সংসদের বুকে ‘চৈতন্যে’র ভালবাসা বিলোলেন রাহুল, মন জয় রাজনীতির গান্ধীগিরিতে
নদিয়ার নিমাই সকল শ্রেণির মানুষের কাছে বিলিয়ে দিয়েছিলেন ভালোবাসা। প্রবল-বিরোধী জগাই-মাধাইকেও তিনি বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন, তাঁদের চৈতন্য হয়েছিল।
কৃষ্ণভাবনার সঙ্গে পাণ্ডিত্যের মিশেলে অচিরেই নদিয়ার বৈষ্ণব সমাজের অগ্রণী নেতা হয়ে উঠেছিলেন চৈতন্যদেব। নদিয়ার নিমাই সকল শ্রেণির মানুষের কাছে বিলিয়ে দিয়েছিলেন ভালোবাসা। প্রবল-বিরোধী জগাই-মাধাইকেও তিনি বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন, তাঁদের চৈতন্য হয়েছিল। এদিন সংসদেও যা ঘটল, তা নদিয়ার বৈষ্ণব সমাজের নিরিখে কোনও অংশ কম নয়।
এদিন লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীর শাসনের সমালোচনার পর ভাষণ শেষে মোদীকে জড়িয়ে ধরেন রাহুল গান্ধী। তাঁর এই গান্ধীগিরি চালে মাত হয়ে যান বিরোধীরা। নরেন্দ্র মোদীর মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাও বাক্যহারা। সংসদ মাত করে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, 'তোমরা আমাকে অপমান করতেই পারো, আমারে পাপ্পু বলে ডাকতেও পারো, কিন্তু তোমাদের বিরুদ্ধে আমি ঘৃণার কথা বলব না। আমি তোমাদের ভিতর থেকে এই ঘৃণাকে টেনে বের করে আনবই এবং তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ভরে দেব।'
চৈতন্যদেবের মতোই রাহুল গান্ধী প্রবল বিরোধীদেরও নিজের পক্ষে টেনে আনার বার্তা দিলেন তাঁর কথায়। ঘৃণার স্থলে ভালোবাসা ভরে দেওয়ার কথা বললেন। শুধু প্রবল বিরোধী জগাই-মাধাইকেই ভালোবাসা দিয়ে নিজের দলে আনেননি নদিয়ার নিমাই চৈতন্যদেব, তিনি নবদ্বীপের শাসক চাঁদকাজিকেও তাঁর আনুগত্য স্বীকার করিয়েছিলেন। রাহুল তো চৈতন্যদেবের মতোই ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়ার কথা বললেন, কিন্তু তিনি কি পারবেন প্রতিদ্বন্দ্বী নরেন্দ্র মোদীকে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করাতে। তার উত্তর দেবে ভবিষ্যৎই।
তবে তিনি যে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে রাজনীতিকে আজ অনেক উচ্চাসনে তুলে দিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চৈতন্যদেব জাতিভেদের অসারতা দেখানোর জন্য শূদ্র রামরায়কে দিয়ে শাস্ত্র ব্যাখ্যা করিয়েছিলেন, এদিন রাহুল গান্ধী সংসদে গান্ধীগিরি দেখিয়ে রাজনীতির অসারতা দূর করে দিলেন মুহূর্তে। তিনি তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সরকারের সমালোচনা ও আক্রমণ করার পর তা সৌজন্যের আবহে বইয়ে দিলেন নতুন খাতে। রাজনীতির নতুন পথ দেখালেন তিনি। এই পথেই তিনি ভারতবাসীর মন জয় করবেন বলে বার্তা দিয়ে রাখলেন পবিত্র সংসদের বুকে।
[আরও পড়ুন:প্রমাণ দিয়ে রাহুলের অভিযোগ ওড়ালেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ]
উল্লেখ্য, শুক্রবার আস্থা ভোটের আলোচনা রাহুল গান্ধী শুরু করেছিলেন জুমলা স্ট্রাইকের কথায়। আর শেষ করলেন ভালোবাসার বার্তা দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির পাপ্পু কটাক্ষের জবাবে এদিন ঝাপ্পির বার্তা দিয়ে গান্ধীগিরি দেখালেন রাহুল। তিনি বললেন, আপনাদের ঘৃণা আমি ভালোবাসায় বদলে দেব। আমি আপনাদেরও ভালোবাসব। এরপরেই রাহুল নিজের জায়গা ছেড়ে মোদীর কাছে গিয়ে তাঁকে আলিঙ্গন করেন। প্রত্যুত্তরে পিঠ চাপড়ে দেন নরেন্দ্র মোদী। এদিন সংসদ সাক্ষী থাকল এক পবিত্র রাজনীতির। যা অনেক রাজনীতিকের চৈতন্য এনে দেওয়ার পক্ষে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
[আরও পড়ুন: মিথ্যে বলেছেন! রাফালে চুক্তি নিয়ে লোকসভায় গুরুতর অভিযোগ করলেন রাহুল গান্ধী]