কংগ্রেসের দুর্দশা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেন শশী থারুর; কিন্তু দলের মুক্তি কোন পথে কেউ জানে কি?
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পর থেকেই রীতিমতো দিশেহারা ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। অধ্যক্ষ রাহুল গান্ধী ক্ষুব্ধ হয়ে দায়িত্ব ছেড়েছেন; তাঁর অভিযোগ দলের মধ্যে থেকেই তিনি যথেষ্ট সহযোগিতা পাননি। পাশাপাশি, নিজে তাঁর উত্তরসূরির নিয়োগে নাক না গলাবার কথার পাশাপাশি রাহুল এও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর পরিবার থেকে কেউ দলের প্রধান হন সেটাও তিনি চান না। এর ফলে রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে কংগ্রেসের নতুন অধ্যক্ষ করার যে দাবি উঠেছিল, তাও ধাক্কা খেয়েছে।
গত দু'মাস ধরে কংগ্রেসের মধ্যে চলেছে এই ডামাডোল আর এবারে তাই নিয়ে মুখ খুললেন তিরুবনন্তপুরম-এর সাংসদ শশী থারুর। তিনি দলের শীর্ষে অনিশ্চয়তার বিষয়টি সম্বন্ধে বলেন যে এতে দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থারুর মনে করছেন কংগ্রেসের উচিত তাদের দলের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে নির্বাচিত সদস্যদের আনা হোক এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং-এর মতো তিনিও মনে করেন যে দলের হাল ধরা উচিত কোনও তরুণ নেতার। থারুর এও মনে করেন যে আপাতত অবস্থা সামাল দিতে একজন অন্তর্বর্তী অধ্যক্ষ খুঁজুক দল। পিটিআই কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বর্তমান অবস্থার প্রসঙ্গে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন যে এই অনিশ্চয়তার মধ্যে আরও নিরুৎসাহ হয়ে পড়ছে দলের নিচুতলার কর্মীরা।

এমন দুর্দিন কংগ্রেসের আগে আসেনি
একথা অনস্বীকার্য যে স্বাধীনতার পরে কংগ্রেসের এমন দুর্দিন আর আসেনি। এর আগে কয়েকবার কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের অভাব টের পেয়েছে বটে কিন্তু সে সময়গুলিতে কেউ না কেউ হাল ধরেছিল। জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পরে লালবাহাদুর শাস্ত্রী; ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পরে রাজীব গান্ধী এবং তাঁর মৃত্যুর পরে পি ভি নরসিমহা রাও -- একেবারে ফাঁকা পড়ে থাকেনি কংগ্রেসের নেতৃত্ব।

রাহুল এক বছর সময় নিয়ে উত্তরসূরি তৈরী করে পদ ছাড়তে পারতেন
কিন্তু এবারে অবস্থা বেশ সঙ্গীন এবং এর থেকে বেরোনোর রফাসূত্রও অন্তত এই মুহূর্তে অমিল। এই অবস্থার জন্যে অবশ্যই দায়ী কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। পরিবারের ভিতরে হোক বা বাইরে -- আগের থেকে উত্তরসূরি না বেছে আচমকা এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে দলকে যে বেশ বেগতিক অবস্থায় পড়তে হবে তা তাঁদের বোঝা অবস্থা ছিল। যদি রাহুল গান্ধী এক বছর সময় নিয়ে উত্তরসূরি বেছে বিদায় নিতেন, তাও না হয় বোঝা যেত। কিন্তু আচমকা দলের মুখ্য পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়াতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।

গান্ধীদের যতই আক্রমণ করা হোক, কংগ্রেসের প্রাণভোমরা কিন্তু তাঁরাই
কংগ্রেস দলের অবনতির জন্যে প্রায়শই দায়ী করা হয় গান্ধী পরিবারকেই। বলা হয়, তাঁদের পরিবার-কেন্দ্রিক কার্যনীতির জন্যেই আজ দলের এই বেহাল অবস্থা। তা যেমন ঠিক তেমন এটাও ঠিক যে এই পরিবারবাদই কয়েক দশক ধরে কংগ্রেসকে যাবতীয় শক্তি জুগিয়েছে। গান্ধী পরিবারকে বাদ দিয়ে অন্য হাতে কংগ্রেসের রাশ ন্যস্ত করতে গেলে কী পরিমাণ ডামাডোলের মধ্যে দল পড়ে, তা নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে দেখা গিয়েছিল যখন সীতারাম কেশরী কংগ্রেসের অধ্যক্ষ ছিলেন। প্রায় ছত্রভঙ্গ দলটিকে ফের নেতৃত্ব দিতে অবস্থা সামাল দেন সোনিয়া গান্ধী।
আজকেও পরিস্থিতি ততটাই টলমল। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ সোনিয়ার আজ আর নতুন করে দলকে মাঠে নেমে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। রাহুল আর চান না নেতৃত্ব। পুরোনো কোনও মুখকে নেতা বানালে তাতে কংগ্রেসের ভাবমূর্তি বিশেষ বদলাবে না। বাকি রইল প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু তিনি নেত্রী হলে সমস্যা রাতারাতি মিটবে না। এক তো প্রিয়াঙ্কা রাজনীতিতে নিজেই নতুন, অনভিজ্ঞ। আর তিনি অধ্যক্ষ হলে বিজেপি কংগ্রেসকে ফের পরিবারবাদের তীরেই বিঁধবে।
কংগ্রেসের এখন গোলকধাঁধায় আটকে পড়ার অবস্থা। এর থেকে কিভাবে মুক্তি, এখন তাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।