মফঃস্বলে বাড়তে পারে করোনার প্রকোপ, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির শুরুর প্রথম সপ্তাহে দেশ জুড়ে যেভাবে লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী ছিল করোনা সংক্রমণের হার তাতে প্রমাদ গুনছিলেন আপামর বিশ্বের বিশেষজ্ঞ মহল। বিশেষত ভারতে সুনামির মত আছড়ে পড়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। দিন দুয়েক কিছুটা স্বস্তি দিয়ে দেশের করোনা গ্রাফ কিছুটা নিম্নমুখী হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একবার বাড়ল ভারতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
কী বলছে পরিসংখ্যান?
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশ জুড়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৮২ হাজার জন। মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৮ হাজার ১৮ জন। অর্থাৎ হিসেব মত দেশে এক দিনে এক লাফে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে করোনা আক্রান্তের হার। সেই সঙ্গে দৈনিক সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৫.১৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৯৬১ জন। আর এই পরিসংখ্যানে মোটেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পাড়ছেন না বিশেষজ্ঞ মহল।
এবার কাণ্ড মফঃস্বলে
সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের দ্রুত বিবর্তন নিয়ে প্রথম থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'হু'। আর এবার বিশেষজ্ঞরা সামনে আনলেন নয়া তথ্য। 'হু'এর প্রযুক্তিগত পরামর্শদাতাদের প্রধান অনুরাগ আগরওয়াল জানিয়েছেন, গবেষণার নিরিখে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের মেট্রোপলিটন গুলি আগামী দিনে দ্রুত করোনার কবল থেকে মুক্তি পেলেও খুব একটা আশার আলো দেখার অবকাশ নেই। কারণ এর পর লাগাতার বৃদ্ধি পাবে দেশের বিভিন্ন মফঃস্বল এলাকাগুলিতে করোনার বাড়বাড়ন্তের পরিমাণ।
কোথায় দাঁড়িয়ে দিল্লি-মুম্বই?
অনুরাগ আগরওয়াল জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে মহারাষ্ট্র, বিশেষ করে মুম্বইতে যেভাবে করোনার গ্রাফ শিখরে পৌঁছেছে তাতে এটা ঠিক যে আগামী কিছু দিনের মধ্যে সেখানে ধীরে ধীরে সুস্থতার সঙ্গেই নীচে নামতে থাকবে করোনা গ্রাফ, ফলে একা মুম্বইয়ের জন্য মহারাষ্ট্রে করোনার লাগাতার বৃদ্ধির থিওরির সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সহমত নন। কিন্তু রাজধানীর ক্ষেত্রে চিত্র একটু আলাদা। দিল্লি প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন,' এটা ঠিক যে দিল্লিতে করোনার শিখর অতিক্রম করেছে, কিন্তু প্রাদুর্ভাব শেষ হয়নি'। পাশাপাশি সিনিয়র এপিডেমিওলজিস্ট গিরিধর বাবু বলেন, দিল্লিতে করোনা কেস হয়তো একটু কমছে কিন্তু এখনই কোনো অনুমান করা খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।
এবার কোথায় আক্রমণ?
গিরিধর বাবু জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য হিসেব করে দেখা গিয়েছে, দিল্লির করোনা টেস্ট পজিটিভিটি রেট এই মুহূর্তে ৩০ শতাংশ। আর মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এটি ২২ শতাংশ। আর এখানেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গিরিধর বাবুর কথায়, 'এটা ঠিক যে এই মুহূর্তে দেশের সংক্রমণ মাত্রা শিখরে ওঠার পর আস্তে আস্তে তা পতনের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি এখন দেখা যাচ্ছে করোনা ধীরে ধীরে মহানগরগুলি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম বড় শহর ও মফঃস্বলের দিকে থাবা বাড়াচ্ছে।' এর কারণ হিসেবে সামনে আসছে, এত সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়ার পরেও মফঃস্বলের লোকজনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাব।
শেষ হয়েও হবে না শেষ
অনুরাগ আগরওয়াল জানিয়েছেন, যেকোনো ফ্লু ভাইরাস হাজার হাজার বছর ধরে মানব দেহে তার থাবা বিস্তার করে এসেছে। যুগ যুগ ধরে মহামারীর ঝুঁকি বয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের পৃথিবী। ফ্লু ভাইরাসগুলোর বিবর্তনে সময় লাগে ঠিকই। কিন্তু আগরওয়াল আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ যত বেশি হবে, এই ভাইরাস বিবর্তনের সুযোগ তত বেশি হবে। তাই এই ভাইরাস কে নির্মূল করার একটাই উপায়, তা হল সচেতনতা। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।