ফের ডোকলামে নজর ড্রাগনের! লাদাখের পর চিনা নিশানায় সিকিম, তৈরি মিসাইল বেস
ফের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে নতুন করে সামরিক কাঠামো তৈরি করছে চিনা সেনা। সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্র দেখে জানা যায়, শুধু প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নয়, চিন ও ভুটান সীমান্তে ডোকলামেও সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করছে চিন। অন্যদিকে সিকিম-চিন সীমান্তে নাকু লা-তে মোতায়েন করা হচ্ছে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।

২০১৭ সালের ডোকলাম বিবাদ
২০১৭ সালে চিন ও ভারতীয় বাহিনীর বিবাদের জেরে এই ডোকলাম সীমান্তই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ১৬ জুন থেকে ২৮ অগস্ট ডোকলামে সীমান্ত বিবাদের জেরে দু'দেশের সেনাবাহিনী রীতিমতো রণসজ্জায় সেজে ৭৪ দিন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। নতুন উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, ডোকলামের যে জায়গায় চিন ও ভারতের বাহিনী মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল সেখান থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে নতুন সামরিক কাঠামো তৈরি করছে চিনের সেনা।

লাদাখে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি
লাদাখের গালওয়ানে চিন এবং ভারতের সংঘর্ষের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে একটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। চিনা আগ্রাসন নীতির জেরে কার্যত তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে ভারত-চিন কূটনৈতিক সম্পর্ক। এই অবস্থায় দুই পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এর মাঝেও চিনা সেনা নিজেদের আসলরং দেখাতে প্রস্তুত।

লাদাখ সীমান্ত বরাবর চিন ৫জি নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটাচ্ছে
জানা গিয়েছে, লাদাখ সীমান্ত বরাবর এলাকায় চিন ৫জি নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটাচ্ছে যা ভারতের জন্যে চিন্তার বিষয়। তাছাড়া প্যাংগং এলাকা জুড়ে বিভিন্ন পরিকাঠামোগত নির্মাণ জারি রেখেছে চিন। এদিকে চিনের পাল্টা হিসাবে লাদাখে নতুন সড়ক তৈরি করছে ভারত৷ মানালি থেকে লেহ পর্যন্ত হচ্ছে এই নতুন রাস্তা।

সেনা ও ট্যাঙ্ক মোতায়েন
শত্রু শিবিরের নজর এড়িয়ে সীমান্তে সেনা ও ট্যাঙ্ক মোতায়েন করতেই এই সড়কপথ তৈরি হচ্ছে৷ আর এই রাস্তার জেরে চিন্তার রেখা চিন ও পাকিস্তানের কপালে। হিমাচলের দারচা হয়ে এটি লেহ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে নিমুকে সংযোগ করবে এই রাস্তা। এই রাস্তার নেটওয়ার্কের মধ্যে ৯.০২ কিলোমিটার দীর্ঘ অটল টানেল যাবে রোহটাংলা পাস দিয়ে।

গালওয়ান উপত্যকায় উত্তেজনা
১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন। এরপর থেকেই দফায় দফায় অশান্তির সৃষ্টি হয় ভারত-চিন সীমান্তে। সম্প্রতি দুই দেশের সেনা আধিকারিকদের বৈঠকের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গালওয়ান থেকে সেনা সরিয়ে নেয় লাল সেনা। তবে মঙ্গলবার হোতানের উপগ্রহ চিত্রটি সামনে আসার পর ফের একবাবর উদ্বেগ বাড়ছে সীমান্তে।

চিন এখনও অবস্থান করছে প্যাংগংয়ে
হটস্প্রিং থেকে সরে গেলেও নাছোড়বান্দা চিন এখনও অবস্থান করছে প্যাংগংয়ে। লাদাখের প্যাংগং হ্রদের কাছে গ্রিন টপের উপর থেকে চিনা সেনা দখলদারি সরাতে না চাওয়াতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও তিক্ত হচ্ছে চিনের। প্যাংগং সোতে চিনা সেনারা ফিঙ্গার ৫ এ ফিরে এসেছিল, তবে তারা এখনও ফিঙ্গার ৪-এর রিজলাইন দখল করে রয়েছে। চিনা সেনারা ফিঙ্গার ৪ থেকে আঙুলের ৮-এর মধ্যে ৮-কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে তাদের তৈরি কাঠামোগুলিকেই এলএসি বলে দাবি করে যাচ্ছে এখনও।

টহলদারী সীমান্ত নিয়ে বিবাদ
টহলদারী সীমান্ত নিয়ে বরাবরই ভারত ও চিনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। ভারত বিশ্বাস করে 'ফিঙ্গার ১' থেকে 'ফিঙ্গার ৮' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদের এবং চিন মনে করে যে 'ফিঙ্গার ৮' থেকে 'ফিঙ্গার ৪' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদেরই। ১৫ জুন, এই 'ফিঙ্গার ৪' এলাকাতেই উভয় পক্ষের সেনার মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ বাঁধে। 'ফিঙ্গার ৪'-এ এই জন্যেই উল্লেখযোগ্য হারে সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছিল চিন, যাতে ভারতীয় সেনারা আর 'ফিঙ্গার ৮' এর দিক দিয়ে টহল দেওয়ার সুযোগ না পায়।