সারদা-কাণ্ড: প্রাক্তন আইপিএস, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তার বাড়িতে সিবিআই হানা
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে ২৮টি জায়গায় হানা দিল সিবিআই। দিল্লি, গুয়াহাটি, কলকাতা ও ভুবনেশ্বরে বিভিন্ন ঠিকানায় হানা দেন গোয়েন্দারা। উত্তরপ্রদেশেও তল্লাশি চালানো হয়। চাঁইদের সুলুকসন্ধান পাওয়া ছাড়াও অন্তত ১০০ কোটি উদ্ধার করাও এই অভিযানের লক্ষ্য।
সিবিআই জানিয়েছে, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতা ছাড়ার আগে সুদীপ্ত সেন ১০০ কোটি টাকা পাঠিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের এক হুন্ডি ব্যবসায়ীকে। তৃণমূল কংগ্রেসের এক হেভিওয়েটের পরিচিত ছিলেন ওই ব্যবসায়ী। সুদীপ্তবাবুকে বোঝানো হয়েছিল, এক সঙ্গে এত টাকা নিয়ে গাড়িতে গেলে ধরা পড়ে যেতে পারেন। তাই ওই টাকা আপাতত উত্তরপ্রদেশে পাঠিয়ে দিন, পরে সেখান থেকে তা সংগ্রহ করে নিয়ে বিদেশে গা-ঢাকা দেবেন। সেই মতো সুদীপ্তবাবু রাজ্য ছাড়েন। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী বেমালুম টাকা হজম করে ফেলেন। অভিযোগ, এর পরই তৃণমূল কংগ্রেসের ওই নেতা পুলিশকে ফোন করে বলেন, সুদীপ্ত সেন কাশ্মীরে লুকিয়ে আছেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুদীপ্ত সেন সিবিআইকে বলেছেন, ওই নেতা এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীতে পাকড়াও করে জেরা করলে গায়েব হওয়া ১০০ কোটি টাকার হদিশ মিলবে।
সিবিআই মনে করছে, ওই ১০০ কোটি টাকা অনেকে মিলে ভাগ করে আত্মসাৎ করেছে। তা ছাড়া, সুদীপ্ত সেন কিছু লোকের নাম করেছেন যারা দিনের পর দিন সারদা গোষ্ঠীর থেকে সুবিধা নিয়েছে। কখনও কাজ হাসিল করে দেবে এই বলে, কখনও আবার ব্ল্যাকমেইল করে। তেমনই কয়েকজনকে চিহ্নিত করে আজ তল্লাশি চালায় সিবিআই।
প্রাক্তন আইপিএস অফিসার রজত মজুমদারের কলকাতার বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। রজতবাবু সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং পুলিশ মহলে প্রভাব থাকায় নানাভাবে সুদীপ্তবাবুকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ। তা ছাড়া, কংগ্রেস নেতা মাতঙ্গ সিং ও তাঁর স্ত্রী মনোরঞ্জনা সিংয়ের বাড়ি-অফিসে দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চলে। হানা দেওয়া হয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা দেবব্রত সরকারের বাড়িতে। সেবি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া)-তে ভালো যোগাযোগ আছে, এটা বুঝিয়ে দেবব্রতবাবু কয়েক কোটি টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তল্লাশির পাশাপাশি তাঁকে টানা চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সিবিআইয়ের তরফে। সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী পিয়ালি সেন, ছেলে শুভজিৎ সেনের বাড়িতেও হানা দেন গোয়েন্দারা।
সিবিআইয়ের পরবর্তী লক্ষ্য হল তৃণমূল কংগ্রেসের সেই সব নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের চেপে ধরা, যাদের নাম সারদা কেলেঙ্কারিতে ঘুরেফিরে আসছে। পাশাপাশি, বিধাননগর পুলিশের যে অফিসাররা তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের ওপরও নজরদারি শুরু করেছে সিবিআই।