যাঁ, পারেন।
ভ্যাকসিনের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে?
এখনও পর্যন্ত ১৩ কোটির বেশি মানুষ সারা দেশে ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছেন। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সেভাবে কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
টিকা নেওয়ার পরও কি মাস্ক পরতে হবে?
হ্যাঁ অবশ্যই। কোভিড টিকা নিলেও মাস্ক পরতে হবে। এবং হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ করা, নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে চলা - এসবই করতে হবে।
টিকা নেওয়ার পর কত শতাংশ মানুষের করোনা হয়েছে?
সরকারি তথ্য বলছে, কোভ্যাক্সিনের দুটো টিকা নেওয়ার পর ০.০৪ শতাংশ মানুষের শরীরে এবং কোভিশিল্ড নেওয়ার পর ০.০৩ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনা সংক্রমণ হয়েছে।
টিকা নেওয়ার পর কি আমার করোনা হয়েছে?
টিকা নেওয়ার পর দুই সপ্তাহ সময় লাগে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে। ফলে টিকা নেওয়ার আগে-পরে যেকেউ করোনা আক্রান্ত হতে পারেন।
সেকেন্ড ডোজ মিস করলে কী হতে পারে?
দুই মাস পর্যন্ত সময় নেওয়া যেতে পারে দুটি ডোজের মধ্যে। সেকেন্ড ডোজ মিস করলে সেভাবে বড় কিছু অসুবিধা হবে না। তবে কেউ ডোজ মিস করলে অ্যান্টিবডি টেস্ট করিয়ে নিতে পারেন এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে শরীরে ইম্যুনিটি তৈরি হয়েছে কিনা।
কোভিড টিকা কতদিন সুরক্ষা দেবে?
এখনও পুরোপুরি এর সময়কাল নির্ধারণ করা যায়নি। ফলে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্য কোভিড বিধি মেনে চলা আবশ্যক।
কোভিড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কি চিন্তিত হওয়ার দরকার আছে?
ক্লান্তি, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, জ্বরের মতো সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে তা খুবই অল্প পরিমাণে হতে পারে। এই নিয়ে বিশেষ চিন্তার কিছু নেই।
টিকা নিলে কি নতুন করোনা স্ট্রেন থেকে বাঁচা সম্ভব?
সব ভ্যাকসিনই মিউটেশন হওয়া করোনা স্ট্রেনের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম। যতদূর দেখা গিয়েছে, করোনা মিউটেশন হলেও ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না।
কতদিনে টিকা শরীরে করোনা প্রতিরোধের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে?
দুটো টিকা নেওয়ার পর শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি পুরোপুরি তৈরি হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কি অ্যালকোহল নেওয়া যায় না?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালকোহল ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট করছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে কী করতে হবে?
দুটো ভ্যাকসিনই সুরক্ষিত। তবে কারও কোনও অসুবিধা হলে কাছাকাছি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অথবা টিকা নেওয়ার পর যে মেসেজ অ্যালার্ট আসে, সেখানে থাকা ফোন নম্বরে ফোন করতে হবে।
দুটো টিকাই একই সংস্থার নিতে হবে?
আপনার হাতে কোনও বিকল্প অপশন নেই। ফলে প্রথমে যে ভ্যাকসিন নেবেন, দ্বিতীয় ডোজও একই নিতে হবে।