অর্থনীতি-গাড়ির তিনটে টায়ারই পাংচার! আর কী বললেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী
সোমবার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আক্রমণ করলেন মোদী সরকারকে।
লোকসভার ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দেওয়া শুরু করে দিল কংগ্রেস। সোমবার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আক্রমণ করলেন মোদী সরকারকে। বললেন, নোট বাতিল আর জিএসটির চাপে রপ্তানী, বেসরকারি বিনিয়োগ ও প্রাইভেট কমসাম্পশন - দেশের অর্থনীতি-গাড়ির তিনটি টায়ারই পাংচার হয়ে গেছে। এছাড়াও অর্থনীতির বিভিন্ন দিকে মোদী সরকারের ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি।
গত মে মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কনজ্যুমার কনফিডেন্স সার্ভেতেই জানা গিয়েছিল ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন গত একবছরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। চিদম্বরম এদিন দাবি করেন আরবিআই যদি আর দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া বা সবচেয়ে বঞ্চিত এলাকার মানুষদের মধ্যে সমীক্ষা চালাত তবে এই মনোভাবের শরিকের সংখ্য়াটা ৪৮ শতাংশের থেকে অনেকটাই বেশি হত।
কারণ, এখন দেশের কৃষকদের হতাশা ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। তারা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কৃষকদের ক্ষোভের প্রধান কারণ, কৃষিজাত পন্যের উপযুক্ত দাম না পাওয়া ও কৃষি-মজদুরদের মজুরি না বাড়া। কয়েকটি ফসলের ক্ষেত্রে এমএসপি বা ন্যুনতম বিক্রয় মূল্য ধার্য করা হলেও তা যথেষ্ঠ নয় বলে দাবি করেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী।
অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে পেট্রোপন্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ আসবেই। এনিয়ে চিদম্বরমের দাবি পেট্রোল, ডিজেল বা রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই, ইচ্ছাকৃত ভাবে এই দাম বাড়ানো হচ্ছে। তাঁর মতে ২০১৪-র মে-জুনে যে দাম ছিল, তার থেকে আজকের দিনে দাম বেশি হওয়ার কোনও কারণ নেই।
২০১৪-য় আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখানোর সময়ে মোদী বছরে ২ কোটি চাকরি হওয়ার আশা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে প্রতি কোয়ার্টারে মাত্র কয়েক হাজার করে কর্মস্থান হয়েছে। সরকারের লেবার ব্যুরোপ সমীক্ষাতেই এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান এই কংগ্রেস নেতা। কটাক্ষ করেন মোদীর 'পকোড়া ভাজা' শিল্প-ভাবনা নিয়েও।
রপ্তানী, বেসরকারি বিনিয়োগ, প্রাইভেট কমসাম্পশন- অর্থনীতি গাড়ির তিনটি চাকাই ফুঁটো হয়ে গেছে বলে ব্যঙ্গ করেন চিদম্বরম। তাঁর দাবি গত চার বছর ধরে রপ্তানীতে ভারতের গ্রোথ নেতিবাচক, বেসরকারি বিনিয়োগ হয়নি বললেই চলে এবং ক্যাপিটাল ফর্মেশন গত তিন বছর ধরে ২৮.৫ শতাংশেই আটকে আছে। প্রাইভেট কমসাম্পশন-ও কয়েকমাস আগ পর্ষন্ত খোঁড়াচ্ছিল। একমাত্র যে চাকায় কিছুটা হাওয়া আছে সেটা হল সরকারি ব্যয়। তবে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট ও ফিস্কাল ডেফিসিটের চাপে সেই টায়ারও যেকোনওদিন ফেঁসে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
মোদীর শালনকালে এপর্যন্ত সবচেয়ে আলোচিত অর্থনৈতিক পদক্ষেপ ছিল নোটাবাতিল ও জিএসটি বৃদ্ধী তাতে লাভের লাভ কিছু হয়নি বরং ক্ষতিই হয়েছে বলে দাবি ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রীর। নোটবাতিলের ফলে কী হয়েছে তা দেশের অর্থনীতির গ্রোথ রেটের অবনতিতেই স্পষ্ট বলে দাবি তাঁর। তিনি জানান, '২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে যেখানে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৮.২ শতাংশ, সেখানে ২০১৭-১৮ তে তা দাঁড়িয়েছে ৬.৭ শতাংশে। ঠিক যেমনটা আমি ধারণা দিয়েছিলাম, সেইমতো ১.৫ শতাংশ কমেছে।'
বিজেপি সরকারের জিএসটির প্রয়োগ নিয়ে বরাবরই সরব চিদম্বরম। এদিন তিনি অভিযোগ করেন, 'এ পর্যন্ত জিএসটিআর ফর্ম ২ এবং জিএসটিআর ফর্ম ৩ জারি করা হয়নি। ট্যাক্স লায়াবিলিটি অস্থায়ী জিএসটিআর ফর্ম ৩বি-এর মাধ্যমে গণনা করা হচ্ছে। এটা অবৈধ। হাজার হাজার কোটি টাকার রিফান্ড আটকে থাকায় ব্যবসায়ীদের বিশেষ করে রপ্তানিকারকদের ব্যবসা উঠে যেতে বসেছে।
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রেপো রেট বেড়েছে। চিদম্বরম বলেন, এই রেট আরও বাড়বে, কারণ দেশের মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে বলে অনুমান করছেন অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার প্রকল্পগুলিকেও উপেক্ষা করছে মোদী সরকার বলে অভিযোগ করেন চিদম্বরম। তাঁর দাবি, বাজেটে সরকার যে হেলথ প্রোটেকশন স্কিমের কথা বলা হয়েছে সেটা স্রেফ কথার কথা। তিনি আরও জানান, খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রণিত হয়নি, এমজিএনআরজিএ এখন আর চাহিদা অনুযায়ী চলে না, ফসল বীমার সুযোগ পান মাত্র ৩০ শতাংশ কৃষক। চিদম্বরমের এই আক্রমণের কোনও জবাব এখনও আসেনি বিজেপির তরফ থেকে।