আধা সেনায় চাকরি ছাড়ার হিড়িক, উদ্বেগে সরকার
সরকারি সূত্রের খবর, সিআরপিএফ, বিএসএফ, সিআইএসএফ এবং আইটিবিপি-তে গত বছর ৮০ জন নীচুতলার অফিসার চাকরি ছেড়েছেন। ২০১২ সালের তুলনায় বিচার করলে এই হার ৩০ শতাংশ বেশি। এঁরা কেউই চার-পাঁচ বছরের বেশি চাকরি করেননি। সাধারণ জওয়ানরাও চাকরি ছাড়ছেন পাইকারি হারে। ২০১৩ সালে সিআরপিএফ, বিএসএফ, সিআইএসএফ এবং আইটিবিপি থেকে ৮৫০০ জন চাকরি ছেড়েছেন। এঁদের কেউ পদত্যাগ করেছেন। আর যাঁদের পদত্যাগ গৃহীত হয়নি, তাঁরা স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। যদি আরও দু'টি আধা সামরিকবাহিনী অর্থাৎ সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) এবং অসম রাইফেলস এই হিসাবে ঢুকত, তা হলে সংখ্যাটা বাড়ত সন্দেহ নেই। আরও জানা যাচ্ছে, ট্রেনিং শেষ করে ১৯ জন সিআরপিএফ অফিসার আর কাজে যোগ দেননি।
কেন এমন দুর্দশা? ওয়াকিবহাল মহলের খবর, এর পিছনে কতগুলি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, উপদ্রুত এলাকায় আধা সামরিকবাহিনীকে কাজ করতে হয়। কিন্তু, উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই নীচুতলার অফিসার, জওয়ানদের জন্য। নাগাল্যান্ড, মণিপুরের মতো জায়গায় প্রচণ্ড শীতে কাঠ, টিন দিয়ে তৈরি ব্যারাকে কার্যত জমে যেতে হয়। নেই ঘর গরম করার উপযুক্ত ব্যবস্থা। কয়েকশো জওয়ানের জন্য বরাদ্দ চারটি শৌচালয়। তার ওপর রয়েছে ওপরওয়ালাদের নির্মম ব্যবহার।
দ্বিতীয়ত, ফৌজের তুলনায় সিআরপিএফ, বিএসএফের সুযোগ-সুবিধা কম। অথচ মাওবাদী এলাকা, সীমান্তে কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কোনও অংশে কম নয়। শারীরিক ক্লেশ তো বটেই, মানসিকভাবে চাপ পড়ে প্রচণ্ড। জওয়ানদের এই ছত্তিশগড়ের জঙ্গলে রাখা হচ্ছে, তো পরের মাসে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নাগাল্যান্ডের পাহাড়ে। এর ফলে মানসিক চাপ বাড়ছে।
তৃতীয়ত, উপদ্রুত এলাকায় কাজ করতে গিয়ে আধা সামরিকবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, এই অভিযোগে জেরবার হতে হচ্ছে । এর ফলে অনেক সময় হামলা হলে পাল্টা জবাবও দেওয়া যায় না। তখন গুলি খেয়ে মরা ছাড়া উপায় নেই। এর ফলেও বিরক্ত হয়ে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে।
চতুর্থত, আধা সামরিকবাহিনীর শীর্ষ পদে বসে রয়েছেন আইপিএস অফিসাররা। অথচ যাঁরা প্রথম থেকে সিআরপিএফ, বিএসএফে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেন, তাঁরা সাধারণত কমান্ডান্ট পদের বেশি ওঠেন না। ডিআইজি, আইজি হওয়া তো ব্যতিক্রমী ঘটনা। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতাও চাকরি ছাড়ার একটা কারণ।
কঠিন চাকরি ছেড়ে অধিকাংশই যোগ দিচ্ছেন মোটা মাইনের বেসরকারি চাকরিতে। বেছে নিচ্ছেন আরামের জীবন।