এই মানুষটির দখলদারি নিয়েও মোদীর কাছে হার রাহুলের! টুইটারে কংগ্রেস ও বিজেপি-র জোর যুদ্ধ
'গুজরাতি আস্মিতা'-র সঙ্গে বহুলাংশেই জড়িয়ে আছেন দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা উপমুখ্যমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল-এর নাম।
গুজরাতের ভোটগ্রহণ পর্বের সমাধা হওয়ার পরের দিনটি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল-এর জন্মতিথি। আর সেই জন্মতিথি নিয়েই এখন তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। সর্দার প্যাটেল কার সম্পত্তি সেটা দেখানোর জন্য এখন উঠে পড়ে লেগেছে কংগ্রেস ও বিজেপি। এবারের গুজরাত নির্বাচন সবচেয়ে বড় হয়েছে উঠেছে 'গুজরাতি আস্মিতা'। আর এই 'গুজরাতি আস্মিতা'-র সঙ্গে বহুলাংশেই জড়িয়ে আছেন দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা উপমুখ্যমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল-এর নাম। জাতীয়তাবাদী কংগ্রেসের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বরাবরই ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরাষ্ট্রের পক্ষেই সওয়াল করে এসেছেন। তিনি তাঁর নীতি ও আদর্শে এতটাই অনড় থাকতেন যে তাঁকে 'আইরন ম্যান' বা 'লৌহ পুরুষ' নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছিল। বলতে গেলে সে সময় গান্ধী, নেহরু-দের মতো জাতীয়তাবাদী কংগ্রেসীদের মধ্যে হিন্দুত্বের পক্ষে সওয়ালকারী বল্লভ প্যাটেল ছিলেন স্বমহিমায় যথেষ্টই উজ্জ্বল। এমনকী, মুসলিম লিগের দাবির কঠোর বিরুদ্ধবাদী হিসাবেও তিনি সে সসময় যথেষ্টই পরিচিতি পান।
গুজরাতের মতো হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী রাজ্যে তাই বিজেপি-র বাড়বাড়ন্তেও এতটুকু ম্লান হয়নি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মহিমা। গুজরাতিদের মানসে আজও একজন হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসাবে বেঁচে আছেন বল্লভভাই প্যাটেল। 'গুজরাতি আস্মিতা' বা 'গুজরাতি ভাবাবেগ'-এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্যাটেলের নীতি ও আদর্শ।
If the British Empire was thwarted in its designs to balkanize India, it was because of the single-handed acumen of #SardarPatel. My salutations on his Punya Tithi. A strong & decisive leader who unified India and lived on the Principle of 'Nation First'. pic.twitter.com/s4HcqETeeO
— Mansukh Mandaviya (@mansukhmandviya) December 15, 2017
এহেন, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে কার্যত হাইজ্যাক-ই করে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই সুকৌশলে তিনি কংগ্রেসের কাছ থেকেই তাঁদের নেতাকে পুরোপুরি বিজেপি-র ঘরে নিয়ে এসে তুলেছেন। তারমধ্যে গুজরাতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল-এর ১০৩ মিটার উচু মূর্তি স্থাপন করে 'গুজরাতি আস্মিতা'-য় এক অন্যমাত্রা যুক্ত করে দিয়েছেন মোদী।
"Today we must remove distinctions of high and low, rich and poor, caste or creed": Remembering independent India's first Deputy PM, #SardarPatel, on his death anniversary pic.twitter.com/lop6MM5Ldj
— Doordarshan News (@DDNewsLive) December 15, 2017
গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে মোদীর এই পদক্ষেপের সমালোচনা করতে ছাড়েনি কংগ্রেস। তাঁদের অভিযোগ ছিল গুজরাতে বিজেপি বিরোধী হাওয়াকে নির্মূল করতেই তাঁদের নেতাকেএভাবে চুরি করেছেন মোদী।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে নিয়ে এমন দখলদারি রাজনীতির মধ্যেই আবার এক নাটক তৈরি হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর। এই দিনটি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মতিথি। এর জেরে এখন বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে চলছে টুইট যুদ্ধ। বল্লভভাই প্যাটেলকে নিয়ে দু'দলই একাধিক টুইট করে চলেছে। সেই সঙ্গে তো কংগ্রেস ও বিজেপি-র সাধারণ নেতা এবং সমর্থকরাও আছেন।
Tributes to the country's first Home Minister and Deputy PM #SardarPatel, who led the task of forging a united India. pic.twitter.com/TF1TmNmp7v
— Congress (@INCIndia) December 15, 2017
কংগ্রেস বল্লভভাই প্যাটেলকে জন্মতিথি-তে শ্রদ্ধা জানিয়ে যে টুইট করেছে তাতে তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ মন্তব্যকে যেমন তুলে ধরা হয়েছে, ঠিক তেমনি মুসলিমদের প্রতি আশু কর্তব্য নিয়ে করা মন্তব্যকেও স্থান দেওয়া হয়েছে।
भारत रत्न लौह पुरुष सरदार वल्लभ भाई पटेल की पुण्यतिथि पर भावभीनी श्रद्धांजलि। pic.twitter.com/tQOEhbw56p
— BJP (@BJP4India) December 15, 2017
বিজেপি আবার শুধু বল্লভ প্যাটেলের হিন্দুত্ব আদর্শকে তুলে ধরেছে তাঁদের টুইটে। এই টুইটে আবার জুড়ে দেওয়া হয়েছে বল্লভভাই প্যাটেলকে নিয়ে করা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য।
Tribute to the Iron Man #SardarPatel on his Punya Tithi 🙏🙏 pic.twitter.com/cXXF4a78Nb
— Modi Mission 2019 (@MissionBJP2019) December 15, 2017
তবে, রাজনীতির কত ধরনের যে দায় থাকে তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন হার্দিক প্যাটেলদের পাতিদার আন্দোলনকে দেখতে হয়। কারণ, বল্লভভাই প্যাটেল এই পাতিদার জনগোষ্ঠীরই মানুষ ছিলেন। এই পাতিদাররাই এখন কর্মসংস্থানে সংরক্ষণ থেকে শুরু করে সরকারি সামাজিক অনুদানের সুবিধা পেতে মরিয়া। পাতিদারদের অভিযোগ, সংরক্ষণের ঠেলায় তাদের অবস্থা খারাপ। নিন্দুকদের মতে, যে বিজেপি এককালে এই পাতিদারদের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির ঘুটি বানিয়েছিল আজ তাঁরাই বিদ্রোহী হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মোদী কৌশলেই বল্লভভাই প্যাটেলের মতো এক পাতিদারকে সামনে এনেছেন। যাতে পাতিদারদের 'গুজরাতি আস্মিতা'-কে বিজেপি ধরে রাখতে পারে। কিন্তু, কংগ্রেসও জানে এবারের ভোটে বল্লভভাই প্যাটেল নামক মৃত মানুষটির গুরুত্ব কতটা। তাই, মৃত্যুর এত বছর পরও গুজরাতের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে এখন অন্যতম মোহরা হয়ে উঠেছেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। সেই কারণেই, তাঁর জন্মতিথিতেও জারি কংগ্রেস ও বিজেপি-র দখলদারি রাজনীতি।