কংগ্রেসের নিশানায় বিজেপির জাতীয়তাবাদ: কিন্তু 'জাতীয় গোঁফ' দাবি তুললেই কি আর জাতীয়তাবাদী হওয়া যায়?
রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বকে যতই ভাবা হোক কংগ্রেসের যাবতীয় দুর্দশার কারণ, তারা যে আসলে বিজেপির জাতীয়তাবাদী 'ন্যারেটিভ'-এর সামনে পরাজিত হচ্ছে বার বার, তা বুঝতে কোনও বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।
রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বকে যতই ভাবা হোক কংগ্রেসের যাবতীয় দুর্দশার কারণ, তারা যে আসলে বিজেপির জাতীয়তাবাদী 'ন্যারেটিভ'-এর সামনে পরাজিত হচ্ছে বার বার, তা বুঝতে কোনও বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও সেনা, জাতীয়তাবাদ, পুলওয়ামা ইত্যাদি নিয়ে বিজেপি যে বাজিমাত করেছে, তাও কংগ্রেসের সমর্থকরা বোঝেন। কিন্তু সব বুঝেশুনেও যেন চুপচাপ চিরতা গেলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই কংগ্রেসীদের।
তাই এবারে নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর নির্দেশ, কংগ্রেসকে ফিরতে হবে জাতীয়তাবাদেই। তাঁর মতে, জাতীয়তাবাদের খেলায় কংগ্রেসের সুবিধা হবে সবচেয়ে বেশি কারণ সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের আমল থেকে তারাই এই বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। 'দু'দিনের ছোকরা' বিজেপি তাতে থাবা বসিয়ে পালে হওয়া জুটিয়ে নিল আর কংগ্রেস আঙ্গুল চুষতে থাকল, এটি মেনে নেওয়া যায় না। অতএব, কংগ্রেসকেও এবারে জাতীয়তাবাদীদের ঢাক পেটানোর প্রতিযোগিতায় বিজেপির সঙ্গে টক্কর দিতে হবে বলে কংগ্রেসের উচ্চ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত।
সেনার আবেগে ভাসতে চাইছে এবার কংগ্রেসও
লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী ইতিমধ্যেই এই নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন সংসদে। জাতীয়তাবাদের জিগির তুলতে গিয়ে বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের গোঁফকে 'জাতীয় গোঁফ' ঘোষণা করার দাবিও করেছে তিনি। এছাড়াও অভিনন্দনের জন্যে 'ভারতশ্রী' খেতাবের দাবি বা মৃত সৈনিককে 'শহীদ'এর মর্যাদা বা সেনার উপরে থাকা কর ব্যবস্থাকে শোধরানোর কথাও তিনি বলেন। লক্ষ, বিজেপির 'সেনা' আবেগের উপরে থাবা বসিয়ে নির্বাচনে ফসল ঘরে তোলা।
কিন্তু বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদের অনেক তফাৎ
ঘটনা হচ্ছে, বিজেপির জাতীয়তাবাদকে কি কংগ্রেস তার জাতীয়তাবাদ দিয়ে পরাস্ত করতে পারবে? সম্ভাবনা খুবই কম।
মুখে জাতীয়তাবাদের কথা বললেও কংগ্রেসের পক্ষে বিজেপির জাতীয়তাবাদী জিগির তোলা সহজ নয়। কারণ, দু'টি দলের জাতীয়তাবাদের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বিজেপি যেই জাতীয়তাবাদী ধারাকে অনুসরণ করে, তা হচ্ছে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ। সেখানে জাতির সঙ্গে ধর্মনীতিকেও জড়িয়ে ফেলা হয়; একই সংস্কৃতির কথা বলা হয়। কিন্তু কংগ্রেসের যে নেহরুবাদি জাতীয়তাবাদ, তা ভূমিগতই বেশি। সেখানে জাতির সীমান্ত সার্বভৌমত্বের উপরে বেশি নির্ভরশীল, সংস্কৃতি বা ধর্মের চেয়ে। তাই সোনিয়া-অধীররা জাতীয়তাবাদী জিগিরের সুযোগ নিতে চাইলেও বিজেপির মতো পারবেন না, কারণ তাতে দলের যে যে ভিত্তি, সেই নেহরুবাদি জাতীয়তাবাদকেই অবজ্ঞা করতে হয়। আর সেই কাজ করা মানে কংগ্রেসের 'না ঘরকা, না ঘাটকা' অবস্থা হবে। তাই তাঁদের দৌড় ওই সেনাবাহিনীর প্রতি সমবেদনা দেখানো পর্যন্তই সীমিত থাকবে; তার চেয়ে বেশি আর কিছু নয়।
[আরও পড়ুন:তৃণমূলকে জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে স্বাগত জানাবেন অর্জুন! ভাটপাড়া উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা]
[আরও পড়ুন: মমতার মঙ্গল কামনায় মুকুল, নয়া পরামর্শদানে জানালেন এখন তাঁর কী করণীয়]