কর্ণাটকে কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট উস্কে দিচ্ছে বড় সম্ভাবনার, বিপদ বিজেপির
কংগ্রেস-জেডি (এস) সফলভাবে বিজেপিকে সরকার গড়া থেকে আটকানোর পর, ফেডারেল ফ্রন্টের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
কর্ণাটকে কংগ্রেস-জেডি (এস) জোট গড়ে সাফল্য এসেছে। আরও একটি রাজ্য দখল করা থেকে তারা আটকাতে পেরেছে বিজেপিকে। আর এতেই তৈরি হয়েছে আরও বড় লড়াইয়ের সম্ভাবনা। কর্ণাটকের সাফল্য ফের উস্কে দিয়েছে ২০১৯ লোকসভায় ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ার স্বপ্নকে। যে ফ্রন্টে কংগ্রেস 'নেতৃত্বের ভূমিকায় নয়, বরং থাকবে আর একটি অংশীদার দল হিসেবেই।
কর্ণাটকের সাফল্যকে আঞ্চলিক দলগুলি ফেডারেল ফ্রন্টের জয় হিসেবেই দেখছেন। কংগ্রেস-জেডি (এস)-ই যেন শুধু জেতেনি, জিতে গেছে তারাও। বি এস ইয়েদুরাপ্পার সরকারের পতন হচ্ছে এটা নিশ্চিত হতেই যেমন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী থেকে শুরু করে, অন্ধের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, আরজেডির তেজস্বী যাদব বিএসপি প্রধান মায়াবতী, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, ডিএমকে নেতা এস কে স্তালিন, এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রত্যেকেই বিজেপি তথা মোদী-অমিত শাহ জুটির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। জেডি (এস) নেতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া ও তাদের মুখ্য়মন্ত্রী পদপ্রার্থী কুমারাস্বামীকে অভিনন্দন বার্তা দিয়েছেন।
আগামী সোমবার কুমারাস্বামী মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে এঁদের অনেকেকেই দেখা যাবে। কারণ ফেডারেল জোটের বার্তা দিতে ইতিমধ্যেই এঁদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কংগ্রেস-জেডি (এস)। কর্ণাটকের নতুন সরকার গঠনের মঞ্চ থেকেই তাঁরা লড়াইটা ছুঁড়ে দিতে চান বিজেপির কোর্টে। ফেডারেল ফ্রন্টের প্রস্থাব অবশ্য আজকের নয়, গত এক-দেড় বছর ধরেই এর সলতে পাকানো চলছিল। আঞ্চলিক নেতারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। সোনিয়া গান্ধির সভাপতিত্বে আঞ্চলিক দলগুলির নেতাদের নিয়ে দিল্লিতে বৈঠকও হয়েছে একাধিক। কিন্তু এখনকার মতো এতটা উজ্জ্বল ফেডারেল ফ্রন্টের সম্ভাবনাকে কখনই মনে হয়নি।
এর অন্যতম কারণ কংগ্রেসের মনোভাবে পরিবর্তন। কর্ণাটকে ৭৮ টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। পাশাপাশই জেডি (এস)-এর আসন সংখ্যা মাত্র ৩৯। কিন্তু তা সত্ত্বেও জেডি (এস)-এর আব্দার মেনে নিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর পদটি তাদের ছেড়ে দিয়েছে কংগ্রেস। আর এতেই নতুন করে উৎসাহিত আঞ্চলিক দলগুলি।
এতদিন দেখা গেছে কংগ্রেসের মনোভাব ছিল, যেহেতু তারা বড় দল, তাই তারাই জোটের নেতা। তাদের এই নেতা মনোভাব মেনে নিয়ে জোটে থাকতে বেশ অসুবিধেই ছিল আঞ্চলিক দলগুলির। তারা মনে করেছিল এভাবে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে না। কিন্তু কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে ফ্রন্ট গড়াটাও যথেষ্ট অবাস্তব। এর আগে কংগ্রেস, বিজেপি, দুই বড় দল বাদ দিয়ে যে কয়েকবার আঞ্চলিক দলের ফ্রন্ট সরকার গড়েছে, সেকবারই দেখা গিয়েছে সেই সরকার স্থায়ীত্ব পায়নি।
কিন্তু কর্ণাটকে কংগ্রেস যে উদাহরণ পেশ করেছে তাতে ফেডারেল জোটের ধারণাকে বাস্তব রূপ দেওযা যাবে বলেই মনে করছেন আঞ্চলিক নেতারা। তাঁরা বলছেন, এতে সব পক্ষের লাভ। ঠিক যেরকমটা কর্ণাটকে ঘটেছে। একদিকে বিজেপিকে আটকে সরকার গড়া গেছে। এক্ষেত্রে কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়ে সাহায্য করেছে জেডি (এস)। আবার এটাও ঠিক, কংগ্রেস নেতাদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। আইনি দক্ষতা অনেক বেশি। কর্ণাটকে তাঁদের আইনি দল ঠিক সময়ে ঠিক আবেদন করেছিল বলেই বিজেপিকে রোখা গিয়েছে। কাজেই তাঁরা বলছেন, কর্ণাটকের অবিজ্ঞতা সবাইকেই দেখাচ্ছে কোন রুটে গড়া যাবে ফেডারেল ফ্রন্ট। আর তা করতে পারলে সাফল্য যে আসে, সেটাও দেখিয়ে দিয়েছে এই নির্বাচন।