
মল্লিকার্জুনের হাতে ব্যাটন! এবার কি সুদিন ফিরবে, ২০২৪-এর আগে সাফল্যের দিশারি কংগ্রেস
গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ মল্লিকার্জুন খাড়গের হাতেই শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের রাশ উঠল। প্রায় আড়াই দশক পর কংগ্রেসে নতুন সভাপতি এলেন। যে সময়ে কংগ্রেসের দায়িত্ব নিলেন নয়া সভাপতি, তখন কংগ্রেসের চরম দুর্দিন চলছে। কংগ্রেস লড়ছে অস্তিত্বরক্ষার লড়াই। এই অবস্থায় কি মল্লিকার্জুন হাল ফেরাতে পারবেন কংগ্রেসের। আবার ফিরবে সুদিন!

কংগ্রেস এবার কোন পথে
২৪ বছর পর নেহরু-গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ কংগ্রেস সভাপতি হলেন। সীতারাম কেশরীর পর মল্লিকার্জুন খাড়গে। সেইসঙ্গে তিনি দ্বিতীয় দলিত নেতা যিনি কংগ্রেস সভাপতি হলেন। হারালেন দক্ষিণেরই আর এক নেতা শশী থারুরকে। গান্ধী পরিবার সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে তাঁকেই ধরে নিয়েছিল বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁর হাতেই ব্যাটন। এখন তিনি কংগ্রেসকে কোন পথে পরিচালিত করে ফের প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারেন, সেটাই দেখার।

নতুন কী কৌশল খাড়গের
অশীতিপর মল্লিকার্জুনের জয় নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না, তবে তিনি কতটা গান্ধী পরিবারের প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁর একটা মস্তবড় সুবিধাও থাকবে। তিনি কীভাবে দলকে পরিচালনা করেন, দলের নতুন কী কৌশল আনেন, কংগ্রেস নেতৃত্ব কতটা সক্রিয় হয়ে ওঠেন তাঁর নেতৃত্বে, তিনি কতটা দলকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মুক্ত রাখতে পারবেন তার উপরই নির্ভর করবে শতাব্দীপ্রাচীন দলটির ভবিষ্যৎ।

দলের হাল যখন আরও খারাপ
২০১৪ সালের পর থেকে কংগ্রেস কতিপয় সাফল্য পেয়েছে। বেশিরভাগ নির্বাচনেই কংগ্রেসকে হারতে হয়েছে। রাহুল গান্ধী সভাপতি হওয়ার পর কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সাফল্য পেয়েছিল ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে। কিন্তু ২০১৯-এ তাদের মুখ থুবড়ে পড়তে হয়। তারপর থেকে বিভিন্ন রাজ্যে তাদের হাল আরও খারাপ হয়েছে।

সাম্প্রতিক ধাক্কা কাটাবে কংগ্রেস?
সম্প্রতি পাঞ্জাবে কংগ্রেস জোর ধাক্কা খেয়েছে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপের কাছে তাদের শোচনীয় পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে। ইত্যবসরে কোনও রাজ্যেই নির্বাচন জিততে পারেনি কংগ্রেস। উল্টে হারাতে হয়েছে পাঞ্জাব। গোয়ায় শাসক-বিরোধী হাওয়া থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস জিততে পারেনি। উত্তরাখণ্ডেও সুবিধাজনক জায়গায় থেকে হারতে হয়েছে কংগ্রেসকে। উত্তরপ্রদেশে তো কংগ্রেস মুছে গিয়েছে প্রায়।

সামনেই জোড়া অগ্নিপরীক্ষা
আবার সামনে হিমাচল প্রদেশ ও গুজরাতের নির্বাচন। এতদিন এই রাজ্যে বিজেপি ও কংগ্রেসের ফেস টু ফেস লড়াই হত। এবার আবার এই দুই রাজ্যেই আপ অর্থাৎ আম আদমি পার্টি প্রবেশ করে হিসেব গুলিয়ে দিয়েছে। আপ নেতারা আশবাদী হয়েই দুই রাজ্যে প্রচার চালাচ্ছে। ফলে কী হবে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ, তারা বিজেপিকে সরিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

