নদ্বীপের সহ–অভিযুক্তের শরীরেও একাধিক আঘাত, মেডিক্যাল রিপোর্ট পেশ আদালতে
নদ্বীপের সহ–অভিযুক্তের শরীরেও একাধিক আঘাত, মেডিক্যাল রিপোর্ট পেশ আদালতে
মজদুর অধিকার সংগঠনের সভাপতি শিব কুমারের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। চণ্ডীগড়ের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (জিএমসিএইচ) পক্ষ থেকে পাঞ্জাব–হরিয়ানা হাইকোর্টে বুধবার এ সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। যে রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাঁ–হাত ও ডান পায়ে কমপক্ষে দু’টি আঘাত সহ বহু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে ২৪ বছরের শিব কুমারের দেহে। এই আঘাতের কারণ কোনও ভোঁতা অস্ত্র। রিপোর্টে এও জানানো হয়েছে যে এই আঘাতের চিহ্নগুলি দু’সপ্তাহ পুরনো।
শিব কুমারের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ
গত ১৬ জানুয়ারি কুমারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, এর ঠিক চারদিন আগে তাঁর সহ-অভিযুক্ত নদ্বীপ কউরকে গ্রেফতার করে সোনিপথ পুলিশ। ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালত সোনিপথ জেলের এসপিকে জিএমসিএইচে কুমারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের আগে শিব কুমাররে বাবা রাজবীর আদালতকে জানিয়েছিলেন যে তাঁর ছেলেকে পুলিশ অত্যাচার করেছে। হরিয়ানার ডিজিপি মনোজ যাদব ও সোনিপথের এসপি জশনদ্বীপ সিং রাঁধওয়া উভয়ের কেউই এই পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
জিএমসিএইচ–এর রিপোর্ট
জিএমসিএইচ-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'কুমারের (২৪) ডান পা ফুলে গিয়েছে, পাঁ পায়ে রক্ত জমাট ও ফোলা আছে, ডান হাতের দ্বিতীয় আঙুল ও পায়ের তৃতীয় আঙুলের নখ ভাঙা, ভেতরের ত্বক লালচে বর্ণের এবং নিরাময়ের পরিবর্তনগুলি দেখায়, বাঁ পায়ের বড় আঙুলে কালচে রঙ, হাতের বুড়ো আঙুল ও অন্য আঙুলের রং নীলচে-কালো বর্ণের, নখের চারপাশের চামড়া নরম, ডান হাতের বাহুতেও চোটের আঘাত রয়েছে।' রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, 'বাঁ-হাতে ফ্র্যাকচার রয়েছে, ডান পায়ের মেটাটারসাল হাড়ে ফ্র্যাকচার দেখা গিয়েছে, বাম নেভিকুলার হাড়ের সম্ভাব্য ফ্র্যাকচার, ডান হাতের বাহুর হাড়ে ফ্র্যাকচার রয়েছে।' কুমারকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ১৬ জানুয়ারি তাঁকে গ্রেফতারের পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সোনিপথের পুরনো থানায়, যেখানে তাঁর ওপর সিআই কর্মীরা নির্যাতন চালায়। কুমার জানিয়েছেন যে সেখানে সাতজন ছিলেন।
পুলিশি নির্যাতন কুমারের ওপর
কুমারের মামলার রিপোর্টে কুমার অভিযোগ জানিয়েছেন যে পুলিশ তাঁর পা দু'টো বেঁধে দেয়, তাঁকে মাটিতে শুইয়ে জুতোর সোল দিয়ে মারতে থাকে। তাঁর ডান পায়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম নখ ভেঙে যায় এবং বাঁ পায়ের বড় আঙুলের নখ নীল হয়ে যায়। পুলিশ তাঁর পশ্চাতে লাঠি দিয়ে মারে এবং এরপর তাঁর হাত বেঁধে তাঁকে সোজা করে শুইয়ে দেওয়া হয়। এরকম অবস্থায় লোহাল পাইপ তাঁর থাইয়ের ওপর রেখে তা দু'জন ব্যক্তি মিলে রোল করতে থাকে। তারা তাঁর দুই হাত ও তালুতে মারে এবং মাথার পিছনেও মারা হয়। কুমার তাঁর অভিযোগে এও জানিয়েছেন যে তাঁকে তিনদিন ঘুমোতে দেওয়া হয়নি। সিআই কর্মীরা তাঁর বিবৃতি নেয় এবং তাঁর থেকে নাম জানতে চায় এবং শিব কুমার তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে তাঁর ওপর জল ঢালে।
আদালতে তোলা হয় দেরি করে
রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'শিব কুমারকে ২৪ জানুয়ারি আদালতে পেশ করা হয় এবং ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়া হয়। অতএব শিব ১৬ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। এরপর তাঁকে সোনপথ জেলে ২ ফেব্রুয়ারি পাঠানো হয়।' রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, কুমার অভিযোগে জানিয়েছেন যে পুলিশ রিমান্ডে তাঁকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে এবং পুলিশ তাঁর পায়ে গরম জল ঢেলে দেয় এবং ফোস্কা পড়ার পর সেগুলি পুলিশ ফাটিয়ে দেয়। ২৯ জানুয়ারি শিব কুমারকে নিয়ে যাওয়া হয় হরিদ্বারে, কিন্তু তাঁকে সম্বলকা পুলিশ থানায় রাখা হয় এবং ৩০ জানুয়ারি হরিদ্বার পৌছায় তাঁরা। ২ ফেব্রুয়ারি শিবকে আদালতে পেশ করার কথা থাকলেও ৮ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সে আদালতে পেশ করা হয় তাঁকে।
কুমারের পরীক্ষা হয় জিএমসিএইচে
জিএমসিএইচ চিকিৎসকরা যাঁরা কুমারকে পরীক্ষা করেছেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন অর্থোপেডিক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জেনারেল সার্জারি, রেডিও ডায়গনোসিস, ফরেন্সিক মেডিসিন এবং টক্সিকোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা।
ধৃত নদ্বীপ ও শিব
কুণ্ডলি এলাকায় কারখানার মালিকদের ওপর জুলুম ও পুলিশ কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল কুমার ও নদ্বীপ কউর উভয়ের বিরুদ্ধে। তাঁদের সমর্থকরা জানিয়েছেন যে মজদুর অধিকার সংগঠনের অংশ হওয়ার জন্য মজুরি না পাওয়া শ্রমিকদের জন্য এই দু'জন লড়াই করছিলেন।
আরও একটি নতুন ট্রেন চালু হতে চলেছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে