কেরলের উপকূলে পদ্ম ফোটানোর সুবর্ণ সুযোগ, লাল ঢেউয়ের চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারবে বিজেপি?
বিগত তিন দশক ধরে কেরলের ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিয়েছে ইউডিএফ এবং এলডিএফ। এবারের নির্বাচনে সেই চক্রব্যূহকে ভাঙতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। এবং কেরল রাজনীতিতে বিকল্প হয়ে ওঠার বিষয়ে বেশ আসাবাদী বিজেপি। কিন্তু সেই কাজটা বেশ কঠিন হতে চলেছে গেরুয়া শিবিরের জন্য। কারণ রাজ্যে তাদের শক্তিশালী সংগঠন বা একজন জনপ্রিয় নেতা, এই কোনওটাই নেই।
কেরলে বিজেপির ভরসা
এইসব খামতি ঢাকতে বিজেপি অনেকটাই ভরসা করছে প্রযুক্তিবিদ ই শ্রীধরণের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ওপর৷ যিনি দেশের রাজধানীর বহু বড় প্রকল্পের দায়িত্বে থাকার ফলে 'মেট্রো ম্যান' নামে পরিচিত৷ মধ্যবিত্ত ও তরুণদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। ৮৮ বছরের শ্রীধরণ বিজেপিতে যোগ দেওয়া মাত্র রাজ্যের বিজেপি নেতারা তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্রুত সেই অবস্থান থেকে পিছিয়ে এসে এই ঘোষণায় সিলমোহর দেননি।
'তরুণ ভোটাররা ইউডিএফ এবং এলডিএফের ওপর বীতশ্রদ্ধ'
পালাক্কড় আসন থেকে ভোটে লড়া এই প্রযুক্তিবিদের হয়ে প্রচারে এসে মঙ্গলবারই নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ এবং সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে তারা ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি ও গড়াপেটা করছে। মোদীর কথায়, তরুণ ভোটাররা ইউডিএফ এবং এলডিএফের ওপর বীতশ্রদ্ধ৷ কারণ তারা প্রতিশ্রুতিমতো পরিবর্তন কেরলে আনতে পারেনি।
২০১৮ সালে এলডিএফ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে বিজেপি
২০১৬ সালে মাত্র একটি বিধানসভা আসনে জেতা বিজেপি ২০১৮ সালে এলডিএফ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে৷ উল্লেখ্য, ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের শবরীমালা মন্দিরে ঢোকার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সমর্থন করেছিল এলডিএফ। তবে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির এই পরিকল্পনা কাজে দেয়নি৷ যদিও ভোট শতাংশের নিরিখে অনেকটাই এগিয়েছে বিজেপি।
শবরীমালা ইস্যুকে হাতিয়ার
তবে আসন সংখ্যা না বাড়লেও শবরীমালা ইস্যুকে হাতিয়ার করে পাঠানামথিট্টা জেলা, যেখানে শবরীমালা মন্দির রয়েছে সেখানকার পালাক্কড়, পান্ডালাম সহ বেশ কয়েকটি পুরসভা এলাকায় তারা নিজেদের উপস্থিতি মজবুত করে৷ রাজধানী তিরুবনন্তপুরমেও তাদের কিছুটা লাভ হয়৷ যাতে ইউডিএফের ভোটব্যাঙ্ক এলডিএফের তুলনায় কিছুটা কমে। কিন্তু কয়েকটা স্থানীয় এলাকায় পাওয়া লাভকে রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া একটা কঠিন কাজ এবং তার জন্য দলের শক্তিশালী সংগঠন প্রয়োজন।
জনপ্রিয় নেতার অভাব
এছাড়াও গেরুয়া দলের সেইরকম জনপ্রিয় নেতার অভাব রয়েছে যিনি দীর্ঘদিন ধরে জনসংযোগে রয়েছেন এবং এলডিএফ মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন আর প্রাক্তন ইউডিএফ মুখ্যমন্ত্রী ওমান চণ্ডি এবং বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালার মতো নেতার প্রভাবের মোকাবিলা করতে পারেন। এই আবহে সাধারণত হিন্দিতে বক্তৃতা দিলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবার পাল্লাকড়ের জনসভায় ইংরেজিতে ভাষণ দেন৷ যাতে তিনি দক্ষিণের এই রাজ্যে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেন। তবে তাতে বিজেপির কতটা লাভ হবে, তা জানা যাবে ২ মে।