দলকে সাফল্যের সরণিতে আনতে
নতুন সভাপতি হয়ে আপাতত এই দুই রাজ্যে কংগ্রেসকে কতটা জাগাতে পারবেন মল্লিকার্জুন খাড়গে, তার উপর নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে না নিতেই দুই রাজ্যে ভোটের মুখ পড়তে হচ্ছে খাড়গেকে। তাঁর সামনে মস্তবড় চ্যালেঞ্জ দুই নির্বাচনে দলকে সাফল্যের সরণিতে নিয়ে আসা। অন্তত গুজরাতে যদি ইচিবাচক ফল করে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরতে পারে, তবে সেটা হবে খাড়গের জন্য শুভ সূচনা।

কংগ্রেসের সুদিন ফেরাতেই কাজ
এখন এই অবস্থায় একটা প্রশ্ন উঠে পড়ছে খাড়গে সভাপতি হয়ে কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। রিমোট কন্ট্রোল গান্ধী পরিবারের হাতে থাকবে না তো! একাংশের দাবি, খাড়গে যেহেতু গান্ধী পরিবারের প্রার্থী তাই তিনি সেই পরিবারের কথা শুনিই চলবেন, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু গান্ধী পরিবারের কথা শুনে চলা মানেই যে সেটা কংগ্রেসের পক্ষে খারাপ হবে, সেটাই বা কেন ভাবা হচ্ছে। গান্ধীরা তো কংগ্রেসের সুদিন ফেরাতেই কাজ করছেন। আর কংগ্রেস যে গান্ধী পরিবারমুখা তাওয়া তো প্রমাণ হয়ে গিয়েছে এই ভোটাভুটি। প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট গিয়েছে মল্লিকার্জুনের পক্ষে।

মল্লিকার্জুন ও গান্ধী পরিবার
বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের কথা, কংগ্রেস চলবে গান্ধী পরিবারের অঙ্গুলিহেলনেই। খাড়গেকে সভপাতি করে বিজেপির পরিবারতন্ত্রের খোঁচা বা অপপ্রচার কংগ্রেস রুখে দিতে পেরেছে। এবার কংগ্রেসের দিকে পরিবারতন্ত্রের আঙুল তুলতে পারবে না বিজেপি। রাহুল গান্ধী সম্প্রতি বলেছেন, কংগ্রেসে সভাপতি হলেন সর্বোচ্চ। তিনিই সবকিছু ঠিক করবেন। সভাপতি যা বলবেন, তিনি সেই ভূমিকাই পালন করবেন।

রাহুলই কংগ্রেসের প্রধান মুখ!
যদিও কংগ্রেসের একটা বড় অংশ মনে করছে, রাহুল গান্ধীই কংগ্রেসের প্রধান মুখ থাকবেন। কিন্তু কোনও পদে থাকবেন না। তাতে কংগ্রেসের কতটা লাভ হবে, সেটা পরে বোঝা যাবে। রাজনৈতিক মহলের অনেকে আবার বলতে শুরু করেছেন, আসলে রাহুলই থাকবেন সর্বেসর্বা। শুধু হারলে দায় বর্তাবে নতুন সভাপতির উপর। আর জিতলে কৃতিত্ব রাহুলের।

২০২৪-এর নির্বাচনের লক্ষ্যে
যাই হোক মল্লিকার্জুন খাড়গে দায়িত্ব পেয়েছেন একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। যখন ২০২৪-এর নির্বাচনের পদধ্বনি শুরু হয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন দোরগোড়ায়। এই অবস্থায় দলিত নেতাকে সর্বভারতীয় সভাপতি করে কংগ্রেস একটা মোক্ষম চাল দিয়েছে। এখন দেখার রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের এবং লোকসভা নির্বাচনে দলিত ভোটে ভাগ বসাতে পারে কি না কংগ্রেস? তারপর কর্নাটকের নেতা খাড়গে। সামনের বছরের শুরুতেই কর্নাটকেও ভোট। এই ভোটে কী ফায়দা তিনি তুলতে পারেন, তাঁর সেই পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করবে কংগ্রেসের সুদিন ফেরা।
সভাপতি পদে নির্বাচনেও রিগিং! শশী থারুরের অভিযোগে বিতর্কে কংগ্রেস