২০২০ সালের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও তামিলনাড়ুতে সবচেয়ে বেশি বাল্য বিবাহ
দেশ অগ্রগতির পথে হাঁটলেও, বিংশ শতাব্দীতে এসেও সমাজ সেই অন্ধ সংস্কারকেই এখনও মেনে চলছে। গত চার বছর ধরে দেশে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলেও, এখনও তামিলনাড়ুতে বাল্য বিবাহ রয়েছে। এমনকী রাজ্যের কুড্ডালোর জেলায় প্রত্যেক বছরই লাফিয়ে বাড়ছে এই বাল্য বিবাহ।
তামিলনাড়ুর তিনটি গ্রামে বাল্য বিবাহের সংখ্যা বেশি
এই জেলায় বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পরও বাল্য বিবাহ দমন আইনের আওতায় ৩৬৮টি বাল্য বিবাহের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এই আইনের অন্তর্ভুক্ত ৬৩টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কুড্ডালোরের চাইল্ডলাইনের কাউন্সেলর এ পার্থিবান বলেন, ‘বিরুদ্ধাচালাম, পানরুটি এবং ভেপ্পুরের মত গ্রাম্য এলাকাতেই বাল্য বিবাহের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। অভিভাবকরা শুধু মাত্র মেয়েদের বোঝা মনে করার জন্য এবং তারা যাতে অন্য জাতিতে বিয়ে না করে বসে তার জন্যই শৈশবেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।' জেলার সমাজ কল্যাণমূলক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘জেলায় বাল্য বিবাহ নিয়ে প্রায়শই সচেতনামূলক প্রচার করা হয়, বিশেষ করে বিরুদ্ধাচালামের মতো গ্রাম্য এলাকায়। এখানে সবচেয়ে বেশি বাল্য বিবাহের খবর পাওয়া যায়।' সমাজ কল্যাণ বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে বাল্য বিবাহ রুখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এই সংখ্যাটা কমতে এখনও কয়েক বছর সময় নেবে।
২০১৮ সালে বেড়ে গিয়েছে বাল্য বিবাহ
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ৬১টি বাল্য বিবাহের মামলা নথিভুক্ত হয়, যা ২০১৫ সালে কমে হয় ৪২টি। কিন্তু ২০১৮ সালে তা ফের বেড়ে হয়ে যায় ৮৮টি। সরকারিভাবে দাবি করা হয় যে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবেই বাল্য বিবাহের সংখ্যা ক্রমে বেড়ে চলেছে। পার্থিবান বলেন, ‘অনেক মামলাতে দেখা গিয়েছে মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তারা ১০৯৮ (চাইল্ড হেল্পলাইন) অথবা ১৮১ নম্বরে যোগাযোগ করে জানাচ্ছে।' তিনি আরও বলেন যে, ‘এ বছরের গোড়ার দিকে একটি মেয়ে ১৮১ হেল্পলাইনে ফোন করে সাহায্য চায় এবং আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেই মেয়েটিকে উদ্ধার করি।' সমাজ কল্যাণ বিভাগের আধিকারিক জানান, একবার যদি মেয়েকে উদ্ধার করা হয়, তবে অভিভাবকদের কাউন্সেলিংয়ের পরই মেয়েকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
উদ্বিগ্ন শিশু কল্যাণ কমিটি
শিশু কল্যাণ কমিটি (সিডব্লিউসি)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ২০১৯ সালে অন্তত ৮২জন মেয়েকে তারা বাল্য বিবাহ থেকে উদ্ধার করেছে। সিডব্লিউসি-এর আধিকারিক বলেন, ‘বাল্য বিবাহের মূল কারণই হল শিশুদের সঙ্গে তার অভিভাবকদের মধ্যে সম্পর্কে ফাঁক তৈরি হওয়া। মা-বাবা তাদের শিশুকে বাড়িতে একা ফেলে কাজে চলে যান। শিশুটি যদি কোনও ধরনের হানস্থার শিকার হয়, তবে তা কাউকে সে জানাতেও পারে না। তাছাড়া কারোর সঙ্গে সাধারণ বন্ধুত্ব পরে প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়। যেটা বিয়ে না দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এটা কোনও অবহিত সিদ্ধান্ত নয়।' সিডব্লিউসির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে বাল্য বিবাহ রোধ করতে সমস্ত বিভাগকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে এবং একে-অপরের সঙ্গে সহায়তা করতে হবে। খুব দৃঢ়ভাবে এটা রোখা প্রয়োজন।