ফের নির্বাচনী দামামা, রাজ্যসভায় বিজেপিকে হারিয়ে ২০১৯-এর অক্সিজেন চাইছে বিরোধীরা
২৪ বছর পর নির্বাচন হতে চলেছে এই পদে। ইতিমধ্যেই এনডিএ প্রার্থী স্থির করেছে। বিরোধীরাও সর্বসম্মতভাবে প্রার্থী স্থির করতে বৈঠকে বসেছে।
২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে মোদী-শিবিরকে ধাক্কা দেওয়ার রণকৌশল স্থির করে ফেলল কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তারা এবার রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত্য হল। ফলে ২৬ বছর পর নির্বাচন হতে চলেছে এই পদে। ইতিমধ্যেই এনডিএ প্রার্থী স্থির করেছে। বিরোধীরাও সর্বসম্মতভাবে প্রার্থী স্থির করতে বৈঠকে বসেছে।
আপাতত স্থির হয়েছিল, বিজেপি শিবিরকে আরও একটা মোক্ষম আঘাত দিতে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে তৃণমূল কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কে প্রার্থী হবেন, তা চূড়ান্ত হয়নি। নাম উঠেছিল সুধাংশুশেখর রায় বা ডেরেক ও'ব্রায়েনের। প্রথম দফার বৈঠক ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদের জন্য নির্বাচনের দিনক্ষণ স্থির হয়েছে ৯ আগস্ট। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ৮ আগস্ট অর্থাৎ বুধবার। পরদিনই নির্বাচন। বিরোধী শিবির প্রার্থী দেবে বলে স্পষ্ট করে দেওয়ার পরই শাসক-বিরোধী চাপানউতোর তৈরি হয়ে গিয়েছে। লড়াই এবার হাড্ডাহাড্ডি। কারণ দু-পক্ষই রাজ্যসভায় সমান সমান। দুই পক্ষের বাইরে থাকা দলের সাংসদরাই স্থির করবেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদের ভবিষ্যৎ।
মোট কথা রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদের লড়াইয়ে বিনা যুদ্ধে সুচাগ্র মেদিনী ছাড়তে চাইছেন না কেউ। কোমর বাঁধছে বিরোধীরা। বিরোধী শিবিরের ১৪টি দলকে নিয়ে প্রথন দফার বৈঠক হয়ে গিয়েছে। এদিনই দ্বিতীয় দফার বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারপরই জানিয়ে দেওয়া হবে বিরোধী জোট প্রার্থীর নাম।
বর্তমানে কংগ্রেসের ৫১ জন সাংসদ রয়েছে রাজ্যসভায়। সেই আঙ্গিকে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এই নির্বাচনে কংগ্রেসই বিজেপির মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াইের মূল দাবিদার। কিন্তু সেই দাবি থেকে সরে এসে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জোটের স্বার্থে এই পদে লড়ুক তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচন থেকেই বিজেপি বিরোধী জোটের পাকাপাকি পথ চলা শুরু হোক, এমনটাই চাইছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।
আগামী ১ জুলাই অসবর নিয়েছেন রাজ্যসভার বর্তমান ডেপুটি চেয়ারম্যান তথা কেরলের কংগ্রেস সাংসদ পি জে ক্যুরিয়ন। এবার তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নিয়েই ফের নির্বাচনের আসর বসছে। ১৯৯২ সালের পর এই পদের জন্য ফের ভোটাভুটি স্থির হয়েছে।
সেই লক্ষ্যেই বিজেপি ও বিরোধীদলগুলি অঙ্ক কষতে শুরু করেছে। বিজেপির হাতে পর্যাপ্ত সংখ্যা নেই। বিজেপির সদস্য সংখ্যা ৬৯ জন। শরিকদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থান টলমল। এমতাবস্থায় বিরোধীরা যদি এক করতে পারে সমস্ত দলকে, তাহলে ডেপুটি চেয়ারম্যান হবেন বিরোধীদেরই কেউ। বিরোধী পক্ষের হয়ে তৃণমূল লড়াই করুক। তাহলে বিজেপির হার নিশ্চিত।
কেননা, এখনও যারা কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রেখে চলছে, তারা তৃণমূলকে ভোট দিতে পিছপা হবে না। তৃণমূলের সঙ্গে ওড়িশার বিজেডি, তেলেঙ্গানার টিআরএস, অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি-র সম্পর্ক ভালো। তাদের সমর্থনও পাবে তৃণমূল।
উল্লেখ্য, রাজ্যসভায় কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা ৫১। তৃণমূলের ১৩। তবু তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন দিতে চাইছে বৃহত্তর স্বার্থে। সামনে লোকসভা নির্বাচন, তার আগে বিরোধী জোটকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তার জন্য কংগ্রেস কর্ণাটকে যে অবস্থান নিয়েছে, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচনে তেমনই অবস্থান নিয়ে কংগ্রেসের।
এই নির্বাচনে বিজেডির নবীন পট্টনায়ক, টিআরএসের কে চন্দ্রশেখর রাও কিংবা টিডিপি-র চন্দ্রবাবু নাইডুরা বিরোধী জোটের প্রার্থীকে সমর্থন করলে তাদের জয় কেউ আটকাতে পারবে না। কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি তো সমর্থন করবেই। তৃণমূল প্রার্থী হলে না-ও ভোট দিতে পারে শুধু সিপিএম।