তৃণমূলের পদধ্বনিতে ভাঙন আতঙ্ক, ত্রিপুরায় তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামল কংগ্রেস
ত্রিপুরায় বিপ্লবের গড়ে হানা দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপিশাসিক উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ঘাসফুল ফোটানোই এখন পাখির চোখ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরায় বাম-কংগ্রেসকে হটিয়ে প্রধান বিরোধী হয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেসে। আর এরপরই টনক নড়েছে জাতীয় কংগ্রেসের। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামল তারা।

আগাম বুঝেই ত্রিপুরায় ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামল এআইসিসি
কংগ্রেস তড়িঘড়ি ত্রিপুরায় এআইসিসি প্রতিনিধি পাঠাল অভিষেকের অভিযানের পরই। সোমবার আগরতলায় যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। আর তার জেরে মঙ্গলবারই ত্রিপুরায় জোড়া প্রতিনিধি পাঠিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামল কংগ্রেস। কেননা কংগ্রেস বুঝতে পেরেছে, তৃণমূল তাদের ভেঙেই ত্রিপুরায় প্রাসঙ্গিক হতে চাইছে মূলত।

ত্রিপুরায় নীরবে কংগ্রেস ভাঙার খেলায় মত্ত তৃণমূল, আশঙ্কা
অভিষেকের ত্রিপুরা সফরের আগে কংগ্রেসের সাত প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করছেন ২০২৪-এর আগে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে, তখন ত্রিপুরায় নীরবে কংগ্রেস ভাঙার খেলায় মত্ত তৃণমূল। বাংলার পর ত্রিপুরাকে টার্গেট করে কংগ্রেসের সংগঠনে থাবা বসাল তৃণমূল।

কংগ্রেসকে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে সঙ্ঘবদ্ধ থাকার বার্তা
তাই এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক অবিনাশ পাণ্ডে ও ছত্তিশগড়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিএস সিং দেও দুদিনের সফরে আগরতলায় এসেছেন। ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেছেন। বৈঠক করেছেন বিভিন্ন ব্লক সভাপতিদের সঙ্গেও। তাঁরা কংগ্রেসকে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে সঙ্ঘবদ্ধ থাকার বার্তা দিয়েছেন।

২০১৯-এর লোকসভায় কংগ্রেসই দ্বিতীয়, সব শেষে তৃণমূল
কংগ্রেস নেতৃত্ব এদিন পর্যালোচনা বৈঠকে জানান, ত্রিপুরায় কংগ্রেসই দ্বিতীয় শক্তি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে ত্রিপুরা পূর্ব ও পশ্চিম আসনে দ্বিতীয় হয়েছিল কংগ্রেস। তৃতীয় স্থান পায় সিপিএম। এবং একেবারে শেষে থাকে তৃণমূল। কেননা তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে চলে গিয়েছিল। তাঁরা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছিল ত্রিপুরায়।

কংগ্রেস-সিপিএমকে ভেঙে প্রধান বিরোধী হতে চাইছে তৃণমূল
পশ্চিমবঙ্গে টানা তিনবার ক্ষমতা দখলের পর তৃণমূল ফের ত্রিপুরাকে পাখির চোখ করেছে। ত্রিপুরায় ভোট এখনও দেড় বছরেরও বেশি বাকি। এখন থেকেই বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দ্বিতীয় শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করছে তৃণমূল। আর তারা কংগ্রেস ও সিপিএমকে ভেঙেই প্রধান বিরোধী হয়ে উঠতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতৃত্বকে ধরে রাখাই প্রধান লক্ষ্য এআইসিসির।

ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে ত্রিপুরা সংগঠনে নতুন জোয়ার আনার চেষ্টা
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে ত্রিপুরা সফরে গিয়ে বিপ্লব দেব সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন, তাতে কংগ্রেস নেতৃত্বও ভাবিত। ভাবিত সিপিএমও। এর মধ্যে কংগ্রেস চটজলদি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে দিল। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে ত্রিপুরা সংগঠনে নতুন জোয়ার আনার চেষ্টা চালাল।

ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের তিন সভাপতিকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে
কংগ্রেস ত্রিপুরায় নিজেদের সংগঠন ধরে রাখতে এবার তিন সভাপতি নির্বাচিত করার রাস্তায় হাঁটল। ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের তিন সভাপতিকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে। সম্প্রতি ত্রিপুরায় যে ভাঙন শুরু হয়েছে কংগ্রেসের, তা রোখাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ এআইসিসি প্রতিনিধি দলের কাছে।

কংগ্রেসের একাংশ সম্প্রতি তৃণমূলে পাড়ি দিয়েছেন ত্রিপুরায়
সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন দুই বিধায়ক-সহ সাত জন নেতা। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী প্রকাশচন্দ্র দাস, প্রাক্তন বিধায়ক সুবল ভৌমিক, সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সদস্য পান্না দেব, কংগ্রেসের সংখ্যালঘু নেতা মহম্মদ ইদ্রিস মিঞা, প্রেমতোষ দেবনাথ, বিকাশ দাস, তপন দত্ত-রা। এরপরই কংগ্রেস তটস্থ তাঁদের সংগঠন ধরে রাখতে।

সংগঠন বিজেপিকে দিয়ে ত্রিপুরায় রণেভঙ্গ দিয়েছিল তৃণমূল
২০১৬ সালেও এভাবে কংগ্রেসকে ভেঙে তৃণমূল বাড়তে শুরু করেছিল ত্রিপুরায়। তারপর রণভঙ্গ দিয়ে কংগ্রেস থেকে ভাঙিয়ে আনা সংগঠনকে বিজেপির হাতে তুলে ত্রিপুরার লড়াই থেকে ছিটকে যায় তৃণমূল। কংগ্রেস ভঙ্গুর অবস্থা নিয়ে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ে। ২০১৮-র নির্বাচনে সিপিএমকে হারিয়ে জয়ের দেখা পায় বিজেপি।

কংগ্রেস-সিপিএমের ভিত নড়িয়ে দেবে না তো তৃণমূল!
২০২৩-এর নির্বাচনের আগে ঠিক একইভাবে রাজ্যে এসেছে তৃণমূল। কংগ্রেস তাই ভাঙন আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছে। কংগ্রেস যেমন ২০১৯-এর নিরিখে ত্রিপুরায় দ্বিতীয় শক্তি, তেমনই বামেরাও সাম্প্রতিক লোকাল বডি নির্বাচনে জয় পেয়েছে। বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে মানুষ। এই অবস্থায় রাজ্যে তৃণমূলের আগমন বিরোধী হিসেবে কংগ্রেস-সিপিএমের ভিত সবার আগে নড়িয়ে দেবে না তো, আশঙ্কা কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।