বাণিজ্যে ক্ষেত্রে বেজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল ভারত! ২০২২ অর্থবর্ষে চিন থেকে আমদানি ৪৫ শতাংশ বৃ্দ্ধি
বাণিজ্যে ক্ষেত্রে বেজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল ভারত! ২০২২ অর্থবর্ষে চিন থেকে আমদানি ৪৫ শতাংশ বৃ্দ্ধি
ভারত ও চিনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও চিন থেকে ভারতে আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চিন থেকে মূলত খণিজ জ্বালানী, খণিজ তেল, রাসায়নিক পদার্থ, সার, লোহা, ইস্পাত, বৈদ্যুতিন ও চিকিৎসার সরঞ্জাম ব্যাপক পরিমাণে আমদানি করছে ভারত। ২০২২ আর্থিক অর্থবর্ষে চিন থেকে আমদানির পরিমাণ ৪৫.৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে।
২০২২ অর্থবর্ষে চিন থেকে ৭.০২ ট্রিলিয়ন টাকার পণ্য আমদানি করা হয়েছে। ২০২১ অর্থবর্ষে এই পরিমাণ বেশ কিছুটা কম ছিল। সেই সময় চিন থেকে ৪.৮২ ট্রিলিয়ন টাকার পণ্য আমদানি করেছিল ভারত। বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে ২০২০ অর্থবর্ষে চিনা পণ্য আমদানিতে পতন দেখা দেয়। সেই সময় আমদানির ৬.২১ শতাংশ পতন হয়।
২০২০ সালে লাদাখের কাছে গালোয়ান উপত্যকায় চিন ও ভারতের সেনারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। লাদাখে ইন্দো-চিন সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই সময় কেন্দ্র সরকার চিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। চিন থেকে একাধিক পণ্যের আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এছাড়াও ২০২০ সালে করোনা মহামারী, দীর্ঘ লকডাউনের প্রভাব ব্যবসা বাণিজ্যে পড়ে।
কিন্তু ২০২১ অর্থবর্ষ থেকে ফের চিনের ওপর ভারতের নির্ভরতা প্রকাশ পেতে থাকে। চিনা আমদানি ৪.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ২০২২ অর্থবর্ষে ভারতে চিনা আমদানি রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক ফিন্যান্স অ্যান্ড পলিসির অধ্যাপক এস চক্রবর্তী বলেন, ইন্দো-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়। এই পরিস্থিতিতে এত বিপুল পরিমাণ পণ্য চিন থেকে আমদানি, ভারতকে যথেষ্ট বিড়াম্বনায় ফেলছে। ২০২২ অর্থবর্ষে চিনা আমদানি প্রায় ৪৫ শতাংশ বৃ্দ্ধি পেয়েছে। তবে চিনের ওপর আমদানি নির্ভরতা ২০২২ অর্থবর্ষে হঠাৎ করে বেড়ে যায়নি। করোনা মহামারীর আগেও ভারত চিন থেকে ব্যাপক পরিমাণ পণ্য আমদানি করত।
প্রবীণ অর্থনীতিবিদ আকাশ জিন্দল যদিও অন্যকথা জানিয়েছেন। তিনি মনে করছেন এই বিষয়ে অযথা উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। আমদানি বেড়েছে মানে ভারত বাণিজ্য ক্ষেত্রে চিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, তা ভাবারও কোনও কারণ নেই। জিন্দল জানিয়েছেন, ভারতে শিল্পগুলো পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে।
চিন থেকে মূলত কাঁচামাল আমদানি করা হয়। তা ভারতের বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রয়োজন। ভারতের রফতানিও আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে। ভারত চিন থেকে মূলত কাঁচামাল আমদানি করে। ভারত যদি চিন থেকে শিল্পজাত পণ্য আমদানি করত, তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াত বলে তিনি মনে করছেন।
তবে যে হারে ভারতে চিনের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে, পাল্টা চিনে ভারতের রফতানি বৃদ্ধি পায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, চিনে ভারতের রফতানি ০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ২০২১ অর্থবর্ষে এই রফতানি প্রায় ৩৩.৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ভারতের জৈব রাসানিক, লোহা ও ইস্পাতের মতো দ্রব্য রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, ২০২২ অর্থবর্ষে রাশিয়া থেকে ভারতের আমদানি ৮১ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে।