রাজ্যসভায় পেশ হচ্ছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, অঙ্কের নিরিখে কতটা কঠিন হবে পরবর্তী পরীক্ষা?
বুধবার রাজ্যসভায় পেশ হবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, অঙ্কের নিরিখে কতটা কঠিন হবে পরবর্তী পরীক্ষা?
সোমবার মধ্যরাতের কিছু পরে লোকসভায় পাশ হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। বিলটি পাশের পক্ষে ৩১১টি ভোট পড়েছে নিম্নকক্ষ লোকসভায়। বিপক্ষে ভোট পরে ৮০টি। নিয়ম অনুযায়ী এবার বিলটি রাজ্যসভায় যাওয়ার কথা৷ সংসদের উচ্চকক্ষের ২৪৫ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ১২৩ জনের সমর্থন পেতে হবে মোদী সরকারকে। তবে এই মুহূর্তে রাজ্যসভআয় সদস্য সংখ্যা ২৩৮। সেই ক্ষেত্রে বিজেপির পক্ষে ১২০টি ভোট পড়লেই বিলটি পাশ হয়ে যাবে।
লোকসভায় বিরোধীদের তোপ
সোমবার লোকসভায় প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে চলে বিতর্ক। সোমবার মোট ৪৮ জন বক্তা নিজস্ব মতামত রাখেন এই বিতর্ক চলাকালীন৷ বিল পাশের পর অমিত শাহ বলেন, এটি ঐতিহাসিক৷ নেহরু-লিয়াকত যা পারেননি ৷ খুব তাড়াতাড়ি নাগরিক পঞ্জিকরণ শুরু হবে বলেও মন্তব্য করেন শাহ ৷ সংবিধানকে কোনওভাবেই লঙ্ঘন করা হয়নি, বিরোধীদের দাবি নাকচ করে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান এমনই ৷ তাঁর কথায়, সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার কোনওরকম অবমাননা করা হয়নি ৷ প্রতিবেশী দেশগুলিতে সংখ্যালঘু নিপীড়ন দেখে চুপ করে বসে থাকতে পারে না ভারতের মতো রাষ্ট্র ৷ তবে এখন মূল পরীক্ষা রাজ্যসভায়।
রাজ্য বিল পাশ করতে প্রয়োজন ১২০ ভোট
রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করাতে ১২০টি ভোট প্রয়োজন হলেও বিজেপির সঙ্গে এই মুহূর্তে রয়েছে মাত্র ৮৩টি। এদিকে এনডিএ শরিকদের মধ্যে জেডিইউ-র রয়েছে ৬জন সদস্য, শিরোমণি অকালি দলের রয়েছে ৩জন সদস্য, লোকজনশক্তি পার্টির রয়েছে ১জন সদস্য, রিপাব্লিকান পার্টির রয়েছে একজন সদস্য। এছাড়া মনোনীত সদস্য রয়েছে ১১জন। তাও প্রয়োজনীয় ১২০ পৌঁছাচ্ছে না বিজেপির পক্ষে। এই ক্ষেত্রে অন্যান্য দলের সমর্থনও প্রয়োজন বিজেপির।
বিজেপিকে সমর্থন করতে পারে যে দলগুলি
তামিলনাডুর এআইডিএমকে-র সঙ্গে রয়েছে ১১ জন সদস্য। তারা বিজেপিকে সমর্থন করবে বলেই জানিয়েছে। এছাড়া ওড়িশআর বিজু জনতা দলের রয়েছে ৭জন সদস্য। তারাও বিজেপিকে সমর্থন করতে পারে। এদিকে অন্ধ্রের ওয়াইএসআর কংগ্রেসের দুই জন সদস্য রাজ্যসভায় বিলটির পক্ষে ভোট দেবে বলে মনে করা হচ্ছএ, কারণ লোকসভাতেও তারা বিজেপিকে এই নিয়ে সমর্থন জানিয়েছিল। এছাড়া টিডিপি-র দুই জন রাজ্যসভা সদস্যও বিলটির পক্ষে ভোট দেবে বলে মনে হচ্ছে।
কী কারণে এই বিল
সোমবার অমিত শাহের পেশ করা নতুন বিলে শর্ত দেওয়া হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বা তার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যে সমস্ত অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ, হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি বা জৈন ধর্মের যেই লোকেরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকে ভারতে বসবাস করেছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। বিলটি সোমবার ৩১১-৮০ ব্যবধানে পাশ হয়।
ভারতের নাগরিকত্ব কোন শরণার্থীদের
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেই এই নতুন সংশোধনী আনা হচ্ছে। আগে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে কোনও শরণার্থীকে অন্তত ১১ বছর এদেশে থাকতে হত। গত বছর সেই সময়সীমা কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছিল। এবছর তা আরও কমানো হবে। নতুন বিল বলছে মাত্র ৫ বছর ভারতে থাকলেই নিঃশর্তে নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে অমুসলিমরা। এক্ষেত্রে, শুধুমাত্র নিজেকে অমুসলিম বলে হলফনামা জমা দিলেই কাজ মিটে যাবে।
বিলের পক্ষে অমিত শাহের যুক্তি
বিলটির পক্ষে যুক্তি দিয়ে সোমবার সংসদে অমিত শাহ প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের উপর হওয়া অত্যাচারের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, 'আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ পড়ে শুনিয়ে বলেন এই দেশগুলিতে রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। বিভাজনের সময় শরণার্থীরা দেশ ছেড়ে । ১৯৫০ সালে নেহরু-লিয়াকত চুক্তি সই হয়। তখন নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। তবে এত বছরে আমাদের প্রতিবেশী দেশে হিন্দু, শিখ সহ সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার চলেছে। তা হলে কী আমরা তাদের উপর অত্যাচার হতে দেব? এই আইনে শ্রীলঙ্কার তামিল হিন্দু ও মায়ানমারের হিন্দু রোহিঙ্গাদের বাদ রাখা হয়েছে। কিন্তু এই বিলে দেশের কোনও মুসলিমদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি।'