৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রাজীব কুমারকে জেরা সিবিআই-এর, চলছে লাঞ্চ ব্রেকের বিরতি
জেরা নিয়ে যে আর টালবাহানা নেই তা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষা ছিল জেরার দিনের ঘোষণা এবং জেরা শুরু।
জেরা নিয়ে যে আর টালবাহানা নেই তা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষা ছিল জেরার দিনের ঘোষণা এবং জেরা শুরু। ৯ ফেব্রুয়ারি যে সারদা চিটফান্ডকাণ্ডে শিলঙে রাজীব কুমারকে জেরা করা হবে তাও দিন কয়েক আগে জানিয়ে দিয়েছিল সিবিআই। সেই মোতাবেক গতকালই শিলঙে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজীব কুমার। আজ বেলা এগারোটা বাজার মিনিট দশেক আগে শিলঙে অকল্যান্ড মোড়ে সিবিআই-এর দফতরে পৌঁছন কলকাতার পুলিশ কমিশনার।
সিবিআই দফতরে ঢুকতেই রাজীব কুমার এবং তাঁর সঙ্গে থাকা চার জনকে রিসেপশনে বসানো হয়। সেখানেই সিবিআই অফিসাররা বেরিয়ে এসে রাজীব কুমারের সঙ্গে দেখা করেন। জেরার সময় তাঁর চার সঙ্গীকে যাতে সেখানে থাকতে দেওয়া হয় তার জন্য সিবিআই অফিসারদের কাছে আর্জি জানান রাজীব কুমার। তার মতে, তাঁর চার সঙ্গীর মধ্যে রয়েছেন দু'জন পুলিশ অফিসার, যাদের কাছে চিটফান্ডের তদন্ত নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে। তিনি চিটফান্ডের তদন্ত থেকে সরে আসার পর এই দুই পুলিশ অফিসার তাদের উপরে থাকা দায়িত্বের বলে কিছু কিছু তথ্য তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন। অন্যদিকে চিটফান্ডের তদন্তে যে আইনি প্রক্রিয়া বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মোকাবিলা করতে হয়েছে তা সামলিয়েছেন ব্যক্তিগত আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব।
সিবিআই অবশ্য এই আর্জি মানেনি। রাজীব কুমারের সঙ্গে কাউকেই থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে রাজীব কুমারের সঙ্গে থাকা দুই পুলিশ অফিসার জাভেদ শামিম, মুরলিধর শর্মা ও আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব-দের সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। জাভেদ শামিম, মুরলিধর শর্মা এবং আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব আপাতত ত্রিপুরা ক্যাসেল লজে ফিরে গিয়েছেন। গতকাল শিলঙে পৌঁছনোর পর এখানেই রয়েছেন রাজীব কুমার ও তাঁর সঙ্গীরা।
জনা গিয়েছে জাভেদ শামিমরা বেরিয়ে যেতেই বেলা ১১.১৫ মিনিটে সিবিআই দফতরের রিসেপশনের পিছনে-র একটি ঘরে রাজীব কুমারকে জেরা শুরু করে সিবিআই। মোট ২২টি প্রশ্নের মালা তৈরি করা হয়েছে। এই প্রশ্নগুলি-কে চারটি সেটে ভাগ করা হয়েছে। ১৫ জন সিবিআই অফিসার এই জেরায় রয়েছেন। প্রত্যেকেই দফায় দফায় জেরা করবেন রাজীব কুমারকে। শেষ পাওয়া খবরে আপাতত লাঞ্চ ব্রেক চলছে। এর আগে রাজীব কুমারকে টানা ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জেরা করা হয়। লাঞ্চ ব্রেকের পর ফের জেরা শুরুর সম্ভাবনা।
জাভেদ শামিম ও মুরলিধর শর্মা তাঁকে সাহায্য করতে পারবেন বলেই মনে করছিলেন রাজীব কুমার। কারণ, রাজীব কুমার বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের দায়িত্ব ছাড়ার পর সেখানে কমিশনার হয়েছিলেন জাভেদ শামিম। তাঁর আমলেও সারদা চিটফান্ডের কিছু কিছু তদন্ত হয়েছে এবং রাজীব কুমারের ছেড়ে দেওয়া তদন্তের কিছুটা অংশে তিনিও জড়িত ছিলেন। মুরলিধর শর্মা এই মুহূর্তে এসটিএফ-এর হেড। এই এসটিএফ-এর হেড একটা সময় ছিলেন রাজীব কুমার। এসটিএফ-ই সারদা চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে সুদীপ্ত সেন-কে কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করেছিল। সুতরাং রাজীব কুমার সিবিআই-এর সামনে যুক্তি দিয়েছিলেন এই জেরা-তে মুরলিধর শর্মার উপস্থিতিও জরুরি। কিন্তু, সিবিআই এই সব যুক্তি মানতে চায়নি।
সিবিআই-এর ১৫ জনের দলে আছেন সারদাকাণ্ডের তদন্তে প্রথম থেকে জড়িত থাকা ফণীভূষণ করণ। আপাতত তিনি অবসর নিলেও এই হাইপ্রোফাইল জেরায় ফণীভূষণ করণ-কে শিলঙে নিয়ে গিয়েছে সিবিআই। রাজীব কুমারকে জেরা করার ক্ষেত্রে ফণীভূষণ যে গুরুত্বপূর্ণ একটা হাতিয়া তা জানা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই কারণেই রাজীব কুমারকে জেরা করতে যে প্রশ্নমালা তৈরি করা হয়েছে তাতে ফণিভূষণের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। রাজীব কুমারকে জেরা করার জন্য মোট ২২টি প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে থাকছে সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপ, পেন ড্রাইভ কোথায় গেল? হার্ড ডিস্কগুলো কোথায় গেল? কেন ফরেনসিক রিপোর্ট নেই?-সহ এমন কিছু প্রশ্ন যা নিয়ে বারবার সিবিআই রাজীব কুমারকে অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড়় করিয়েছে।